• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী গরমে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশ-ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ

সাঁতার কেটে মৃত্যুকূপ থেকে রক্ষা পেল চার শিশু

প্রকাশিত: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২  

উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা করতোয়া নদীতে নৌকাডুবি। গত তিনদিনে একে একে ৬৯টি লাশ উদ্ধার হয়েছে। এ ভয়াবহ নৌকাডুবির মতো মৃত্যুকূপ থেকে সাঁতার কেটে প্রাণে রক্ষা পেয়েছে ১১ বছরের শিশু তর্পণ নারায়ণ রায়। সেইসঙ্গে পানিতে ডুবে যাওয়ার সময় তার বড় বোনকে নদী থেকে সাঁতার কাটিয়ে জীবিত অবস্থায় রক্ষা করেছে। সাঁতার কেটেই রক্ষা পেয়েছে তর্পণের আরেক প্রতিবেশী শিশু মিঠুন রায়। সেও ডুবন্ত তিনজনকে রক্ষা করে।

জানা যায়, পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় গত রোববার দুপুরে আউলিয়ার ঘাট দিয়ে তর্পণ নারায়ণ রায় ও তার বড় বোন ঈশিতা কলি রায়, এলাকার প্রতিবেশী মিঠুন ও রাধা রানীসহ চারজন মিলে বদেশ্বরী মন্দিরে পূজা দিতে যাওয়ার জন্য নৌকায় ওঠে। পরে অতিরিক্ত যাত্রী নেয়ার ভারে দেবে গেলে নৌকায় পানি উঠা শুরু করে। একপর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডুবে যায় নৌকাটি। শুরু হয় যাত্রীদের মধ্যে হাহাকার। নৌকার যাত্রীরা পানিতে ডুবে যেতে থাকে।

এ সময় তপনের সঙ্গে ডুবতে থাকে তার বোন ঈশিতা কলি রায়। পরে পানিতে ডুবতে থাকার সময় ছোট ভাই  তপন বড় বোন ঈশিতাকে টেনে তোলে সাতাঁর কাটে নদী থেকে উপরে দিয়ে আসে। তারা দুইজনই মাড়েয়া উচ্চ বিদ্যলয়ের শিক্ষার্থী। বোন ঈশিতা এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে আর তর্পণ পড়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে৷ অন্যদিকে একই সময় নৌকা ডুবে গেলে সাঁতার কেটে প্রাণে রক্ষা পায় মিঠুন, সে রক্ষা পাওয়ার জন্য সাঁতার কেটে নদী থেকে বেশ কয়েক জন মানুষকে টেনে ঘাটে নিয়ে রক্ষা করে৷ একই সময় সাতাঁর জানতে পারায় রক্ষা পায় একই এলাকার রাধা রানীও৷ মৃত্যুর কূপ থেকে সাঁতার কেটে প্রাণে রক্ষা পাওয়ায় তাদের চারজনকে দেখতে তাদের বাড়িতে ভিড় করছে বিভিন্ন এলাকার মানুষ। 

এদিকে নৌকা ডুবিতে প্রাণে রক্ষা পাওয়া চার শিশুর দাবি তারা সাঁতার জানা থাকার কারণে তারা বেঁচে আছেন৷ নিজে বেঁচে থাকলেও তাদের সঙ্গে থাকা নৌকা ডুবিতে মৃতদের কথা তারা কোনোভাবেই ভুলে যেতে বা মেনে নিতে পারছে না৷  তারা বলছেন অতিরিক্ত যাত্রী বহন করার কারণে নৌকাটির মানুষের চাপে ডুবে যাওয়ার উপক্রম হলে মাঝি নৌকাটি পুনরায় ঘাটে নৌকাটি ভিড়াতে মোড় ঘুরালে তারা মারা যায়৷ 

এ বিষয়ে তর্পন বলেন, আমার বড়বোনসহ চারজন মিলে পূজা দেখতে যাচ্ছিলাম। যাওয়ার সময় হঠাৎ নৌকাটি ডুবে যায় অতিরিক্ত যাত্রী নেয়ায়। পরে আমি পানিতে ডুবে গেলে সাঁতার কাটে উপরে উঠার চেষ্টা করি। আমার বড় বোনকে টেনে নদীর ঘাটে নিয়ে যাই৷ সাঁতার না জানলে হয়তো আমি আর রক্ষা পেতাম না৷ 

একই কথা বলেন তর্পনের বড়বোন ঈশিতা  কলি, তিনি বলেন, আমি তেমন সাঁতার জানি না। আমি যখন পানিতে ডুবে যাচ্ছিলাম তখন আমার ছোট ভাই আমাকে টেনে নিয়ে ঘাটে নিয়ে যায়। আমার ভাইয়ের জন্য আমি বেঁচে গেছি৷ 

তপন ও ঈশিতার মা স্বরসর্তি রানী বলেন, ভগবান আমার ছেলে মেয়েকে আমার বুকে ফিরিয়ে দিয়েছে এটাই বড় পাওয়া আমার৷

মিঠুন রায় বলেন, আমি সাঁতার কেটে প্রথমে ঘাটে যখন যাই তখন দেখি অনেক নারী পুরুষ ডুবে ডুবে পানি খাচ্ছে পরে আমি গিয়ে দুজনকে টেনে ডাঙায় নিয়ে আসি।

মিঠুনের বাবা মানিক রায় বলেন,আমার ছেলে সাঁতার কেটে নৌকা ডুবি থেকে রক্ষা পেয়েছে, সে আমার বুকে ফিরে আসছে এটাই বড় পাওয়া। সবচয়ে ভালো লাগছে সে মানুষকে উদ্ধারও করেছে।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –