• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

‘মহানায়িকা’র জন্মদিন 

প্রকাশিত: ৭ এপ্রিল ২০২১  

কলকাতার বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নায়িকা তিনি। সাবলীল অভিনয়ে যিনি বাংলার মানুষের হৃদয় জয় করেছিলেন। তার অভিনয়শৈলী আজও ভক্তদের মনে অনুভূতির ঢেউ তোলে। নিজের অভিনয় দিয়ে জয় করে নিয়েছিলেন ‘মহানায়িকা’র খেতাব। তিনি সুচিত্রা সেন।

পাবনার মেয়ে রমা দাশগুপ্ত। বিয়ের পর পাড়ি জমান কলকাতায়। সংসার জীবনেও নানা সংকট মোকাবিলা করে সিনে পর্দায় সুচিত্রা সেন হয়ে ধরা দিলেন। বিশেষ করে উত্তম কুমারের সঙ্গে তার জুটি দর্শক দারুণভাবে গ্রহণ করে। উত্তমও নাকি সুচিত্রা থাকলে অভিনয়ে একটা প্রাণ পেতেন।

১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল পাবনা জেলা সদরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। সেই হিসেবে আজ তার জন্মদিন। তার বাবার বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি থানার অন্তর্গত সেন ভাঙ্গাবাড়ী গ্রামে। বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত ছিলেন স্থানীয় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও মা ইন্দিরা দেবী ছিলেন গৃহবধূ। তিনি ছিলেন পরিবারের পঞ্চম সন্তান ও তৃতীয় কন্যা।

সুচিত্রা সেন পড়ালেখা করেন পাবনাতে। এক সময় পাড়ি জমান ভারতে। বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন। তার অভিনীত প্রথম ছবিটি মুক্তি পায়নি। ১৯৫২ সালে ‘শেষ কোথায়’ ছবির মাধ্যমে তার চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু হয়। সুচিত্রা উত্তম কুমারের বিপরীতে ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন। এই ছবিটি করার পরই দর্শকরা খুঁজে পেলেন তাদের স্বপ্নের জুটি। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাদের।

১৯৫৫ সালে দেবদাস সিনেমায় অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার অর্জন করেন, যা ছিল তার প্রথম হিন্দি ছবি। ১৯৬৩ সালে ‘সাত পাকে বাঁধা’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে সুচিত্রা সেন সিলভার প্রাইজ ফর বেস্ট অ্যাকট্রেস জয় করেন। ১৯৭২ সালে ভারত সরকার তাকে ‘পদ্মশ্রী’ সম্মান প্রদান করে। ২০১২ সালে তাকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সর্বোচ্চ সম্মাননা বঙ্গবিভূষণ প্রদান করা হয়। এছাড়া ‘আন্ধি’(হিন্দি ছবি) ছবির জন্য তিনি ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। রাজনীতি নিয়ে নির্মিত ছবিটিতে সুচিত্রার অভিনয় মনে দাগ কেটে রাখার মতো।

১৯৪৭ সালে বিশিষ্ট শিল্পপতি আদিনাথ সেনের ছেলে দিবানাথ সেনের সঙ্গে সুচিত্রা সেনের বিয়ে হয়। তাদের একমাত্র কন্যা মুনমুন সেনও একজন খ্যাতনামা অভিনেত্রী। তার নাতনি রাইমা সেন ও রিয়া সেন চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন।

১৯৭৮ সালে সুদীর্ঘ ২৫ বছর অভিনয়ের পর তিনি চলচ্চিত্র থেকে অবসরগ্রহণ করেন এবং রামকৃষ্ণ মিশনের সেবায় ব্রতী হন। জানা যায়, ২০০৫ সালে তাকে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার দেয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছিল। কিন্তু তিনি জনসমক্ষে আসতে চান না বলে এই পুরস্কার গ্রহণ করতে রাজি হননি।

২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি ভারতীয় সময় সকাল ৮টা ২৫ মিনিটে কলকাতার বেল ভিউ হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৮২ বছর বয়সে সুচিত্রা সেনের মৃত্যু হয়। লোক চক্ষুর অন্তরালে থেকে এভাবে এই কিংবদন্তির জীবনের অধ্যায় শেষ হয়।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –