• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা ইতিহাসে অনন্য: রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা হস্ত‌ক্ষেপ করবে না: ওবায়দুল কাদের লালমনিরহাটে যুবলীগ কর্মীর পায়ের রগ কাটলেন যুবদল নেতা বাসার ছাদ থেকে পড়ে যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু ঠাকুরগাঁওয়ে ঈদ-নববর্ষে ১০ জন নিহত, আহত ২ শতাধিক

ইসলামী ক্যালেন্ডারের চাহিদা ও মর্যাদা

প্রকাশিত: ১ জানুয়ারি ২০২১  

কালেন্ডার শুধু বর্ষপঞ্জি নয়, তা ঘরের শোভাবর্ধক ও ব্যক্তি-সংস্থার বার্তাবাহকও বটে। একটি নীরব প্রচারমাধ্যম। ক্যালেন্ডারের বুদ্ধিদীপ্ত ব্যবহারে পিছিয়ে নেই ধর্মীয় ধারার প্রতিষ্ঠান, সংগঠন ও সংস্থাগুলো। ক্যালেন্ডারের মাধ্যমে তারা দ্বিন ইসলামের বাণী ও নিজস্ব মতবাদ প্রচার করে, তুলে ধরে ইসলামী ইতিহাসের সোনালি অধ্যায়। ফলে বর্ষপঞ্জি হয়ে ওঠে ইসলামী স্মারক। ধর্মীয় রীতি-নীতি ও ইসলামী মূল্যবোধ বজায় রেখে বর্ষপঞ্জি তৈরিতে সবচেয়ে এগিয়ে আছে ইসলামী ধারার ব্যাংক ও বীমা সংস্থা, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংস্থা, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া ধার্মিক ব্যক্তিরাও তাঁদের প্রতিষ্ঠানের জন্য ইসলামী শিল্প-সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দিয়ে ক্যালেন্ডার তৈরি করেন।

ইসলামের স্মারক হিসেবে ক্যালেন্ডার

ইসলামী স্মারক বা ইসলাম প্রচারের মাধ্যম হিসেবে ক্যালেন্ডারের ব্যবহারকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখেন ইসলামী চিন্তাবিদরা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজের অধ্যাপক ড. আহমদ আবুল কালাম বলেন, “ইসলামের স্মারক হিসেবে ক্যালেন্ডারের ব্যবহার মুসলিম সমাজের ইতিবাচক মনোভাবেরই অংশ। মুমিন যেকোনো জিনিসের ইতিবাচক ও ফলদায়ক ব্যবহারে বিশ্বাসী। মহানবী (সা.)-এর জীবনী পাঠ করলে দেখা যায়, তিনি তাঁর রাষ্ট্রীয় সিলমোহরে ‘মুহাম্মদ’-এর সঙ্গে ‘রাসুলুল্লাহ’ যোগ করেছিলেন। যেন তা দ্বিন প্রচারের মাধ্যম হয়। দ্বিন প্রচারে তিনি সমকালীন সব মাধ্যমই ব্যবহার করেছিলেন। সৌদি আরবের বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে দেখা যায়, সাইনবোর্ডে লেখা ডানে চলুন। এর নিচেই লেখা থাকে আল্লাহকে স্মরণ করুন। এটিই মুসলিম সমাজের বৈশিষ্ট্য যে তাদের জাগতিক উপায়-উপকরণকে ঈমান ও ইসলামের দীপ্তি প্রকাশ পায়।” তিনি আরো বলেন, ‘মহান আল্লাহ বলেছেন, তোমরা স্মরণ করো, নিশ্চয়ই স্মরণ মুমিনকে উপকৃত করে। আর ক্যালেন্ডারের মাধ্যমে মুসলিম সমাজকে বহু বিষয় স্মরণ করিয়ে দেওয়া সম্ভব। ক্যালেন্ডারে থাকতে পারে ঈমান ও বিশ্বাসের কথা, ইসলামের বিধি-বিধানের কথা, ইসলামের ইতিহাসের কথা, মুসলিম মনীষীদের কথা, অমর ইসলামী সাহিত্যের কথা, বহু বিষয় সেখানে আসতে পারে। যেমন—ছয় পৃষ্ঠার একটি ক্যালেন্ডারে হাদিসশাস্ত্রের বিশুদ্ধতম ছয়টি গ্রন্থ ও তাদের সংকলকদের পরিচিতি আসতে পারে। এই ছয়টি পৃষ্ঠা থেকে মহান মনীষী ও তাঁদের অবদান সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যাবে।’

বাংলাদেশে ধর্মীয় রীতি মেনে ক্যালেন্ডার

বাংলাদেশে প্রতিবছর ইসলামী রীতি-নীতি মেনে ঠিক কী পরিমাণ ক্যালেন্ডার হয় তার সঠিক পরিসংখ্যান তুলে ধরা প্রায় অসম্ভব। তবে তার পরিমাণ মোট ক্যালেন্ডারের এক-তৃতীয়াংশের কম নয় বলে বিশ্বাস করেন ইসলামী ধারার প্রিন্টিং ব্যবসায়ীরা। ইসলামী ধারার অন্যতম প্রিন্টিং প্রতিষ্ঠান ‘প্রিন্ট মিডিয়া’র কর্ণধার শাহ ইফতেখার তারিক জানান, তাঁর প্রতিষ্ঠান প্রতিবছর আড়াই শ থেকে তিন শ প্রতিষ্ঠানের ক্যালেন্ডার তৈরি করে। আর তারা এক হাজার থেকে ১০ হাজার পর্যন্ত ক্যালেন্ডার তৈরি করে থাকে। এতে প্রায় তিন লাখ কপি ক্যালেন্ডার তৈরি করে প্রিন্ট মিডিয়া। এমন অসংখ্য প্রিন্টিং প্রতিষ্ঠান রয়েছে সারা দেশে। সুতরাং ইসলামী ধারার ক্যালেন্ডারের সঠিক পরিমাণ নির্ণয় করা প্রায় অসম্ভব।

বাড়ছে সচেতনতা

ক্যালেন্ডার তৈরিতে ইসলামী মূল্যবোধ রক্ষার প্রতি যত্নবান হচ্ছেন তাদের গ্রাহক। ফলে বড় হচ্ছে ইসলামী ক্যালেন্ডারের বাজার। শাহ ইফতেখার তারিক জানান, ব্যাবসায়িক স্বার্থে হলেও গ্রাহকদের অনেকেই ইসলামী মূল্যবোধবিরোধী বিষয়গুলো পরিহার করছেন। যেহেতু ইসলামী মূল্যবোধ ও বিশ্বাস বিরোধী কোনো বিষয় ক্যালেন্ডারে থাকলে অনেকেই তা ঘরে রাখতে চান না। তাই ব্যাবসায়িক চিন্তা থেকেই তাঁরা এমন ক্যালেন্ডার করছেন না। হ্যাঁ, তাঁরা হয়তো ইসলামী সিম্বল দিয়ে ক্যালেন্ডার করছেন না। তবে ইসলামের নিদর্শন মাথায় রেখে ক্যালেন্ডার করছেন। এটিও এক ধরনের সচেতনতা।

বাড়েনি বুদ্ধিদীপ্ত ব্যবহার

শাহ ইফতেখার তারিকের ভাষ্য মতে, যাঁরা ক্যালেন্ডারে ইসলামী সিম্বল বা নিদর্শন, যেমন—মসজিদ, ক্যালিগ্রাফি বা ঐতিহাসিক স্থান ইত্যাদির ব্যবহার করছেন, তাঁদের বেশির ভাগই ধর্মীয় আবেগের জায়গা থেকে এটি করে। দ্বিন প্রচারের মাধ্যম বা ধর্মীয় স্মারক হিসেবে ক্যালেন্ডারের বুদ্ধিদীপ্ত ব্যবহার তেমন বাড়েনি। হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক সংগঠনই শুধু সুচিন্তিতভাবে ক্যালেন্ডার তৈরি করে। অনেকে ইসলামের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন স্থান, প্রতিষ্ঠান ও স্মারকের বিবরণসহ ছবি ব্যবহার করে। অন্যরা নান্দনিকতার ওপরই গুরুত্ব দেয়। নান্দনিক মসজিদ ও ক্যালিগ্রাফির প্রতিই সাধারণ গ্রাহকের আগ্রহ বেশি।

শিল্প-সংস্কৃতির বাহক ক্যালেন্ডার

মাওলানা বশির মেসবাহ বাংলাদেশের অন্যতম বনেদি ক্যালিগ্রাফি শিল্পী। ‘সালসাবীল’ নামে একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন। তিনি মনে করেন, ক্যালেন্ডার ইসলামী শিল্প-সংস্কৃতির অন্যতম বাহক এবং দ্বিন প্রচারের মাধ্যম হতে পারে। তাঁর ভাষায়, ‘ক্যালেন্ডার দ্বিন প্রচারে বড় ভূমিকা রাখতে পারে, ইসলামী শিল্প-সংস্কৃতির সঙ্গে সাধারণ মানুষকে পরিচিত করে তুলতে অবদান রাখতে পারে। যে জিনিসটি ১২ মাস মানুষের চোখের সামনে ঝোলে, নিশ্চয়ই মানুষের মনের ওপর তার প্রভাব কম নয়।’

ক্যালিগ্রাফি ব্যবহারে সতর্কতা আবশ্যক

ক্যালেন্ডারে ক্যালিগ্রাফির ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়। বিশেষত ক্যালেন্ডারে কোরআনের আয়াত ও হাদিস ব্যবহারে উৎসাহী অনেকেই। তাদের আবেগ ও অনুভূতি অবশ্যই প্রশংসনীয়। তবে ক্যালেন্ডারের অসচেতন ব্যবহারের কারণে তা কখনো কখনো পাপের কারণ হয়। কেননা ক্যালেন্ডারে কোরআনের আয়াত ও হাদিস ব্যবহার করার পরও বহু ক্ষেত্রে যথানিয়মে সংরক্ষণ করা না হয়। কোরআন ও হাদিসের সম্মান রক্ষার্থে ক্যালেন্ডারে তা ব্যবহার এড়িয়ে যাওয়া প্রয়োজন। বিকল্প হিসেবে মুসলিম মনীষীদের বাণী ও শিক্ষণীয় নানা বিষয় ক্যালিগ্রাফির বিষয় হিসেবে উপস্থাপিত হতে পারে বলে মত দেন শিল্পী বশির মেসবাহ।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –