• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশ-ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ

পঞ্চগড়ে ঐতিহ্যবাহী ‘ভাদরকাটানি’ উৎসব শুরু   

প্রকাশিত: ১৪ আগস্ট ২০২১  

ভাদ্র মাসে স্বামী-স্ত্রীর মুখ দেখাদেখি বন্ধ। কারণ, লোকাচারের বিশ্বাস মতে, ভাদ্র মাসে মুখ দর্শন করলে স্বামীর অমঙ্গল হয়। তাই নতুন বিবাহিত বধূরা স্বামীর মঙ্গল কামনা করতে করতে ফিরে যায় বাপের বাড়ি। তখন বিদায় বেলায় চোখ ছলছল হয়ে উঠলেও প্রাচীনকাল থেকে এই প্রথা একটি উৎসব। একেই বলা হয় ভাদরকাটানি। রংপুর কুড়িগ্রাম অঞ্চলে এই প্রথাকে বলা হয় নাইওর যাওয়া।

শ্রাবণের শেষের কয়েক দিন থেকে সারা ভাদ্র মাস জুড়ে চলে এই উৎসব। পঞ্চগড়ে ভাদরকাটানি উৎসব শুরু হয়েছে। নববধূরা ফিরছে বাপের বাড়ি। একদিকে বাপের বাড়ি ফেরার আনন্দ, অন্যদিকে স্বামী বিরহ।

বাবার বাড়ি থেকে ভাইবোন, দুলাভাই, বন্ধু এবং আত্মীয়-স্বজনরা আসে বিবাহিত নারীর শ্বশুর বাড়িতে। তারা নানা রকম পিঠা-পায়েস নিয়ে আসে। স্বামীর বাড়িতেও ভাদরকাটানির মেহমানদের আদর-যত্ন করার ধুম পড়ে যায়। দুপুরে অথবা রাতে পেট পুড়ে খেয়ে আনন্দ-উদ্দিপনায় মেতে ওঠে দুই বাড়ির লোকজন।

আড্ডা-আলাপনে উঠে আসে সুখ-দুঃখের নানা গল্প। তারপর স্ত্রীকে নিয়ে তারা যাত্রা করে। আগে বাপের বাড়িতে পুরো ভাদ্রমাস কাটাতে হতো স্ত্রীদের। বর্তমানে কয়েকদিন কাটিয়েই ফিরে আসে স্বামীর ঘরে। স্ত্রীকে আনার জন্য স্বামীর বাড়ি থেকে ননদ, দেবর , স্বামীর আত্মীয়স্বজন, ভাই বন্ধুরা তাকে আনতে যায়। তারাও নানা ধরনের পিঠা-পায়েস নিয়ে যায়। এসব খাদ্যদ্রব্যকে আঞ্চলিক ভাষায় বলা হয় সান্দোস।

স্ত্রীর বাড়িতেও আপ্যায়নের নানা আয়োজন করা হয়। আগের দিনে গরুর গাড়িতে করে তারা ভাদরকাটানি উৎসবে বউকে আনতে যাওয়া হতো। বর্তমানে রিকশা, ভ্যান, অটোবাইক এবং মাইক্রোবাসে করে বউকে আনতে যাওয়া হয়। সেই আমলে পিঠা-পায়েসসহ হাতে তৈরি জিলাপি, সেমাই, দই, মিষ্টি, পাঠা বলি বা ছাগল কোরবানি দেওয়ার প্রচলণ ছিল।

গবেষক ও পঞ্চগড় উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সভাপতি শফিকুল ইসলাম বলেন, ঠিক কবে থেকে এই প্রথা উৎসবের প্রচলন ঘটেছে তার দালিলিক কোনো তথ্য না থাকলেও সব ধর্মের লোকজন এই প্রথা মেনে চলে। হিন্দু ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান থেকে এই প্রথার উদ্ভব ঘটলেও মুসলিমসহ সকল সম্প্রদায়ের লোকজন এই প্রথা উৎসব পালন করে। তাই ভাদরকাটানি উৎসব অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীক হিসেবে পঞ্চগড়ে প্রচলিত। তবে বিলীন হয়ে যাচ্ছে হাজার বছরের এই পুরোনো সংস্কৃতি। অন্যান্য উৎসবের মতোই ভাদরকাটানিকে ভুলতে বসেছে পঞ্চগড়ের মানুষ।

নাট্য সংগঠন ভূমিজের নাট্যকর্মী হাজ্জাজ তানিন জানান, শহুরে সংস্কৃতি এবং ভোগবাদী সংস্কৃতির ক্রমবর্ধমান আগ্রাসনে ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে এই সংস্কৃতি। গ্রামাঞ্চলেও কমে গেছে এই উৎসব। কিছু সংখ্যক মানুষ এখনো এই প্রচলিত প্রথাকে বিশ্বাস করে পালন করে আসছে। ভাদরকাটানি উৎসব সম্পর্কে নতুন প্রজন্মরা অনেকেই জানে না। মানুষের প্রাচীন আনন্দ-উৎসবগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। অথচ বর্তমান সময়ে এই উৎসবগুলোর প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য হিসেবে দেখা দিয়েছে। এই উৎসবকে ধরে রাখার জন্য নানা রকমের উদ্যোগ প্রয়োজন।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –