• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশকে হুমকির মুখে ফেলেছে ক্রমবর্ধমান জলরাশি: গবেষণা উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে চার লেন চালু, ঈদযাত্রা হবে স্বস্তির সব উন্নয়ন সহযোগীদের এক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী বিডিএস ভূমি ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে: ভূমিমন্ত্রী বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা দিতে হবে: ওবায়দুল কাদের

যেসব কাজে আল্লাহর প্রশংসা করতে হয়

প্রকাশিত: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১  

ঈমানদার আল্লাহর প্রশংসা করে এবং তাঁর  প্রতি কৃতজ্ঞতা ও আনুগত্য প্রকাশ করে। ইসলামের শিক্ষা হলো, মুমিন কোনো ভালো কাজ করলে এবং সন্তোষজনক কিছু অর্জনের পর আল্লাহর প্রশংসা করবে। দৈনন্দিন জীবনের ভালো কাজে আল্লাহর প্রশংসা করে নিজেকে আল্লাহর আনুগত্য ও কৃতজ্ঞায় অভ্যস্ত করে তুলবে। আল্লাহর প্রশংসা করতে হয়—এমন কিছু দৈনন্দিন কাজ তুলে ধরা হলো—

১. ঈমানের কৃতজ্ঞতা সর্বক্ষণ : ঈমান হলো মানুষের প্রতি আল্লাহর সবচেয়ে বড় অনুগ্রহ। তাই মুমিন সর্বদা ঈমানের দৌলত লাভের জন্য আল্লাহর সপ্রশংস কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। পবিত্র কোরআনে মুমিনের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে, ‘তারা বলবে, প্রশংসা আল্লাহরই, যিনি আমাদের দ্বিনের পথ দেখিয়েছেন। আল্লাহ আমাদের পথ না দেখালে আমরা কখনো পথ পেতাম না।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ৪৩)

২. পানাহারের সময় : রাসুলুল্লাহ (সা.) খাবার শুরুতে বিসমিল্লাহ এবং শেষে আল্লাহর প্রশংসা করতেন। আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, খাবার সামনে এলে রাসুলুল্লাহ (সা.) পাঠ করতেন, হে আল্লাহ, আপনি আমাদের যে জীবিকা দান করেছেন, তাতে বরকত দিন এবং আমাদের জাহান্নামের শাস্তি থেকে বাঁচান।’ (আল-আজকারুন নাবুওয়াহ, হাদিস : ৫৫৬)

আবু উমামা (রা.) বলেন, নবী (সা.)-এর দস্তরখানা তুলে নেওয়া হলে বলতেন, অসংখ্য-অগণন পবিত্র ও বরকতময়  প্রশংসা আল্লাহর জন্য। হে আমাদের প্রতিপালক, এ (খাবার) থেকে কখনো মুখ ফিরিয়ে নিতে পারব না, বিদায় নিতে পারব না এবং এ থেকে বেপরোয়াও হতে পারব না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৪৫৮)

৩. নতুন কাপড় পরিধানের সময় : আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন নতুন কাপড় পরিধান করতেন, জামা অথবা পাগড়ির নাম উচ্চারণ করে তিনি পাঠ করতেন, ‘হে আল্লাহ, সব প্রশংসা আপনার জন্য, আপনি আমাকে এই কাপড় পরিধান করিয়েছেন। আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি এই কাপড়ের কল্যাণ ও তার জন্য যে কল্যাণ নির্ধারণ করেছেন এবং আশ্রয় প্রার্থনা করছি এই কাপড়ের অনিষ্ট ও তার জন্য যে অনিষ্ট নির্ধারণ করে করেছেন।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪০২০)

৪. ঘুম থেকে ওঠার পর : ঘুম মৃত্যুতুল্য। তাই ঘুম ভাঙার অর্থ হলো নতুন জীবন শুরু করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘুম ভাঙার পর পাঠ করতেন, ‘সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদের মৃত্যু দান করার পর আবারও জীবিত করেছেন এবং আমরা তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তন করব।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৩২৪)

৫. ভালো স্বপ্ন দেখলে :  আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) পছন্দনীয় কিছু দেখলে বলতেন, ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যার করুণায় নেক কাজগুলো পূর্ণতা লাভ করে।’ তিনি অপছন্দনীয় কিছু দেখলে বলতেন, ‘সর্বাবস্থায় সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৮০৩)

৬. হাঁচি দিলে : আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, “আল্লাহ যখন আদম (আ.)-এর ভেতর ‘রুহ’ ফুঁকে দিলেন এবং রুহ মাথায় দিয়ে পৌঁছাল, তিনি বললেন, ‘সব প্রশংসা জগত্গুলোর প্রতিপালক মহান আল্লাহর জন্য।’ তাঁর প্রতিপালক তাঁকে বলেন, ‘আল্লাহ তোমার প্রতি অনুগ্রহ করুন।” (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৪২০)

৭. সকাল বা সন্ধ্যায় উপনীত হলে : আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর সাহাবিদের শিক্ষা দিয়ে বলতেন : তোমাদের কেউ যখন ভোরে উপনীত হয় তখন সে যেন বলে, ‘হে আল্লাহ, আপনার হুকুমে আমরা ভোরে উপনীত হই এবং আপনার নির্দেশেই সন্ধ্যায় উপনীত হই। আপনার নির্দেশেই আমরা জীবন ধারণ করি এবং আপনার নির্দেশেই মারা যাই। আপনার দিকেই প্রত্যাবর্তনস্থল।’ আর যখন সন্ধ্যায় উপনীত হয় তখন যেন বলে, ‘হে আল্লাহ, আমরা আপনার হুকুমেই সন্ধ্যায় উপনীত হই, আপনার নির্দেশেই সকালে উপনীত হই, আপনার নির্দেশেই জীবন ধারণ করি এবং আপনার নির্দেশেই মারা যাই। আবার আপনার কাছেই পুনরায় জীবিত হয়ে ফিরে যেতে হবে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৯১)

৮. দোয়ার আগে : ফাদালাহ ইবনে উবায়দ (রা.) থেকে বর্ণিত, একদা রাসুলুল্লাহ (সা.) এক ব্যক্তিকে নামাজের মধ্যে দোয়ার সময় আল্লাহর বড়ত্ব ও গুণাবলি বর্ণনা এবং নবী (সা.)-এর প্রতি দরুদ পাঠ করতে শুনলেন না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, এই ব্যক্তি তাড়াহুড়া করেছে। অতঃপর তিনি ওই ব্যক্তিকে অথবা অন্য কাউকে বলেন, ‘তোমাদের কেউ সালাত আদায়কালে যেন সর্বপ্রথম তাঁর প্রভুর মহত্ব ও প্রশংসা বর্ণনা করে এবং পরে নবী (সা.)-এর ওপর দরুদ পাঠ করে, অতঃপর ইচ্ছানুযায়ী দোয়া করে।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ১৪৮১)

৯. ফরজ নামাজের পর : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আল-হামদুলিল্লাহ এবং ৩৩ বার আল্লাহু আকবার পাঠ করবে; এগুলো মিলে ৯৯ বার হয়। শততম বারে সে বলবে, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তিনি এক ও অদ্বিতীয়। সব রাজত্ব ও সব প্রশংসা তাঁর জন্য। তিনি সর্ববিষয়ে সক্ষম। তবে আল্লাহ তার পাপগুলো ক্ষমা করে দেবেন—যদিও তা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয়। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৫৯৭)

১০. খুতবার শুরুতে : আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের বিয়ের খুতবা শিক্ষা দিয়েছেন—‘সমস্ত প্রশংসা এক আল্লাহর জন্যই। আমরা তাঁর কাছে সাহায্য চাই, তাঁর কাছে ক্ষমা চাই এবং তাঁর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি।...’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ২১১৮)

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –