• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া হেঁটে চলছেন তারা

প্রকাশিত: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২  

দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে পাড়ি জমাতে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যুবকসহ এক নারী। যুবকের নাম সবুজ কুমার বর্মণ প্রবাল। পেশায় একজন ফ্যাশন ডিজাইনার। কর্মরত রয়েছেন রাজধানীর একটি বায়িং হাউজে। থেরাপির পরিবর্তে সাধারণ মানুষকে হাঁটার উপকারিতা বুঝাতে দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে পাড়ি জমাতে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ওই যুবক। চাকরি করার কারণে তিনি একটানা হাঁটতে পারছেন না। তাই কর্মচাঞ্চল্য ওই যুবক সপ্তাহের ৫ দিন অফিস করে বাকি দুইদিন পায়ে হেঁটে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পাড়ি দিতে বর্তমানে অবস্থান করছেন নীলফামারীর একটি আবাসিক হোটেলে।

জানা যায়, গত পহেলা জানুয়ারি থেকে টেকনাফের জিরো পয়েন্ট থেকে শুরু করে নীলফামারী পর্যন্ত পৌঁছাতে সময় লেগেছে ১৪ দিন। তবে শনিবার ভোর থেকে ওই যুবকের হাঁটাতে উদ্বুদ্ধ হয়ে দিনাজপুরে যুক্ত হন তার চাচাত ভাই অনিব কুমার বর্মণ ও দিনাজপুরের কেবিএম কলেজের বিএসএস শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী রেখা সরকার। তারাও প্রথম দিনে ৬০ কি.মি. রাস্তা পায়ে হেঁটে নীলফামারীতে পৌঁছান। রাতে নীলফামারীর একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থান শেষে রবিবার ভোরে নীলফামারীর চৌরঙ্গী মোড় থেকে একদিনেই তেঁতুলিয়ায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তারা।

শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে প্রবালের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, গত বছর আমার করোনা পজেটিভ হয় এবং আমার ফুসফুস ড্যামেজ হয় ৮০ শতাংশ। সেখান থেকে আমি বেঁচে আসি। তখন থেকে আমার ইচ্ছে হয়- আমার শরীরটা যখন ভালো হয়ে যাবে। আমি একটা প্লান তখন করি যে, টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া হেঁটে যাওয়ার এবং সঙ্গে দেশের মানুষকে ‘সে ইয়েস ফর ওয়ার্ক, সে নো ফর থেরাপি’ মেসেজ দেওয়ার। সেই চিন্তা থেকেই যেহেতু বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তি সেটাকে কেন্দ্র করে আমি জানুয়ারি ১ তারিখ থেকে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া আসার প্লান করি।

প্রবাল আরও বলেন, যেহেতু আমি একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে কর্মরত আছি। সেহেতু আমার পক্ষে একবারে শেষ করা আসলে সম্ভব হয়ে ওঠেনি। যার জন্য সপ্তাহে ৫ দিন অফিস করে শনি ও রবিবার ছুটি থাকায় পায়ে হেঁটে ১৫ দিনে প্রায় ৮৫০ কি.মি. নীলফামারী পর্যন্ত পৌঁছাই। আগামীকাল সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) নিজের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে চাই। এদিন সর্বোচ্চ ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটারের বেশি হেঁটে একটি রেকর্ডও করার ইচ্ছা রয়েছে।

প্রবাল বলেন, এছাড়াও আমার আগে ইচ্ছে ছিল পাহাড়ে ওঠার। ইতোমধ্যে সাকাহাফং, তাজিংডং, যোগী হাফং, জুগি যতলং পাহাড়সহ দেশের বেশ কয়েকটি পাহাড়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি। তবে আমাদের দেশের আরও কিছু উঁচু পাহাড় আছে সেগুলোর পাশাপাশি ভারত, নেপালের বিভিন্ন পাহাড়সহ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করার ইচ্ছে আছে। এজন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে কঠোর পরিশ্রম করতে হচ্ছে।

রেখা সরকার বলেন, আমার ছোটবেলা থেকেই ঘুরতে, পাহাড় ও ঝর্না এসব দেখতে খুব ভালো লাগে । আর প্রবাল দাদার সঙ্গে পাহাড় দেখতে গিয়েই পরিচয় হয়েছে। তো সেখানেই দাদার টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া যাওয়ার পরিকল্পনা শুনি। প্রথম থেকে আমার ইচ্ছে ছিল তার সঙ্গে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যাব। কিন্তু কারণে অকারণে তার সঙ্গে যুক্ত হতে পারিনি । আজকে সুযোগ হওয়ায় দিনাজপুরের পার্বতীপুর থেকে ৬০ কি.মি. হেঁটে নীলফামারী পর্যন্ত আসা। আমাদের ইচ্ছে একটা দিন একটা রাত হেঁটে তেঁতুলিয়া গিয়ে আরেক যে একটা রের্কড আছে, সেটা ভাঙ্গার চেষ্টা করবো ।

অনিব কুমার বর্মণ বলেন, আমার ভাইয়া টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া যাওয়ার একটা মিশন হাতে নিয়েছে। এটা দেখে আমারও আগ্রহ বেড়ে যাওয়ায় আমি তার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার প্রস্তাব দেই। তারপর সে আমাকে নিয়ে আসলে তার সঙ্গে ৬০ কি.মি. হাঁটতে সক্ষম হয়েছি। আরো একদিনে প্রায় ১১০ কি.মি. রাস্তা হাঁটার পরিকল্পনা রয়েছে।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –