• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশকে হুমকির মুখে ফেলেছে ক্রমবর্ধমান জলরাশি: গবেষণা উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে চার লেন চালু, ঈদযাত্রা হবে স্বস্তির সব উন্নয়ন সহযোগীদের এক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী বিডিএস ভূমি ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে: ভূমিমন্ত্রী বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা দিতে হবে: ওবায়দুল কাদের

সমাজ ও রাষ্ট্র বিরোধীদের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি

প্রকাশিত: ৩ আগস্ট ২০২১  

আল্লামা আবুল কাসিম খিরাকি (রহ.) বলেন, ‘যখন মুসলমানরা কোনো শাসকের আনুগত্যের ব্যাপারে একমত পোষণ করে, তখন যে ব্যক্তি তাঁর বিরোধিতা করে এবং তাঁকে পদচ্যুত করতে চায়, তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হবে এবং তাকে প্রতিহত করা হবে। তবে তাকে দমন করতে হবে যথাসম্ভব সহজ পন্থায়।’

আল্লামা ইবনে কুদামা (রহ.) বলেন, ‘যার নেতৃত্ব ও বাইআতের ব্যাপারে মুসলমানরা একমত হয়, তাঁর নেতৃত্ব গৃহীত ও প্রমাণিত। তাঁর পাশে থাকা ওয়াজিব হয়ে যায়। কেননা আবু বকর (রা.)-এর নেতৃত্ব নিশ্চিত প্রমাণিত হয়েছিল তাঁর হাতে বাইআতের ব্যাপারে সাহাবিদের একমত পোষণ করার মাধ্যমে। আর ওমর (রা.)-এর নেতৃত্ব প্রমাণিত হয়েছিল আবু বকর (রা.)-এর অঙ্গীকার দ্বারা, যা সাহাবিরা মেনে নিয়েছিলেন।’

শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ নয়

কোনো ব্যক্তি যদি মানুষের ওপর বিজয় লাভ করে ক্ষমতায় আরোহণ করে, সে-ও শাসক হিসেবে গণ্য হবে। তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হারাম। যখন আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ান আবদুল্লাহ ইবনে জোবায়ের (রা.)-এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে যুদ্ধে বিজয়ী হন, তখন আলেমরা তাঁকে শাসক হিসেবে স্বীকৃতি দেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হারাম বলে ঘোষণা দেন। কেননা এতে মুসলমানদের শক্তি খর্ব হয়, তাদের রক্ত প্রবাহিত হয়, তাদের সম্পদ নষ্ট হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমার উম্মত সংঘবদ্ধ হওয়ার পরও যে বা যারা তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, তরবারি দিয়ে তার ঘাড়ে আঘাত করো—সে যে-ই হোক না কেন।’

সুতরাং যখন কোনোভাবে কোনো ব্যক্তির নেতৃত্ব প্রমাণিত হয় এবং সে স্থিতিশীল পর্যায়ে দেশ ও সমাজকে নিয়ে যায়, তখন যে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে, তাকে প্রতিহত করা হবে।

প্রথমেই হত্যা নয়

সমাজ ও রাষ্ট্র বিরোধী কাজে লিপ্ত হলেই কোনো ব্যক্তিকে হত্যা করা হবে না। যতক্ষণ না তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে এবং তাদের সামনে সত্য তুলে ধরতে কোনো প্রতিনিধি পাঠানো হয়। হ্যাঁ, যদি তাদের কাছে গেলে আক্রান্ত হওয়ার ভয় থাকে, তাহলে ভিন্ন কথা। যদি আলোচনার সুযোগ থাকে, তাহলে আলোচনা করে সত্য তুলে ধরবে এবং তাদের ক্ষোভ প্রশমিত করবে। এর পরও যদি তারা ফিরে না আসে, তাহলে তাদের হত্যা করা হবে। কেননা আল্লাহ তাআলা হত্যার আগে সংশোধনের নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিনদের দুই দল দ্বন্দ্বে লিপ্ত হলে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেবে; আর তাদের একদল অন্য দলের বিরুদ্ধে বাড়াবাড়ি করলে যারা বাড়াবাড়ি করে তাদের বিরুদ্ধে তোমরা যুদ্ধ করবে, যতক্ষণ না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে।’ (সুরা হুজুরাত, আয়াত : ৯)

আলোচনার সুফল

আবদুল্লাহ ইবনে শাদ্দাদ বর্ণনা করেন, ‘আলী (রা.)-কে যখন খারেজিরা পরিত্যাগ করে, তখন তিনি আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-কে তাদের কাছে প্রেরণ করেন। তিনি তাদের সঙ্গে তিন দিন কোরআনের আলোকে বিতর্ক করেন। ফলে তাদের থেকে চার হাজার ব্যক্তি ফিরে আসে।’

সুতরাং বিদ্রোহীদের সঙ্গে প্রথমে আলোচনা করতে হবে। যদি তারা ফিরে আসতে অস্বীকার করে, তবু তাদের সদুপদেশ দেওয়া হবে এবং তাদের যুদ্ধের ভয় দেখানো হবে। কেননা তাদের বিরত রাখা এবং ক্ষতি প্রতিহত করাই মূল লক্ষ্য, তাদের হত্যা করা মূল লক্ষ্য নয়। সংঘাতের চেয়ে আলোচনাকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। কেননা যুদ্ধ হলে উভয়পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

রাষ্ট্রবিরোধীরা সময় চাইলে

যদি চরমপন্থী ও রাষ্ট্রবিরোধীরা সময় চায়, তাহলে তাদের অবস্থা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যদি তাদের ফিরে আসার ও সত্য উপলব্ধির আশা থাকে, তাহলে তাদের সুযোগ দেওয়া হবে। ইবনে মুনজির বলেন, ‘এ ব্যাপারে সব আলেম একমত পোষণ করেন।’

কিন্তু তাদের সময় চাওয়ার মূল উদ্দেশ্য যদি হয় যুদ্ধের জন্য সংঘবদ্ধ হওয়া, তাহলে তাদের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিতে হবে এবং তাদের বাহিনীকে ছিন্নভিন্ন করে দিতে হবে। তাদের কোনো ধরনের অবকাশ দেওয়া যাবে না। কেননা তাদের অবকাশ দিলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। যদি তারা অর্থের বিনিময়ে আপস করতে চায়, তাহলে কোনো অন্যায় সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে তাদের সঙ্গে আপস করা বৈধ নয়।

বেছে নিতে হবে সহজতর পদ্ধতি

মনে রাখতে হবে, সমাজ ও রাষ্ট্র বিরোধীদের দমন করার সহজতর পদ্ধতি বেঁচে নিতে হবে। যদি হত্যা না করেই তাদের প্রতিহত করা যায়, তাহলে হত্যা করা বৈধ নয়। কেননা তাদের প্রতিহত করাই মূল লক্ষ্য, হত্যা করা নয়। যখন হত্যা এড়িয়ে যাওয়া যায়, তখন তা এড়িয়ে যাওয়া আবশ্যক। ইসলাম বিনা প্রয়োজনে রক্তপাতের অনুমতি দেয় না। একইভাবে যদি বিদ্রোহীদের সঙ্গে এমন লোকের সন্ধান মেলে যে হত্যা ও নৈরাজ্যের সঙ্গে জড়িত নয়, তাহলে তাকেও হত্যা করা জায়েজ হবে না। কিন্তু সব প্রচেষ্টার পরও যদি নিরাপরাধ ব্যক্তি নিহত হয়, তাহলে ভিন্ন কথা।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –