• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
যুদ্ধের অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয় হলে বিশ্ব রক্ষা পেত- প্রধানমন্ত্রী দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড মেডিকেল কলেজের ক্লাস অনলাইনে নেয়ার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘গণতান্ত্রিক রীতিনীতি না মানলে জনগণই বিএনপিকে প্রতিহত করবে’ লালমনিরহাটে হত্যা মামলায় বিএনপির দুই নেতা কারাগারে

প্রতি বৃহস্পতিবার গাছ উপহার দেন জাহিদ

প্রকাশিত: ২১ মে ২০২২  

ঠাকুরগাঁও পৌরসভার আশ্রমপাড়ার বাসিন্দা জাহিদ ইকবাল। পেশায় তিনি আইনজীবী। রোববার থেকে বুধবার সারাদিনের কর্মব্যস্ততা কোর্ট চত্বরকে ঘিরে। ইচ্ছে থাকলেও সময়ের অভাবে আলাদা কিছু করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তবে প্রতি বৃহস্পতিবার কোর্টের কাজ শেষ করে মানুষের হাতে গাছ উপহার হিসেবে তুলে দেন তিনি। 

তবে এমনি গাছ উপহার পাওয়ার সুযোগ নেই। মানতে হবে কয়েকটি শর্ত। একটি গাছ উপহার নিলে সঙ্গে নিজ অর্থায়নে রোপণ করতে হবে তিনটি গাছ। রোপণের পর নিতে হবে গাছের পরিচর্যা। 

জানা গেছে, অ্যাডভোকেট জাহিদ ইকবাল ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে এইচএসসি, স্নাতক ও রংপুর আইন কলেজ থেকে এলএলবি পাস করেন। গত ১৫ বছর ধরে তিনি ঠাকুরগাঁও জেলা জজ কোর্টে আইন পেশায় আছেন। আইনজীবী হলেও গাছের সঙ্গে রয়েছে তার সখ্যতা। গাছকে ভালোবাসেন তিনি। পরিবেশ রক্ষায় বিতরণ করেন গাছ। 

জেলা জজ কোর্টের পিয়ন সিরাজ আলী বলেন, জাহিদ স্যার গাছকে অনেক ভালোবাসেন। আমি নিজেও গাছ লাগাতে ভালোবাসি। এটা পরিবেশের উপকারের পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবেও উপকার করে। স্যার আমাকে তিনটি গাছ উপহার দিয়েছেন। আমি সেটাকে তিনগুণ করেছি। সবচেয়ে বড় বিষয়টি হলো তিনি প্রায়ই গাছগুলোর খোঁজখবর নেন। 

জজ কোর্টের মোটরসাইকেল স্ট্যান্ডের শফিক বলেন, আমি একটি গাছ চেয়েছিলাম। আজকে আমাকে একটি সফেদার গাছ উপহার দিয়েছেন। সেই সঙ্গে আমি নিজেও আরও তিনটি গাছ লাগাবো। সবাই যদি এ রকম করে চারটি গাছ লাগান, তাহলে সবুজে ভরপুর হয়ে যাবে এ দেশ। প্রত্যেক জেলায় জাহিদ স্যারের মতো একজন গাছপ্রেমী মানুষ থাকা উচিত।

গাছ ব্যবসায়ী সোনা মিয়া বলেন, উনি আমাকে বুধবার মোবাইলে যোগাযোগ করে বলে দেন গাছের কথা। কোন গাছ লাগবে বলে দেন। আমি সেগুলো প্রতি বৃহস্পতিবার এখানে নিয়ে আসি। প্রায় এক বছর ধরে উনি আমার কাছ থেকে গাছ কেনেন।

অ্যাডভোকেট জাহিদ ইকবাল বলেন, বনভূমি কমে যাওয়ার জন্য আমরা  প্রকৃতিকে দায়ী করি। কিন্তু প্রকৃতি যতটা না দায়ী তার চেয়ে বেশি দায়ী আমরা। নিজেদের প্রয়োজনে আমরা নির্বিচারে গাছ কেটে ফেলছি। কৃষিজমি লাগবে, বাড়িঘর বানাতে হবে, আসবাবপত্র বানাতে হবে, খেলার মাঠ বানাতে হবে এজন্য আমরা সব গাছ কেটে ফেলছি। এ রকম করতে গিয়ে আমরা আমাদের উপকারের চেয়ে সর্বনাশ বেশি ডেকে আনছি। প্রয়োজনে আমরা গাছ কাটব। কিন্তু গাছ কাটার পর নতুন করে গাছ না লাগানোর কারণে কত প্রজাতির গাছ যে এখন ধ্বংসের মুখে তার কোনো খবর নেই। এ ছাড়াও গাছ পাখিদের আশ্রয়স্থল। গাছ উজাড় হওয়ায় নানা প্রজাতির পাখিও বিলুপ্ত হচ্ছে। 

তিনি বলেন, মূলত মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যে ও গাছ রোপণে উদ্ধুদ্ধ করার জন্য আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। গাছ রোপণ আসলে অনেক সওয়াবের কাজ। একটি গাছ থেকে নানাভাবে মানুষ ও পশুপাখি উপকৃত হয়। আর যার মাধ্যমে উপকৃত হয় সে এর সওয়ার পায়। সেজন্য প্রতি বৃহস্পতিবার কোর্ট শেষ করে মানুষের মাঝে গাছ উপহার হিসেবে দিচ্ছি। 

অ্যাডভোকেট জাহিদ ইকবালের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসাইন চৌধুরী বলেন, গাছ উপহার ও গাছ রোপণ একটি পরিবেশ বান্ধব কাজ। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য বৃক্ষরোপণ অত্যন্ত বেশি জরুরি। আমাদের সকলের বেশি বেশি গাছ লাগানো উচিত বলে আমি মনে করি। 

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –