• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
যুদ্ধের অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয় হলে বিশ্ব রক্ষা পেত- প্রধানমন্ত্রী দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড মেডিকেল কলেজের ক্লাস অনলাইনে নেয়ার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘গণতান্ত্রিক রীতিনীতি না মানলে জনগণই বিএনপিকে প্রতিহত করবে’ লালমনিরহাটে হত্যা মামলায় বিএনপির দুই নেতা কারাগারে

দুপুরে বিশ্রাম নেওয়ার বিধান

প্রকাশিত: ২২ অক্টোবর ২০২১  

দুপুরে বিশ্রাম নেওয়া উত্তম। এতে ক্লান্তি দূর হয়। বিভিন্ন হাদিসে রাসুল (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম থেকে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। এটা আরবীয় সংস্কৃতির অংশ। তবে এটাকে সুন্নত বলা উচিত নয়। যদিও রাসুল (সা.) বলেন, তোমরা দুপুরে বিশ্রাম নাও। কেননা শয়তান দুপুরে বিশ্রাম নেয় না। (সিলসিলাতুল আহাদিসিস সহিহাহ, হাদিস : ১৬৪৭; সহিহুল জামে, হাদিস : ৪৪৩১)

আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ভাতঘুম অর্থাৎ ২০-৩০ মিনিটের জন্য তন্দ্রায় আচ্ছন্ন হওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এতে স্মৃতিশক্তি যেমন উন্নত হয়, তেমনি মনমেজাজও বেশ চনমনে হয়। কিন্তু দিনে অতিরিক্ত ঘুম স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। তবে রাতের ঘুম ভালো হওয়া চাই। পূর্ণবয়স্ক মানুষের জন্য রাতে সাত-আট ঘণ্টা আর শিশুদের জন্য ১১-১৩ ঘণ্টা সুস্থ জীবনধারার পেছনে বেশ জরুরি।

দিবানিদ্রা বা দ্বিপ্রহরের ঘুম সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি নবী (সা.)-এর সঙ্গে নাজদের দিকে কোনো এক যুদ্ধে বের হয়েছিলেন। নবী (সা.) ফিরে এলে তিনিও তাঁর সঙ্গে ফিরে এলেন। তাঁরা যখন কণ্টকময় বৃক্ষরাজিতে আবৃত এক উপত্যকায় উপস্থিত হলেন। তখন তাঁদের দিবা বিশ্রামের সময় এলো। রাসুল (সা.) সেখানে অবতরণ করেন। লোকেরা ছায়ার আশ্রয়ে বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ল। রাসুল (সা.) একটি বাবলাগাছের নিচে অবতরণ করেন এবং তাতে তাঁর তরবারি ঝুলিয়ে রাখেন। অতঃপর আমরা সবাই ঘুমিয়ে পড়লাম। হঠাৎ একসময় রাসুল (সা.) আমাদের ডাকতে লাগলেন। দেখলাম তাঁর পাশে একজন গ্রাম্য আরব। তিনি বলেন, আমার নিদ্রাবস্থায় এই ব্যক্তি আমার তরবারি আমার ওপর বের করে ধরেছে। জেগে উঠে দেখতে পেলাম যে তার হাতে খোলা তরবারি। সে বলল, আমার থেকে তোমাকে কে রক্ষা করবে, আমি বললাম, আল্লাহ! আল্লাহ! তিনবার। তার পরও তিনি কোনো প্রতিশোধ নেননি, অথচ সে সেখানে বসে আছে। (বুখারি, হাদিস : ২৯১০)

অন্য হাদিসে এসেছে, আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উম্মু সুলাইমের বোন উম্মু হারাম বিনতু মিলকান (রা.) বলেন, একদা রাসুল (সা.) তাদের কাছে দুপুরে বিশ্রাম নিলেন। অতঃপর তিনি হাসতে হাসতে ঘুম থেকে জেগে উঠলেন। উম্মু হারাম (রা.) বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল (সা.), আপনার হাসির কারণ কী? তিনি বলেন, আমি স্বপ্নে দেখলাম, (আমার উম্মতের) কিছু লোক এই সাগর পাড়ি দিচ্ছে। যেন তারা রাজার মতো সিংহাসনে বসে আছে। উম্মু হারাম বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আমার জন্য দোয়া করুন, যেন আমি তাদের দলভুক্ত হই। তিনি বলেন, তুমি তাদের দলভুক্ত হবে। উম্মু হারাম বলেন, তিনি আবারও ঘুমালেন এবং হাসতে হাসতে জেগে উঠলেন। তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল, আপনি হাসলেন কেন? তিনি আবারও একই কথার পুনরাবৃত্তি করলেন। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আমার জন্য দোয়া করুন, যেন আল্লাহ আমাকে তাদের দলভুক্ত করেন। তিনি বলেন, তুমি তাদের প্রথম দলে থাকবে। আনাস (রা.) বলেন, পরবর্তী সময়ে উবাদাহ ইবনুস সামিত (রা.) তাকে বিবাহ করেন। অতঃপর তিনি নৌ-যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং উম্মু হারামকেও সঙ্গে নেন। যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তনকালে উম্মু হারামকে একটি খচ্চর বাহন হিসেবে দেওয়া হয়। খচ্চরটিতে আরোহণ করলে সেটা তাকে পিঠ থেকে ফেলে দেওয়ায় তার ঘাড় ভেঙে যায়, ফলে তিনি মারা যান। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৪৯০)

হাদিসে বর্ণিত দুপুরের ঘুমের সময় কখন—তার ব্যাখ্যা নিয়ে আলেমদের মত-পার্থক্য আছে। একদল আলেম মনে করেন, এই ঘুমের সময় দুপুরের খাবারের পর। আর অন্যদল ইসলামী গবেষক মনে করেন, যখন রোদ প্রখর হয়ে যেত তখন দুপুরের আগে রাসুল (সা.) কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতেন। সেটি খাবারের পর নয়। মহান আল্লাহ সর্বাধিক অবগত।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –