• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা ইতিহাসে অনন্য: রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা হস্ত‌ক্ষেপ করবে না: ওবায়দুল কাদের লালমনিরহাটে যুবলীগ কর্মীর পায়ের রগ কাটলেন যুবদল নেতা বাসার ছাদ থেকে পড়ে যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু ঠাকুরগাঁওয়ে ঈদ-নববর্ষে ১০ জন নিহত, আহত ২ শতাধিক

আমাদের মহাকাশযান কতটা উন্নত?

প্রকাশিত: ২৩ নভেম্বর ২০১৮  

বর্তমান বিজ্ঞান মানব জাতির জন্য অনেক কিছুর খোঁজ এবং আবিষ্কার করেছে। যেগুলো আমাদের মানব জীবনকে অনেক বেশি সহজ এবং গতিশীল করেছে। কিন্তু এখন যদি আমি আপনাদের প্রশ্ন করি আমাদের মানব ইতিহাসের সব থেকে মাহাত্ম্যপূর্ণ আবিষ্কার কি ছিল? তাহলে আপনি কি বলবেন আগুন, লোহা, চাকা, বাস্প ইঞ্জিন, ট্রেন, গাড়ি, এরোপ্লেন, কম্পিউটার নাকি স্পেস স্যাটেল? হ্যাঁ এই সমস্ত জিনিস মানবজাতির জন্য মহান আবিষ্কার কিন্তু আমাদের এই সম্পূর্ণ মানব সভ্যতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য এই আবিষ্কার কি যথেষ্ঠ?

আমরা এই পৃথিবীর একমাত্র বুদ্ধিমান জীব। কিন্তু আমরা জানি এই সম্পূর্ণ মানব সভ্যতার বিনাশ অদূর ভবিষ্যতে যে কোনো কারণে হতে পারে। সেটা কোন আস্ট্ররাইটের আঘাতেই হোক বা কোন পরমাণু যুদ্ধের কারণে হোক বা মহাশূন্যে থেকে আসা অন্য যেকোনো কারণে হতে পারে। এর জন্য আমাদের মানব সভ্যতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য কোন গ্রহে বসতি স্থাপন করতেই হবে। কিন্তু মহাশূন্যের অন্য কোনো গ্রহে বসতি স্থাপনের জন্য যে বাহন আমাদের চাই সেটা আবিষ্কার হওয়াই এখনও বাকি আছে। আর এটাই হল স্পেস প্লেন যেটাকে মানুষ এক গ্রহ থেকে অন্য গ্রহে যাওয়ার জন্য ব্যবহার করবে। তাহলে আজকের এই আলোচনা থেকে আমরা এটাই জানবো যে মানুষ স্পেস প্লেনের বিকাশে কতটা পথ অতিক্রম করতে পেরেছে।

ধরি, চাঁদ এবং মঙ্গল গ্রহে মানব জাতি বসতি স্থাপন করে নিয়েছে। মনে করুন আপনি একটি স্পেস প্লেনে বসে আছেন। আর স্পেস প্লেন খুব সহজেই পৃথিবীর সব আকর্ষণ শক্তিকে পার করে স্পেসে চলে যায়। কয়েক ঘণ্টা পরে এই স্পেস প্লেন চাদে অথবা মঙ্গলে ল্যান্ড করল এবং ওইখান থেকে কাজ শেষ হওয়ার পর স্পেস প্লেন আবার আপনাকে নিয়ে এই পৃথিবীতে সুরক্ষিতভাবে ল্যান্ড করল। আর এই যাতায়াতের খরচও খুবই কম ছিল। এইসব ভাবতে গেলে সাইন্স ফিকশন মুভির মতো লাগছে। কিন্তু এটাই হবে আমাদের মানবজাতির জন্য সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। কারণ একটি সময় আসবে যখন এই পৃথিবী বসবাস উপযুক্ত থাকবে না তখন এই স্পেস প্লেনই আমাদেরকে রক্ষা করবে।

এখন আপনি হয়ত ভাবছেন এখনকার স্পেস স্যাটেলও তো স্পেস প্লেনই। হ্যা! স্পেস স্যাটেলও এক প্রকার স্পেস প্লেন। কিন্তু এর মধ্যে ওই সমস্ত সুযোগ সুবিধা নেই যেগুলো ভবিষ্যতের স্পেস প্লেনে হবে। আপনাদের বলে দিই আমাদের বর্তমান স্পেস স্যাটেল রকেট বুস্টারকে ছাড়া নিজে একা স্পেসে যেতে পারে না। আমরা জানি এটার লঞ্চের সময় দুইটি বড় বুস্টার রকেট এবং একটি বিশাল ফিউল ট্যাঙ্কের প্রয়োজন হয়। এর ফলে এই স্পেস মিশনের খরচও হয় কোটি কোটি টাকা। তাও আবার শুধু মাত্র একবার উঠতেই। আর আমাদের বর্তমান স্পেস স্যাতেল অন্য গ্রহে গিয়ে ল্যান্ড করতে পারে না। কারণ এই স্পেস স্যাটেলকে ল্যান্ড করার জন্য রানওয়ে প্রয়োজন হয় আর যদি কোনো কারণে এই স্পেস স্যাটেল ল্যান্ড করেও যায় তাহলে ওই গ্রহটিকে দ্বিতীয়বার টেক আউট করতে পারবে না।

এছাড়াও বর্তমানে স্পেস স্যাটেল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে থাকে। যার কারণে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে রি এন্ট্রি করার সময় সামান্য কোন প্রকার ভুল ত্রুটি হলেই বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করতে পারে না এবং যার ফলে সেই স্পেস স্যাটেলে আগুন লেগে যায়। এমন একটি দুর্ঘটনার কারণে ভারতের প্রথম মহাকাশ যাত্রী কল্পনা চাওউলার মৃত্যু হয়েছিল। এর জন্য আমাদের এমন একটি স্পেস প্লেন চায় যেটা নিজেই উড়তে পারবে এবং ল্যান্ড করতে পারবে। এমন সময় মনে পড়ে ফাইটার প্লেনের কথা। এটাও তো নিজে নিজেই উড়তে পারে এবং ল্যান্ড করতে পারে। কিন্তু এটা স্পেস প্ল্যান নয়। কারণ প্রতিটি প্লেনের উপরে যাওয়ার একটি নির্দিষ্ট সীমা আছে। যেটাকে কফিন কনা বলা হয়ে থাকে।

সেই সাথে এই সমস্ত প্লেনকে উড়ার জন্য বায়ুমন্ডলের হওয়ার দরকার পড়ে। এছাড়াও এই সমস্ত বিমান এর জ্বালানিকে বার্ন হওয়ার জন্য অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। যেটা স্পেসে নেই। এর জন্য আজকের সব থেকে আধুনিক প্যাসেঞ্জার প্লেন ও সব থেকে অধিক ১২ কিলোমিটার পর্যন্ত ওপরে যেতে পারে। এবং ফাইটার প্লেন মিগ-২৫ ৩৫ কিলোমিটার পর্যন্তই উপরে যেতে পারে। কিন্তু স্পেস এর শুরু ১০০ কিলোমিটার ওপর থেকে। এর মানে আমাদের এমন একটি বাহন চায় ১০০ কিলোমিটার থেকেও ওপরে যেতে পারবে এবং বিনা কোন বায়ুমন্ডলে মানে সম্পূর্ণ ভ্যাকিউম অবস্থাতেও দ্রুতগতিতে চলতে পারবে।

এমনি দুইটি স্পেস শিপ এখন পর্যন্ত তৈরি করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে এক্স ১৫ আর অপরটি স্পেস শিপ ১। কিন্তু এই সকল স্পেস শিপকে অন্য কোনো বড় প্লেন এর উপরে নিয়ে আকাশের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ওপরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে যাওয়ার পর এই স্পেস প্লেনকে ছেড়ে দেয়া হয়। তখন সেটা তার রকেটের ব্যবহার করে। এক্স ১৫ প্রায় ১০৭ কিলোমিটার এর স্পেস শিপ ১ প্রায় ১১২ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পেরেছে। কিন্তু এগুলোও স্পেস প্লেন নয়।

কারণ এগুলোকে ল্যান্ড করার জন্য চাই রানওয়ে এবং সেই সাথে জ্বালানি শেষ হলে এগুলো অকেজো হয়ে যায়। নাসা ও আধুনিক স্পেস প্লেন তৈরি করতে চেষ্টা করছে কিন্তু সেগুলোও স্পেস প্লেন হবে না। কারণ আমাদের চাই এমন একটা বাহন যেগুলোকে ল্যান্ড করতে কোন প্রকার রানওয়ের দরকার পড়বে না। সেই সাথে জ্বালানি খরচ হবে খুবই কম। অথবা কোন প্রকার জ্বালানির খরচই হবে না। অথবা সেগুলো উড়ার জন্য না কোন প্রকার বায়ুমন্ডলের প্রয়োজন হবে না। আবার কোন ডানার ও প্রয়োজন হবে না আর সেই সাথে এর স্পীড হবে অনেক দ্রুত। আর এই সমস্ত জিনিস তখনি সফল হবে যখন মানুষ জেড ইঞ্জিন আর রকেটকে ছাড়া নতুন কোন ইঞ্জিন তৈরির চেষ্টা করবে। আর এটা হবে এন্টি গ্রাভিটি ইঞ্জিন। একদিন দিন আসবে যখন এটা সম্ভব হবে তখন আমাদের স্পেসশিপই না শুধু সর্ব প্রকার বাহন পৃথিবীর গ্রাভিটিকে ব্যবহার করবে উড়ার জন্য ।

তখন স্পেস শিপকে ওড়ার জন্য আর রকেটের দরকার পড়বে না। তখন এই সমস্ত অ্যান্টি গ্রাভিটি স্পেস শিপ আলাদা আলাদা গ্রাভিটির ব্যবহার করে মহাশুন্যে উড়তে পারবে এবং যেকোন গ্রহে ল্যান্ড করতে পারবে এবং সেই সাথে বিশাল আকারের স্পেস শিপ পৃথিবীতে তৈরি করা যাবে এবং পরে অ্যান্টি গ্রাভিটি ইঞ্জিনের সাহায্যে স্পেস এ নিয়ে যাওয়া যাবে।

আর যেগুলোর মধ্যে মানব বসতি স্থাপন করতে পারবে। যখন আমাদের সূর্য ধ্বংস হওয়ার কাছে চলে আসবে বা অন্য কোন কারণে আমাদের পৃথিবী বসবাসের উপযুক্ত থাকবে না তখন মানুষের দ্বারা তৈরি এই সমস্ত বিশাল স্পেস শিপই হবে মানুষের বসতি স্থাপনের একটি জায়গা। যেগুলো মহাশূন্যে ঘুরে বেড়াবে নতুন কোন পৃথিবীর মত গ্রহের খোঁজে। আর আমরা আমাদের পৃথিবীর মতো গ্রহের খোঁজ পাওয়ার পর যখন ওই গ্রহে যাব। আর যদি ওই গ্রহে কোন বুদ্ধিমান প্রাণী থাকে তাহলে সেই প্রাণীদের সাথে অনুমতি নিয়ে আর না হয় তাদের সাথে যুদ্ধ করে আমাদের মানব বসতি কি সেই গ্রহে পুনরায় স্থাপন করবো।

আজকের আলচনাটি সম্পূর্ণ স্যাইন্স ফিকশন মুভির মত লাগলেও এক সময় এ রকমটাই হবে। কিন্তু নির্দিষ্টভাবে ভবিষ্যতে কখন এটা হবে সেটা তো বলা অসম্ভব। বিজ্ঞান যেভাবে প্রগতি করছে তাতে এরকম এন্টি গ্রাভিটি স্পেস শিপ তৈরি করা অবশ্যই সম্ভব। আর বিজ্ঞানের এইটা নিয়ে জোর কদমে পরিশ্রম করে যাচ্ছে। আপনাদের কি মনে হয় বিজ্ঞান কি সফল হবে এই ধরনের ইঞ্জিন তৈরি করতে? যেটা কয়েক ঘন্টার মধ্যে মানুষকে মঙ্গল অথবা চাদে নিয়ে যেতে পারবে। আপনাদের কি মনে হয় এ সম্বন্ধে?

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –