• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাস, আজ ৭৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। বন্যায় দুবাই এবং ওমানে বাংলাদেশীসহ ২১ জনের মৃত্যু। আন্তর্জাতিক বাজারে আবারও বাড়ল জ্বালানি তেল ও স্বর্ণের দাম। ইসরায়েলের হামলার পর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানে।

জীবন যাপনে একুশ

প্রকাশিত: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  

 
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি ফিরে আসে প্রতিবছর! একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের শিখিয়েছে আত্মত্যাগের মন্ত্র, বাঙালিকে করেছে মহীয়ান। বাঙালি জাতির ইতিহাসে এ এক অনন্য গৌরবময় অধ্যায়। এই একুশ আমাদের দেশ ও জাতির নতুন ইতিহাসের জন্মদাতা। বাঙালি জাতির নবতর উত্থান ও অভ্যুদয়ের দিন। শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, চিত্রকলা, ফ্যাশনে—আমাদের প্রতিটি শৈল্পিক ভাবনায় একুশে ফেব্রুয়ারির প্রভাব খুঁজে পাওয়া যায়। 

স্বাভাবিকভাবে একুশ আজ প্রতিটি বাঙালির অহংকারের প্রতীক। একুশ প্রতিটি স্বাধীনতাকামী বাঙালির গর্ব, সাহস ও প্রেরণার উৎস।  আমাদের সংস্কৃতির হৃদপিন্ড। একুশের এই চেতনাকে হৃদয়ে লালন, বাঙালির শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতিতে মোটকথা জীবন যাপনে এর প্রভাব নিয়ে আমাদের এবারের আয়োজন।       
                                                                                                          
একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় জীবনের এক অমর অধ্যায়। ভাষা একটি দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। আর এ সংস্কৃতি-ঐতিহ্য সংরক্ষণে ভাষা হচ্ছে শক্তিশালী হাতিয়ার। তাই তো আজ একুশে ফেব্রুয়ারি শুধু আমাদের নয়, সারা বিশ্ববাসীর। এ অর্জন আমাদের মাথায় পরিয়েছে যেমন বিজয় মুকুট, তেমনি বাঙালির শিরকে করেছে হিমালয়সম উচ্চ ও মহিমাময়। আর বিশ্বদরবারের কাছ থেকে এ অর্জনের স্বীকৃতি আদায়ে অসীম প্রেরণা জুগিয়েছে আমাদের সংগ্রামী চেতনাকে। মূলত স্বাধীনতা-পরবর্তী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের যেসব অর্জন রয়েছে তার মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ অর্জন বলে এখনো সর্বমহলে সব সময় প্রতিভাত হয়। কেননা একুশের চেতনা ধারণ করেই বাঙালি জাতি ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীনতার লাল টুকটুকে সূর্য।

একুশে ফেব্রুয়ারি শুরু হয় প্রভাতের প্রভাতফেরী দিয়ে। গলায় গান আর হাতে ফুলের মালা নিয়ে ধীর পায়ে স্মৃতির মিনারের দিকে পৌঁছায় মানুষ গুটি গুটি পায়। একুশে ফেব্রুয়ারির এই দিনটিকে সাজানো হয় কালো আর সাদা রঙের আঙ্গিকে। যদিও এখন কিছুকিছু ক্ষেত্রে লাল রঙের দেখা পাওয়া যায়। সাদা রঙের শাড়ি তাতে কালো পাড় কিংবা সাদা রঙের সালোয়ার, ওড়না আর কালো রঙের কামিজে মেয়েরা সাজায় নিজেদের। শাড়িতে থাকে নানা জলছাপ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাতে আঁকিবুঁকি থাকে স্মৃতিসৌধ, শহীদমিনার, বিভিন্ন অক্ষর যেমন অ, আ, ই, ঈ সহ সব বর্ণমালা। কিছু ক্ষেত্রে আবার বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়কার বিভিন্ন চিত্রও ফুটিয়ে তোলা হয়।

মেয়েদের ওয়েস্টার্ন পোশাকেও এসেছে একুশে ফেব্রুয়ারির ছোঁয়া। তাতেও দেখা যায় সাদা কালোর মেলা। সাদাকে শান্তির প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয় এ ক্ষেত্রে। ছেলেদের টি-শার্ট থেকে শুরু করে শার্ট, পাঞ্জাবি  আর পায়জামাতেও দেখা যায় সাদা আর কালো রঙের খেলা। পাঞ্জাবি কখনো সম্পূর্ণ কালো, আবার কখনো সম্পূর্ণ সাদা রঙের কাজ চোখে পড়ে। টি-শার্টের ক্ষেত্রে বড় বড় বর্ণ কিংবা খোলা জানালার স্বাধীনতার প্রতীক দেখা যায়।      

ফ্যাশন হাউজগুলো ঘুরে দেখা যায়, একেকটি ফ্যাশন হাউজ  একেকটি থিম ধরে তাদের পোশাকে একুশে ফেব্রুয়ারিকে উপস্থাপন করেছে। কোনো হাউজ শহীদ মিনারের ছবি, কোনো হাউজ বাংলা বর্ণমালা, আবার কোনো হাউজ নকশা করেছে ভাষা আন্দোলনের পোস্টার, গান, কবিতা বা নানা স্মারক দিয়ে। তবে ঘুরেফিরে প্রায় সব হাউজের পোশাকেই প্রাধান্য পেয়েছে ভাষা আন্দোলন, ভাষা শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব। আর এসব নকশা করা হয়েছে সাদা, কালো, লাল সহ নানা রঙের বৈচিত্র্যে।

এদিন যারা শহীদ মিনারে যাবেন, তাদের একটু প্রস্তুতি দরকার। মেয়েরা চুলে সাদামাটা বেণী বা খোঁপা করতে পারেন। চোখে কালো আইশ্যাডো ব্যবহার করাই জুতসই। এরপর আইভ্রুর ঠিক নিচে সিলভার হাইলাইটার দিন। যারা কাজল ব্যবহার করেন তারা শহীদ দিবসের সাজের সঙ্গে তা যুক্ত করে নিতে পারেন। ঠোঁটে হালকা স্বাভাবিক রংয়ের লিপস্টিক ব্যবহার করুন। তবে লুকটা হওয়া চাই ন্যাচারাল। সাজে যেন কোনো বাহার না থাকে। ছেলেরা মাথায় পরতে পারেন বাংলাদেশ পতাকার রংয়ের কোনো ফেট্টি কিংবা হাতে লাল-সবুজের কোনো ব্রেসলেট। এটিও আমাদের বাঙালিত্ব পরিচয় ফুটিয়ে তুলে।

অমর একুশে বইমেলা স্বাধীন বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী মেলাগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এ মেলার ইতিহাস স্বাধীন বাংলাদেশের মতোই প্রাচীন। বই দেখা, বই কেনা, খাবার খাওয়া, ঘুরে-বেড়ানো এসব একুশে মেলার চিরায়ত ঐতিহ্য। শুক্রবারে বই মেলা থাকে লোকে ভরা, মানুষের ঠেলা-ঠেলি। তবুও   সবকিছুতেই একটা রুচির ছাপ। মেলার তথ্যকেন্দ্র থেকে প্রতিনিয়ত নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের খবর, প্রতিদিন প্রকাশিত বইগুলোর নাম, লেখক ও প্রকাশকের নাম প্রকাশ করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন রেডিও ও টেলিভিশন চ্যানেল মেলার মিডিয়া স্পন্সর হয়ে মেলার তাৎক্ষণিক খবরাখবর দর্শক-শ্রোতাদের অবহিত করে।

সবশেষে বলতে হয়, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে ভাষা আন্দোলনের প্রভাব অত্যন্ত গভীর ও তাৎপর্যপূর্ণ। আর ভাষা আন্দোলনের মূল লক্ষ্যই ছিল নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করা ও সমুন্নত রাখা। আর সেই উদ্দেশ্য আমাদের সফল হয়েছে।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –