• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
যুদ্ধের অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয় হলে বিশ্ব রক্ষা পেত- প্রধানমন্ত্রী দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড মেডিকেল কলেজের ক্লাস অনলাইনে নেয়ার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘গণতান্ত্রিক রীতিনীতি না মানলে জনগণই বিএনপিকে প্রতিহত করবে’ লালমনিরহাটে হত্যা মামলায় বিএনপির দুই নেতা কারাগারে

ইসলামে ওজুর বিধান ও গুরুত্ব (পর্ব-১)

প্রকাশিত: ১০ নভেম্বর ২০১৮  

আমরা মহান রাব্বুল আলামীন আল্লাহর প্রশংসা করছি; যিনি আপনার জন্য হেদায়েতের পথকে সহজ করে দিয়েছেন, আপনার অন্তরকে খুলে দিয়েছেন।

মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন আমাদেরকে ও আপনাকে তার আনুগত্যের ওপর অবিচল রাখেন। আপন ধর্মীয় বিষয়গুলো শেখার জন্য আপনার উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন আপনাকে কল্যাণকর ইলম দান করেন।

ওজু :

ইসলামের বিধান অনুসারে, ওজু হলো দেহের অঙ্গ-প্রতঙ্গ ধৌত করার মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জনের একটি পন্থা। পবিত্রতা অর্জনের জন্য ওজু করা হয়। শরীয়তের বিধান মতে পবিত্র পানি দিয়ে শরীরের কতিপয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধোয়াকে ওজু বলে।

শরীয়তে ওজুর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। দেহ ও পরিধেয় কাপড়ের পবিত্রতা অর্জনকে বলে তাহারাত্‌। ওজু বা গোসলের মাধ্যমে তাহারাত্‌ অর্জন করা যায়।

হজরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেন, ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ধর্মের অর্ধেক।’ (সহীহ মুসলিম)

এসম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারীকে ভালোবাসেন এবং যারা পবিত্র থাকে তহাদিগকেও ভালবাসেন।’ (সূরা: আল- বাকারা, আয়াত: ২২২)

পবিত্র কোরআন শরীফ পড়তে ও স্পর্শ করতেও ওজু করতে হয়। পবিত্র কোরআনে আছে, ‘যাহারা পূত-পবিত্র তারা ব্যতীত অন্য কেউ তা স্পর্শ করো না।’ (সূরা: ওয়াক্কিয়াহ‌, আয়াত:৭৯)

ওজুর নিয়মাবলী:

ওজু করার দুটো পদ্ধতি রয়েছে। প্রথমটি হচ্ছে ফরজ পদ্ধতি এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে সুন্নাত পদ্ধতি। নিচে এগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

ফরজ পদ্ধতি:

 

ওজুর ফরজ মূলত ৪টি। নিচে উল্লেখ করা হলো:

(১) সমস্ত মুখমণ্ডল কপালের উপরিভাগের চুলের গোড়া হইতে থুতনী পর্যন্ত, এক কানের লতি থেকে অন্য কানের লতি পর্যন্ত ধৌত করা।

(২) উভয় হাত কনুইসহ ধৌত করা।

(৩) চারভাগের একভাগ মাথা মাসেহ করা (ঘন দাঁড়ি থাকলে ভালোভাবে আঙ্গুল দ্বারা খেলাল করা)।

(৪) উভয় পা টাখনু গিরা সহকারে ধৌত করা।

পূর্বোক্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে ‘একবার’ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে- সংশ্লিষ্ট অঙ্গের কোনো অংশ যেন ধোয়া থেকে বাদ না পড়ে।

এই ক্রমধারা বজায় রাখা। অর্থাৎ প্রথমে মুখমণ্ডল ধৌত করবে, এরপর হাতদ্বয় ধৌত করবে, এরপর মাথা মাসেহ করবে, এরপর পা দুইটি ধৌত করবে। কেননা নবী (সা.) এই ক্রমধারা বজায় রেখে ওজু করেছেন।

ওজুর মধ্যে পরম্পরা রক্ষা করা। অর্থাৎ উল্লেখিত অঙ্গগুলো ধোয়ার ক্ষেত্রে পরম্পরা রক্ষা করা; যাতে করে একটি অঙ্গ ধোয়ার পর অপর অঙ্গ ধোয়ার মাঝখানে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি দীর্ঘ সময়ের বিরতি না হয়। বরং এক অঙ্গের পর অপর অঙ্গ ধারাবাহিকভাবে ধৌত করা।

এগুলো হচ্ছে ওজুর ফরজ কাজ; ওজু শুদ্ধ হওয়ার জন্য যে কাজগুলো অবশ্যই করতে হবে। এ কাজগুলো ওজুর ফরজ হওয়ার পক্ষে কোরআনিক দলিল হচ্ছে আল্লাহর বাণী:

‘হে মুমিনগণ! যখন তোমরা সালাতের জন্য দাঁড়াতে চাও তখন তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাতগুলো কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নাও এবং তোমাদের মাথায় মাসেহ কর এবং পায়ের টাখনু পর্যন্ত ধুয়ে নাও; এবং যদি তোমরা জুনুবী অবস্থায় থাক, তবে বিশেষভাবে পবিত্র হবে। আর যদি তোমরা অসুস্থ হও বা সফরে থাক বা তোমাদের কেউ পায়খানা থেকে আসে, বা তোমরা স্ত্রী সহবাস কর এবং পানি না পাও তবে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করবে; তা দ্বারা মুখমণ্ডল ও হাত মাসেহ করবে। আল্লাহ তোমাদের ওপর কোনো সংকীর্ণতা করতে চান না; বরং তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান এবং তোমাদের প্রতি তার নেয়ামত সম্পূর্ণ করতে চান, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর।’ (সূরা: মায়েদা, আয়াত: ৬)

সুন্নাত পদ্ধতি:

সুন্নাত পদ্ধতি হচ্ছে সেই পদ্ধতি যা আমাদের প্রিয়নবী মুহাম্মাদ (সা.) পালন করতেন। নবীজী (সা.) তার প্রাত্যহিক জীবনে এই পদ্ধতিতে ওজু সম্পন্ন করতেন।

ওজুর সুন্নাত মূলত ১৪টি। নিচে এগুলোর উল্লেখ করা হলো:

১.নিয়ত করা, ২.বিসমিল্লাহ বলে ওজু শুরু করা, ৩.হাতের আঙ্গুল খিলাল করা, ৪.উভয় হাত কবজি পর্যন্ত ধৌত করা,৫.মিসওয়াক করা, ৬.তিনবার কুলি করা, ৭.তিনবার নাকে পানি দেয়া, ৮.সম্পূর্ন মুখ মণ্ডল তিনবার ধৌত করা, ৯.উভয় হাতের কনুইসহ তিনবার ধৌত করা, ১০.সমস্ত মাথা একবার মাসেহ করা, ১১.টাখনু সহ উভয় পা তিবার ধৌত করা, ১২.পায়ের আঙ্গুল খিলাল করা, ১৩.এক অঙ্গ শুকানোর পূর্বে অন্য অঙ্গ ধৌত করা, ১৪.ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ওজুর কাজ গুলো সম্পূর্ন করা।

আবদুল্লাহ আমর ইবনে ইয়াহইয়া আল-মাযেনী হতে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি আবদুল্লাহ ইবনে যায়েদ (রা.)-কে বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) কিভাবে ওজু করতেন তা কি আমাকে দেখাতে পারেন? জবাবে আবদুল্লাহ ইবনে যায়েদ (রা.) বলেন, হ্যাঁ। অতঃপর তিনি ওজুর পানি চেয়ে নিয়ে তা নিজের দুই হাতে ঢালেন এবং তা ধৌত করলেন, অতঃপর তিনবার পানি নিয়ে কুলি করলেন এবং নাকে পানি দিয়ে নাক ঝাড়লেন । অতঃপর তিনি তার মুখমন্ডল তিনবার ধৌত করেন, অতঃপর উভয় হাত কনুই পর্যস্ত দুইবার ধৌত করেন, অতঃপর উভয় হাত দ্বারা মাথার সামনের ও পিছনের দিক মাসেহ করলেন। এই মাসেহ তিনি মস্তকের সম্মুখ ভাগ হতে আরাম্ভ করে- উভয় হাত মাথার পশ্চাঁদভাগ পর্যন্ত নিলেন। পরে যে স্থান হতে মাসেহ শুরু করেন, উভয় হস্ত সেখানে ফিরিয়ে আনেন। অতঃপর তিনি দুই পা ধৌত করেন। (সহীহ বুখারি, হাদীস নং:১৮৬, আবু দাউদ,হাদীস নং:১১৮(ইফা), মুসলিম, তিরমিযী, নাসাঈ- ইবনু মাজাহ)

মূসা’দ্দাদ আবদুল্লাহ ইবনু যায়েদ ইবনু আছেম হতেও উপরোক্ত হাদীছ বর্ণিত আছে। তিনি বলেছেন, ‘অতঃপর তিনি কুলি করেন এবং নাকে পানি দেন- একই হাতের দ্বারা অর্থাৎ এক অঞ্জলি পানি দ্বারা একই সঙ্গে কুলিও করেন এবং নাকেও পানি দেন। তিনি এইরূপ তিনবার করেন।’ (আবু দাউদ: ১১৩,১১৯(ইফা))

মাহমুদ মিকদাদ ইবনু মাদীকারাব (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে ওজু করতে দেখেছি। ওজু করতে করতে যখন মাথা মাসেহ পর্যন্ত পৌছালেন, তখন তিনি এভাবে মাথা মাসেহ করেন যে, উভয় হাতের তালু মাথার সামনের অংশে স্থাপন করে তা মাথার শেষ ভাগ পর্যন্ত নেন অতঃপর তিনি পেছনের দিক হতে সামনের দিকে তা শুরুর স্থানে ফিরিয়ে আনেন-(ঐ) (আবু দাউদ, হাদীস ন: ১২২)

আজকের আলোচনায় ইসলামে ওজুর বিধান এবং গুরুত্ব আলোকপাত করা হয়েছে। এখানে ওজু কি, এর পরিচয়, পবিত্র কোরআন ও হাদিসে ওজু সম্পর্কে বিভিন্ন আয়াত ও বাণী, ওজুর ফরজ, ওজুর সুন্নাত ইত্যাদি সম্পর্কে তুলে ধরা হয়েছে।

ইসলামে ওজুর বিধান ও গুরুত্ব (পর্ব-২) এ ওজু মাকরুহ হওয়ার কারণ, ওজু ভঙ্গের কারণ এবং এর মাসাআলা এছাড়াও ওজু শুরু করার এবং শেষ করার দোয়া ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। ওজু সম্পর্কে যাবতীয় বিষয় জানতে পরবর্তী নিবন্ধের জন্য অপেক্ষা করুন।

মহান রাব্বুল আলামীন আল্লাহ পাক আমাদের সকলকেই হেদায়েত ও নেক হায়াত দান করুন। আল্লাহুম্মা আমিন।

(চলবে...)

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –