• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী গরমে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশ-ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ

পঞ্চগড়ের বালু শিল্পে খুলেছে অর্থনীতির নতুন দ্বার                 

প্রকাশিত: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  

                                  
সমতলের সবুজ চা শিল্পখ্যাত উত্তরের জেলা পঞ্চগড়। চা ও পাথরের পাশাপাশি বালু ব্যবসায় চাঙ্গা হয়ে উঠেছে এ জেলার অর্থনীতি। এখানকার বালু শিল্পকে কেন্দ্র করে বছরে সরকারের আয় হচ্ছে সাড়ে তিনশ কোটি টাকা রাজস্ব। এ বিপুল রাজস্ব আয়ে খুলেছে অর্থনীতির নতুন দরজা। 

এ জেলার নদ-নদী থেকে উত্তোলিত বালু ঝকঝকে ও গুণগত মানের। সিলিকা ও মোটা দানা বালুতে দেশ জুড়ে রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। দেশের বিভিন্নস্থানে বহুতল ভবন, সড়ক নির্মাণ, ইমারত, পাকাবাড়িসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যবহার করা হচ্ছে এখানকার রপ্তানিকৃত বালু। বালু শিল্প ঘিরে পঞ্চগড়ে প্রায় ১৫-২০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে।

জেলায় মহানন্দা, করতোয়া, ডাহুক, চাওয়াই, কুরুম, ভেরসাসহ বেশ কিছু নদীর সুবিশাল এলাকা জুড়ে তোলা হচ্ছে মোটা দানার বালু ও সিলিকা বালু। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তেঁতুলিয়ার মহানন্দা, করতোয়া, ডাহুক, জেলার সদরের মীরগড়, আমতলা, বোদা উপজেলার মাড়েয়া, তেপুখুরিয়া, বনগ্রাম বেংহাড়ি, দেবীগঞ্জের শালডাঙ্গা, দেবীডুবা এলাকায় কমপক্ষে রয়েছে ৬শ বালুর পয়েন্ট। এসব বালু বেচাকেনা অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানের জন্য আর্শীবাদ হয়ে উঠেছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, পঞ্চগড়ে ৩৩টি নদী রয়েছে। প্রতি বৈশাখে তিনটি নদীর ১৫টি বালুমহাল ইজারা দেয় প্রশাসন। করতোয়াসহ বিভিন্ন নদ-নদীর ১৫টি বালুমহাল থেকে নিয়মিত বালু তোলা হচ্ছে। এসব বালু মহাল থেকে বছরে প্রায় ১৮ কোটি ঘনফুট বালু সরবরাহ করা হচ্ছে বিভিন্ন নির্মাণ প্রকল্পে। বছরে একশ থেকে দেড়শ কোটি টাকার বালু বেচাকেনা হচ্ছে। এছাড়াও পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে বালু বিক্রি করে সরকারের কোষাগারে জমা হচ্ছে মোটা অংকের রাজস্ব। বর্তমানে জেলার অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এই বালু।  

স্থানীয়রা জানায়, বালুর ধরণ অনুযায়ী ১ হাজার থেকে ১১শ ঘনফুট বালু বিক্রি হচ্ছে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকায়। এসব বালুমহাল থেকে প্রতিদিন ৪শ থেকে ৫শ ট্রাক ভরে পাঠানো হয় দেশের বিভিন্ন জেলায়। বিভিন্ন বড় নির্মাণ শিল্পে ব্যবহৃত হয় এসব উপকরণ। স্থানীয়দের রেকর্ড হারে বালু কেনাবেচা হচ্ছে এ জেলায়। নদীর বালু সুষম ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে যেমন বাড়বে রাজস্ব আয়, তেমনি নদী বিধৌত অঞ্চলে গড়ে উঠা বালু কেন্দ্রীক অর্থনীতিতে যুক্ত হবে নতুমাত্রা।

তবে বালু শিল্প ঘিরে নিম্নআয়ের মানুষদের কর্মসংস্থান তৈরি হলেও বাড়েনি শ্রমিকদের শ্রমের মজুরি। শ্রমিকরা জানায়, তারা দিনশেষে কঠোর পরিশ্রম করে মাত্র হাতে আসে ৪শ থেকে সাড়ে ৪শ টাকা। দলবেঁধে দশ চাকার একটি ট্রাক বালু তুলতে পারলে তাদের মজুরি আসে হাজার টাকার মতো।

ব্যবসায়ীরা জানান, এ জেলা বালু উত্তোলন, কেনাবেচায় নতুন অর্থনীতি গড়ে উঠেছে। ড্রেজার মেশিনে পাথর তোলা বন্ধ হওয়ার পর বালু তুলে অনেক নিম্ন আয়ের মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। এখানকার বালু স্বচ্ছ দানার শতভাগ পরিছন্ন। এসব বালুতে কোনো মিশ্রণ নেই। ধুলি আর ময়লাবিহীন হওয়ায় বালুর চাহিদা রয়েছে সারাদেশে। একটি বড় ট্রাকে (১০ চাকা) ৮০০ থেকে সাড়ে ৮০০ ঘনফুট পর্যন্ত বালু পরিবহন করা হয়। এই বালু ঢাকা, বগুড়া, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, কুষ্টিয়া, মাগুরা, খুলনাসহ পাঠানো হয় দেশের বিভিন্ন জেলায়। প্রতি ট্রাক বালুর দাম পড়ে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। আবার ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া খরচ করে জেলার বাইরের বালু ব্যবসায়ীরা নিয়ে যান তাদের জেলায়।

বালি ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন জানান, আমি দীর্ঘদিন ধরে পাথর-বালুর ব্যবসা করে আসছি। এখন পাথর ব্যবসা বন্ধ। বালু ব্যবসা করছি। আমাদের এ বালি উৎকৃষ্টমানের বালু। এ বালু স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে আমরা জেলার বাইরে রপ্তানি করতেছি। আবার সাধারণ গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করে থাকি। রংপুর, দিনাজপুর, খুলনা, রাজশাহী, বগুড়া ও ঢাকাতেও বালু বিক্রি হয়ে থাকে। আমাদের বালু মানসম্মত। নির্মাণাধীন কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এ বালু দুই দশমিক ৫ প্লাস। বালু কেন্দ্র করে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। আমরাও চলতে পারছি ভালোভাবে।

পঞ্চগড় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দীপঙ্কর রায় বলেন, উত্তরের প্রবেশদ্বার পঞ্চগড়। জেলাটি হিমালয়কন্যা বলে খ্যাত। আমাদের এ পঞ্চগড়ে ৩৩টি নদী রয়েছে। এ ৩৩টি নদীর মধ্যে ১৫টি বালুমহাল রয়েছে। এসব বালুমহাল থেকে আমরা বছরে প্রায় সাড়ে তিনশো কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে থাকি। একই সঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক যে নদী খনন হয় সেখান থেকে বালু বিক্রি করেও কিন্তু আমরা বিপুল অংকের রাজস্ব আয় করে থাকি। আমরা বালু মহালের লিজ দিয়ে বিপুল অংকের রাজস্ব আয় করে থাকি। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত রয়েছে শ্রমিক, ব্যবসায়ী, নির্মাণ শ্রমিক, পরিবহন ব্যবসাও জড়িত রয়েছে। এ কারণে নদী কেন্দ্রিক বালু শিল্পে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। দারিদ্র বিমোচন হচ্ছে। এ কর্মসংস্থানের ফলে প্রান্তিক জনপদের মানুষ আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তনে ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছে। 

সূত্র-ঢাকা পোস্ট

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –