• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
ইসরায়েলের হামলার পর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানে।

ছেলেকে পড়াতে ভ্যান বিক্রি করা সেই বাবার পাশে দাঁড়ালেন ডিসি      

প্রকাশিত: ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  

ছেলেকে পড়াতে ভ্যান বিক্রি করা সেই বাবার পাশে দাঁড়ালেন ডিসি               
মেধাবী ছেলেকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে জীবিকার একমাত্র অবলম্বন ভ্যান বিক্রি করে দিয়েছিলেন বাবা হামিদুল ইসলাম। ভ্যান বিক্রি করা টাকায় ছেলেকে বই কিনে দেন তিনি। কিন্তু ছেলে মেহেদী হাসান বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) ভর্তির সুযোগ পেলেও অর্থের অভাবে থেমে যাচ্ছিল তার স্বপ্ন। তাই তার বাবা সহযোগিতার জন্য দ্বারস্থ হয়েছিলেন জেলা প্রশাসকের কাছে। 

বিষয়টি জানার পর বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম ছেলেটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আর্থিক সাহায্যসহ তার বাবা হামিদুল ইসলামকে নতুন ভ্যান কিনে দিয়েছেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব দীপঙ্কর রায়সহ প্রশাসনের কর্মকর্তা ও হামিদুলের পরিবারের সদস্যরা। ডিসির কাছ থেকে নতুন ভ্যান পেয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলেন হামিদুল।

জেলা সদরের ধাক্কামারা ইউনিয়নের কমলাপুর এলাকার বাসিন্দা ভ্যানচালক হামিদুল ইসলাম। মাত্র ২ শতক জমির ওপর তাদের বসতঘর। সেখানে স্ত্রী, এক মেয়ে ও ছেলে মেহেদীকে নিয়ে চলছে তাদের অভাবের সংসার। একমাত্র ছেলে মেহেদী হাসান ছোট থেকেই মেধাবী। উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো ফলাফলের পর তাকে কোচিং করাতে টাকার প্রয়োজন হয়। হামিদুল ছেলের কোচিং ও বই কেনার খরচ জোগাতে বিক্রি করে দেন নিজের ভ্যানটি। সেই টাকায় মেহেদী বই কেনা ও কোচিংয়ের খরচ দেন তিনি। পরে ভাড়ায় একটি ভ্যান থেকে চলত তার সংসার। তাই সংসার ও ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে চরম দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন তিনি।

শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, আমি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে পড়ছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলেও টাকার অভাবে ভর্তি আটকে যাচ্ছিল। তাই এক বন্ধুর পরামর্শে জেলা প্রশাসনের কাছে আর্থিক সহযোগিতা চেয়ে আবেদন করলে আমাকে ডিসি স্যার তাৎক্ষণিক ১০ হাজার টাকা দেন। আমি জেনেছি, আমার মতো অসংখ্য হতদরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য টাকা দিয়েছেন তিনি। স্যার অত্যন্ত মানবিক। আজ আবার বাবাকে নতুন ভ্যান কিনে দিয়েছেন। ডিসি স্যারের এমন উপকার আজীবন মনে রাখব।

ভ্যানচালক হামিদুল ইসলাম জানান, ছেলে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেলে অর্থের অভাবে ভর্তির টাকা জোগাতে পারছিলাম না। পরে জেলা প্রশাসক বরাবর আর্থিক সাহায্যের জন্য দরখাস্ত দিলে ডিসি স্যার ১০ হাজার টাকা সহযোগিতা করেন। পরে আমাদের কষ্টের কথা শুনে কালকে নতুন একটি ইঞ্জিনচালিত ভ্যান কিনে দিয়েছেন। এখন আর ভাড়া ভ্যান চালাতে হবে না। এটা দিয়েই রোজগার করে ছেলের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে ছেলেকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলব। ভ্যানটা দিয়ে খুব উপকার করলেন ডিসি স্যার। এ উপকার সারাজীবন মনে থাকবে।

জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, প্রতি বুধবার সাধারণ মানুষের জন্য গণশুনানির দিন নির্ধারিত করে রেখেছে জেলা প্রশাসন। তাই গণশুনানির দিনে ভ্যানচালক হামিদুলের মতো অনেকেই অনেক ধরণের সমস্যা নিয়ে আসেন। এদের মধ্যে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীরা আসেন। কেউ বিশ্ববিদ্যালয়, কেউ মেডিকেল কলেজে ভর্তিসহ বই কেনার আর্থিক সাহায্যের জন্য। আমার চেষ্টা থাকে এসব মেধাবী শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষা এবং দুঃস্থদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।

তিনি আরও বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত বিশেষ অনুদান, জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দসহ জেলা প্রশাসক শিক্ষা বৃত্তি থেকে এসব গরিব মেধাবী ও দুঃস্থদের আর্থিক সহায়তা করা হয়। এটা আসলে সেই অর্থে জনসেবা না। জেলা প্রশাসনের রুটিন ওয়ার্ক বলতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –