• মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৩ ১৪৩১

  • || ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য আব্দুল জব্বার

প্রকাশিত: ২৮ আগস্ট ২০২১  

মোহাম্মদ আবু জাফর রাজু   

স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্নেহধন্য আব্দুল জব্বার ছিলেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাঁঁকে বঙ্গবন্ধু স্নেহ করতেন ও ভালোবাসতেন। তিনি নিজেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। প্রচণ্ড ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, সাহসী, তেজোদীপ্ত একজন মানুষ ছিলেন আব্দুল জব্বার। ’৬২-র শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬-র ছয় দফা, ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, ’৭০-এর নির্বাচন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অনন্য ভূমিকা রেখেছিলেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর ’৭৫-পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ নানা টানাপড়েনের মধ্য দিয়ে গেছে। দলের ভাঙা-গড়া, ষড়যন্ত্র দেখা গেছে। আব্দুল জব্বার সেই ভাঙা-গড়া দলকে সুসংগঠিত করেছেন, কখনো আওয়ামী লীগ ছেড়ে যাননি, নেতৃত্বের প্রতি, দলের সঙ্গে বেঈমানি, মোনাফেকি করেননি। ’৭৫-পরবর্তী সময়ে তিনি নির্মমভাবে অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি দমে যাননি।

স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি তাঁর যে অকৃত্রিম আনুগত্য, বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা সেটা বাঙালির ভাষা আন্দোলন থেকে আইয়ুববিরোধী আন্দোলন ও সংকটে বারবার প্রমাণিত হয়েছে, তাঁর রাজনৈতিক অতীত ছিল সমুজ্জ্বল।

আব্দুল জব্বার একাধারে যেমন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সংগঠক ছিলেন, তেমনি মাত্র ১৯ বছর বয়সে ১৯৬৪ সালে কুলাউড়া থানা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি বৃহত্তর সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য ও সহসভাপতি এবং মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মাত্র ৩৪ বছর বয়সে ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

বাংলাদেশ কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মরহুম আব্দুল জব্বারকে রাজনৈতিক জীবনে ব্যাপক সংগ্রাম ও বিস্তর বন্ধুর পথ অতিক্রম করতে হয়েছে।

আব্দুল জব্বার ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন বলিষ্ঠ সংগঠক হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের পর তিনি হাজার হাজার ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গঠন করতে সংগ্রাম কমিটি গঠন করেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ওয়্যারলেসে প্রেরিত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আব্দুল জব্বার সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেন। ৬ মে পাকিস্তানি বাহিনী কুলাউড়া আক্রমণ করলে তাঁর দুই সহযোদ্ধা সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি তাঁর অন্য সহযোদ্ধাদের নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ নিতে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ধর্মনগর চলে যান। ধর্মনগর মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা ও শরণার্থী ব্যবস্থাপনার জন্য গঠিত জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিলের সদস্য এবং রিক্রুট ক্যাম্পের কো-চেয়ারম্যান ছিলেন এবং সেখানে অবস্থানরত জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের কৌশলগত বিভিন্ন দিক সম্পর্কে পরামর্শ ও পরিকল্পনা করেন। তিনি বাংলাদেশ লিবারেল ফোর্স বা মুজিব বাহিনীর ৪ নম্বর সেক্টরে অসামান্য সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ পরিচালনা, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ প্রদান, কুলাউড়া জংশন স্টেশনের মালবাহী ওয়াগন ভেঙে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে খাদ্য ও রসদসামগ্রী সরবরাহ এবং ভারত থেকে অস্ত্র সংগ্রহের ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার কারণে তাঁর সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের অবিশ্বাস্য দুঃসংবাদ শুনে আব্দুল জব্বারের নেতৃত্বে ১৭ আগস্ট কুলাউড়া শহরে প্রতিবাদ সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল ও গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে গ্রেপ্তার করে এবং তিনি কারারুদ্ধ হন। জেল থেকে মুক্তি পেয়ে আবার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করেন।

মহান মুক্তিযুদ্ধে গৌরবোজ্জ্বল অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সরকার তাঁকে ২০২০ একুশে পদকে ভূষিত করে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যার কাছে পরিবারের পক্ষ থেকে গভীর কৃতজ্ঞা প্রকাশ করছি। আমি মহান আল্লাহর দরবারে আব্বার পবিত্র আত্মার শান্তি কামনা করছি। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আব্বাকে জান্নাতবাসী করেন। আমিন।

লেখক : মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার-২
ও সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য মরহুম আব্দুল জব্বারের ছেলে

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –