• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

ইসলামের দৃষ্টিতে তালাক দেওয়ার সর্বোত্তম পদ্ধতি

প্রকাশিত: ১৭ ডিসেম্বর ২০২১  

দাম্পত্য জীবনে সুখ সকলেরই কাম্য। ইসলাম বিবাহের মাধ্যমে প্রেম-প্রীতি, ভালোবাসার একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরিতে সকলকে উৎসাহ প্রদান করে। দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে যখন ভারসাম্যহীন, পারস্পরিক মনোমলিন্যতা ও সাংসারিক তিক্ততা দেখা দেয়; তখন একসঙ্গে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বসবাস অসম্ভব হয়ে পড়ে।

প্রতিকূল অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য বিবাহ চুক্তির অবসান ঘটানোর সুযোগ ইসলাম রেখেছে। ইসলামে তালাকের ব্যবস্থা রাখলেও তালাক প্রদানে উৎসাহিত করা হয়নি। এটা নিরুপায়ের মাঝে উপায় হিসেবে গণ্য।

হাদিস শরিফে রয়েছে, ‘আল্লাহর কাছে বৈধ কাজগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ঘৃণিত কাজ হলো তালাক। ’ (আবু দাউদ : হাদিস : ২১৭৮)

এর পরও তালাক দেওয়া ছাড়া অন্য কোনো পথ খোলা না থাকলে ইসলামী শরিয়ত সমর্থিত পদ্ধতি অনুসরণ করে তালাক দেবে। এ পদ্ধতি অনুসরণ করার অনেক সুফল রয়েছে।

তালাক দেওয়ার সর্বোত্তম পদ্ধতি

১. স্ত্রী যখন হায়েজ (মাসিক ঋতুস্রাব) থেকে পবিত্র হবে, তখন সুস্পষ্ট শব্দে তালাক দেওয়া হচ্ছে সর্বোত্তম পদ্ধতি। (হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগা : ২/১৩৯)

২. স্বামী সুস্পষ্ট শব্দে এক তালাক দেবে। এরপর স্বামী যদি স্ত্রীকে ইদ্দত (তিন ঋতুস্রাব বা তিন মাস) চলা অবস্থায় ফিরিয়ে নেয় তাহলে ভালো। পুনরায় স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক কায়েম হয়ে যাবে। নতুন করে বিবাহের প্রয়োজন হবে না। আর যদি ইদ্দত চলাকালে স্বামী স্ত্রীকে ফিরিয়ে না নেয়, তাহলে ইদ্দত শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।

ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী এক তালাক দেওয়া হয়, তাহলে এ আশা পূরণের সুযোগ থাকে এবং তারা পুনরায় বৈবাহিক জীবন শুরু করতে পারে। কিন্তু স্বামী একসঙ্গে তিন তালাক দিলে ইদ্দত চলাকালেও স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়ার সুযোগ থাকে না।

৩. যদি তারা চায় যে আর কোনো দিন তারা একে অন্যের সংসারে ফিরে আসবে না, সে ক্ষেত্রেও ইসলাম একসঙ্গে তিন তালাক দিতে নিষেধ করেছে। তাই হায়েজের পর প্রত্যেক পবিত্রতার সময় এক তালাক করে তিন তালাক দেবে। এভাবে তিন তালাকের মাধ্যমে তারা সম্পূর্ণ পৃথক হয়ে যাবে।

৪. ইসলামে তালাক দেওয়ার অধিকার কেবল স্বামীকেই দেওয়া হয়েছে, স্ত্রীর হাতে তা দেওয়া হয়নি। কেননা নারীদের স্বভাবে সাধারণত তাড়াহুড়ো করার প্রবণতাটা বেশি। তাই তাদের তালাকের ক্ষমতায় দিলে ছোটখাটো বিষয়েও তাড়াহুড়ো করে তালাক দিয়ে দেওয়ার আশঙ্কা বেশি। সুতরাং অধিক পরিমাণে বিবাহবিচ্ছেদ রোধেই ইসলাম নারীদের তালাকের ক্ষমতা দেয়নি।

৫. তবে ইসলামে নারীদের সম্পূর্ণ আটক করে রাখতেও বলা হয়নি; বরং তারাও প্রয়োজনে যথাযথ নিয়মে বিবাহবিচ্ছেদ করতে পারবে। এ জন্য তাদের নির্দিষ্ট ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। যথা—

ক. বিবাহের আগেই স্ত্রী এ শর্ত দিতে পারবে যে আমাকে তালাক দেওয়ার অধিকার দিতে হবে, তখন স্বামী অধিকার দিলে স্ত্রী প্রয়োজনে সে অধিকার প্রয়োগ করতে পারবে।

খ. যদি বিবাহের সময় শর্ত না-ও দিয়ে থাকে, তার পরও স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে তালাক নিতে পারবে।

গ. আর যদি তা-ও না করে, তবুও স্বামী নপুংসক, পাগল, অস্বাভাবিক রাগসম্পন্ন হলে বা নিখোঁজ হয়ে গেলে অথবা যেকোনো কঠিন সমস্যায় পতিত হলে স্ত্রী বিচারকের মাধ্যমে নিজেই তালাক নিয়ে নিতে পারবে।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –