• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

একজন ফুটবল নেতার গল্প

প্রকাশিত: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮  

সময়টা ২০০৫ সালের অক্টোবর মাস। এইমাত্র বাছাইপর্ব পেরিয়ে ২০০৬ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে আইভরিকোস্ট। কিন্তু আফ্রিকান দেশটিতে শান্তি নেই।
বিশ্বকাপ নিশ্চিত হওয়ার আনন্দে যাদের ভেসে যাওয়ার কথা, তারাই কি না গৃহযুদ্ধের অনলে ছারখার হচ্ছে বিগত তিন বছর ধরে। ম্যাচ শেষ করে আসা ক্লান্ত শ্রান্ত মানুষটা ভাবলেন, বিশ্বকাপ নিশ্চিত হয়েছে, এর চেয়ে উপযুক্ত সময় আর পাওয়া যাবে না। সতীর্থদের সবাইকে নিজের কাছে ডেকে নিলেন। তারপর লাইভ ক্যামেরার সামনে নিজের হাতে মাইক তুলে নিলেন।

এরপর বলতে শুরু করলেন, ‘আজকের এই দিনে আমরা আপনাদের কাছে ভিক্ষা চাচ্ছি। হাঁটু গেঁড়ে বসে ভিক্ষা চাচ্ছি আপনাদের কাছে। আমাদের মুক্তি দিন। দয়া করে মুক্তি দিন আমাদের!’ নিজের দেশের নেতাদের উদ্দেশ্য করে আর্জি করলেন, ‘আপনাদের অস্ত্র নামিয়ে রাখুন। নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। দেশের পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে। আমরা আনন্দে বাঁচতে চাই, আপনাদের বন্দুক নামিয়ে রাখুন।’


 
এতক্ষণ যেই সাহসী ফুটবলারটির কথা বলা হচ্ছিল, তিনি দিদিয়ের দ্রগবা। আফ্রিকার ফুটবল ইতিহাসে যে কয়জন সুপারস্টার এসেছেন, দ্রগবা থাকবেন তাদের একদম উপরের সারিতে। ফুটবলীয় অর্জন কম নয় তার, কিন্তু দ্রগবা শুধু একজন ফুটবলার নন, ফুটবলার পরিচয় ছাপিয়ে তিনি হয়ে উঠেছিলেন একজন মহানুভব নেতা, একজন আইকন, একজন শান্তিদূত, একজন কিংবদন্তি। মাঠে ও মাঠের বাইরে নিজের নেতৃত্বগুণের পরিচয় দিয়েছেন বারবার, সুপারস্টার হয়েও তাই সর্বদা নিজেকে রেখেছেন সাধারণের কাতারে। হিংসার এই পৃথিবীতে বারবার ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন শান্তির বার্তা।

1.দিদিয়ের দ্রগবা: একজন ফুটবল নেতার গল্প

২০০৫ এই প্রথম নয়, আবিদজানে জন্ম নেয়া এই স্ট্রাইকার ২০০২ সালে মাত্র ২৪ বছর বয়সেও শান্তির বার্তা ছড়াতে চেয়েছিলেন, আসলে ছড়িয়ে গেছেন গোটা ক্যারিয়ার জুড়েই। নিজের দেশের ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সময় কাটিয়ে ওঠার জন্য সহায়তা চেয়েছেন জাতিসংঘের, দেশের মানুষের করুণ আর্জি বারবার প্রতিধ্বনিত হয়েছে তার কণ্ঠে। ফুটবলার হিসেবে অসম্ভব রকমের জনপ্রিয় ও সফল, সিংহহৃদয় এই মানুষটিই পেশাদার ফুটবল থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। আফ্রিকার ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই ফুটবলারের সম্মানার্থেই আজকের এই আয়োজন।

১৯৭৮ সালের ১১ মার্চ আইভরিকোস্টের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র আবিদজানে জন্ম দ্রগবার। ছয় ভাই বোনের মধ্যে সবার বড় দ্রগবার ফুটবলে আসাটা যেন একপ্রকার অবধারিতই ছিল। পুরো পরিবারের অর্ধেকই যে পেশাদার ফুটবলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।


 
তবে দ্রগবার ফুটবলে হাতেখড়িটা নিজ দেশে নয়। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে ফ্রান্সে নিজের চাচার কাছে চলে যান তিন বছরের জন্য, যিনি কি না ফ্রান্সের লিগ-২ এর ফুটবলার ছিলেন। শেষমেশ ১৯৯১ সালে নিজের পরিবার নিয়ে ইউরোপেই সেটল হন টিনেজার দ্রগবা।

পেশাদার ফুটবলে দ্রগবার অভিষেক ২১ বছর বয়সে, লিগ-২ এর দল লে মাঁসের হয়ে। তিন বছরে ক্লাবটির হয়ে মাত্র ১২ গোল করলেও লিগ ওয়ানের দল গুইনগাম্প প্রায় ছয় অঙ্কের অর্থ খরচ করে নিজেদের দলে টেনে নেয় তখনো পর্যন্ত পায়ের নিচে মাটি খুঁজে না পাওয়া এই স্ট্রাইকারকে। নতুন সতীর্থদের সঙ্গে প্রথম অনুশীলনের দিনও গুইনগাম্পের কোচ ও সহকারী কোচ সংশয়ে ছিলেন, এই ছেলে আদৌ কিছু করতে পারবে না। তখনো তারা জানতেন না, এই ছেলেই একদিন নিজের পায়ের জাদুতে ইউরোপ কাঁপাবে!

শুরুতে অবশ্য বোঝা যায়নি দ্রগবা এতটা আলো ছড়াবেন। ২০০২-০৩ মৌসুমের শুরুর সময়টা ইনজুরির কারণে বেঞ্চে বসেই কাটাতে হয়েছে। দ্রগবাকে ‘লেট ব্লুমার’ বললেও বোধহয় খুব একটা ভুল হবে না। ২৫ বছর বয়সে যেখানে ফুটবলারেরা নিজেদের সেরা ফর্মে থাকেন, দ্রগবা সেখানে এই বয়সে প্রথমবার নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে শুরু করেন। ৩৪ ম্যাচে ১৭ গোল করে ওই মৌসুমে লিগ ওয়ানের তৃতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা হন।

2.দিদিয়ের দ্রগবা: একজন ফুটবল নেতার গল্প

গুইনগাম্পের পারফরম্যান্স দিয়ে দ্রগবা জায়গা করে নেন আরেক ফ্রেঞ্চ ক্লাব মার্শেইয়ে। মাত্র এক মৌসুম খেললেও দ্রগবার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্টই বলা চলে একে। প্রথম কোনো বড় ক্লাবে খেলার ও চাপ নেয়ার অভিজ্ঞতা যে এখানেই হয়েছিল দ্রগবার। ডিফেন্ডার হাসুন কামারা বলেছিলেন, ‘মার্শেইয়ে সে কোনো বড় তারকা হয়ে আসেনি। গুইনগাম্পে সে একটি ভালো মৌসুম কাটিয়েছে এটা ঠিক, কিন্তু মার্শেই এমন একটা ক্লাব, যারা প্রতিবছর বিশ্বমানের একজন ফরোয়ার্ডকে নিজেদের দলে প্রত্যাশা করে। তাকে সঙ্গে সঙ্গেই নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে হতো।’

সেই প্রত্যাশা কি দারুণভাবেই না পূর্ণ করেছিলেন দ্রগবা! মার্শেইয়ের হয়ে ২০০৩-০৪ মৌসুমে যেন এক গোলমেশিনে পরিণত হয়েছিলেন তিনি। পুরো মৌসুমে ৫১ ম্যাচ খেলে গোল করেছিলেন ৩০টি, জিতেছিলেন লিগ ওয়ানের সেরা খেলোয়াড় ও সেরা গোলের পুরষ্কার। মেসি-রোনালদোর এই যুগে মৌসুমে ৩০ গোল হয়তো তেমন আহামরি কিছু শোনায় না, কিন্তু আজ থেকে পনের বছর আগে মৌসুমে ৩০ গোল মানে দারুণ এক অর্জনই ছিল। বিশেষ করে ৮ ম্যাচে ৬ গোল করে মার্শেইকে উয়েফা কাপের ফাইনালে তুলে পুরো ইউরোপের নজর নিজের দিকে টেনে নিতে সক্ষম হন দ্রগবা। যদিও ফাইনালে জেতাতে পারেননি দলকে, হারতে হয়েছিল ভ্যালেন্সিয়ার কাছে।

3.দিদিয়ের দ্রগবা: একজন ফুটবল নেতার গল্প

মাত্র এক মৌসুম খেললেও ক্লাবের সকলের মন জয় করে নিয়েছিলেন দ্রগবা। ক্লাবের তৎকালীন সভাপতি ভিনসেন্ট লাবুর্নের কাছ থেকেই বোধহয় সেরা প্রশংসাটা পেয়েছিলেন দ্রগবা। কিংবদন্তি ম্যারাডোনার সঙ্গেই যে দ্রগবার তুলনা করে বসেছিলেন লাবুর্নে! ২০১২ সালে লে মন্ডেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘দ্রগবার মতো করে আর কাউকে আমি এভাবে একা হাতে একটি দলকে টেনে নিয়ে যেতে দেখিনি। ওহ না, আগে শুধু একজনকেই দেখেছি, তিনি হলেন নাপোলির ম্যারাডোনা।’

এক মৌসুম মার্শেইয়ে কাটিয়ে দ্রগবা এলেন ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে কঠিন রণক্ষেত্র ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে, ক্লাব রেকর্ড ২৪ মিলিয়ন পাউন্ডে যোগ দিলেন চেলসিতে। ক্রিস্টাল প্যালেসের বিপক্ষে নতুন ক্লাবের হয়ে মাত্র তৃতীয় ম্যাচেই গোলের খাতা খোলেন তিনি। নিজের প্রথম মৌসুমেই ৫০ বছর পর চেলসিকে লিগ শিরোপা জিততে সহায়তা করেন, জেতেন পরের বছরও। দুই মৌসুমেই ১৬টি করে গোল করেন তিনি। কিন্তু চেলসি সমর্থকদের মনে দ্রগবা চিরস্থায়ী জায়গা নেয়া শুরু করেন ২০০৬-০৭ মৌসুমে। লিগ কাপ ফাইনালে দুই গোল করে দলকে জিতিয়ে ও এফএ কাপ ফাইনালে জয়সূচক গোল করে চেলসি সমর্থকদের চোখের মণি হয়ে ওঠেন দ্রগবা।

4.দিদিয়ের দ্রগবা: একজন ফুটবল নেতার গল্প

২০০৬-০৭ মৌসুমে যেন দ্রগবাকে কাঙ্ক্ষিত রূপে পেলেন চেলসি সমর্থকেরা। ডেমিয়েন ডাফের ছেড়ে যাওয়া ১১ নম্বর জার্সি গায়ে জড়িয়ে সেই মৌসুমে সব ধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে করলেন ৩৩ গোল, এর মধ্যে প্রিমিয়ার লিগেই ২০ গোল করে জিতলেন গোল্ডেন বুট এওয়ার্ড। দারুণ গোল স্কোরিং ফর্ম নিয়ে একটি ক্লাব রেকর্ডও করে ফেলেন তিনি, ১৯৮৪-৮৫-তে কেরি ডিক্সনের পর প্রথম চেলসি ফুটবলার হিসেবে এক মৌসুমে করেছিলেন ৩০ গোল।

স্বপ্নের মতো এক মৌসুম কাটানোর পুরষ্কার দ্রগবা পেয়েছিলেন হাতেনাতেই, এবং সেটা ক্লাব ও দেশ উভয় জায়গায়ই। পিএফএ প্লেয়ার অফ দ্য ইয়ার পুরস্কারের দৌড়ে রোনালদোর পেছনে থেকে হলেন দ্বিতীয়, জায়গা করে নিলেন পিএফএ’র বর্ষসেরা একাদশেও। ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে আইভরিকোস্টের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে নির্বাচিত হলেন, দুই মাস পরে স্যামুয়েল ইতো ও মাইকেল এসিয়েনকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো আফ্রিকান বর্ষসেরা ফুটবলারের খেতাবটাও জিতে নিলেন।


 
চেলসির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অর্জনটাও এসেছিল দ্রগবার পা থেকেই। অন্তর্বর্তীকালীন কোচ রবার্তো ডি মাত্তেওয়ের অধীনে ২০১২ সালে বায়ার্ন মিউনিখকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগের শিরোপা জেতা চেলসির হয়ে টাইব্রেকারে শেষ গোলটি করেছিলেন এই দ্রগবাই। কাকতালীয়ভাবে সেটি ছিল চেলসির হয়ে দ্রগবার শেষ শট! অবশ্য পরে খুবই সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য আবারো ফিরে এসেছিলেন পুরোনো ক্লাবে। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জেতানো ওই এক শট দিয়েই চেলসি সমর্থকদের হৃদয়ে অমর হয়ে থাকবেন দ্রগবা।

5.দিদিয়ের দ্রগবা: একজন ফুটবল নেতার গল্প

চেলসিতে থাকাকালীন সময়ে মোট ১৬৪ গোল করেছিলেন দ্রগবা, ক্লাবটির ইতিহাসে আর কোনো বিদেশি এত গোল করে যেতে পারেননি। চেলসির সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতাদের তালিকায়ও চতুর্থ স্থানে জ্বলজ্বল করে দ্রগবার নামটি। ব্লুজদের হয়ে সম্ভাব্য সবকিছুই জিতেছেন তিনি। সমান চারটি করে প্রিমিয়ার লিগ ও এফএ কাপ জিতেছেন, তিনবার জিতেছেন লিগ কাপ, আর একবার জিতেছেন ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে আরাধ্য ট্রফি চ্যাম্পিয়ন্স লীগ।

চেলসিতে উজ্জ্বল এক ক্যারিয়ার কাটিয়ে দ্রগবা গেলেন চায়নাতে, কিন্তু সাংহাই শেনহুয়ার সঙ্গে খুব একটা বনিবনা হলো না। ৮ মাসে ১১ ম্যাচ খেলে মাত্র ৮ গোল করে ও অপরিশোধিত বেতন নিয়ে ঝামেলা করে চায়না ছেড়ে চলে এলেন তুরস্কের জনপ্রিয় ক্লাব গ্যালাতাসারেতে। ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরে দ্রগবাকে যেভাবে সংবর্ধনা জানিয়েছিলেন গ্যালাতাসারে সমর্থকেরা, তা দেখে ক্লাবটির এক সমর্থক মন্তব্য করেছিলেন, ‘আমার স্মৃতিশক্তি বলছে গ্যালাতাসারের ইতিহাসে আর কোনো খেলোয়াড় এত অসাধারণ সংবর্ধনা পাননি।’


 
দ্রগবা ও স্নাইডারের কাঁধে চেপে সেই মৌসুমে ১২ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লীগের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল গ্যালাতাসারে। যদিও কোয়ার্টারে রিয়াল মাদ্রিদের কাছে দুই লেগ মিলিয়ে হারতে হয়েছিল ৫-৩ গোলে, কিন্তু দ্বিতীয় লেগে রিয়াল মাদ্রিদকে ৩-২ গোলে হারিয়ে ও টানা দ্বিতীয়বারের মতো লিগ শিরোপা জিতে মৌসুমটাকে ঠিকই রাঙিয়ে রেখেছিল গ্যালাতাসারে। আর দ্রগবার উপস্থিতিই মানসিকভাবে চাঙ্গা করে তুলেছিল তুর্কি ক্লাবটিকে। ভালোবেসে দ্রগবাকে ‘সেভিওর’ বা ‘রক্ষাকর্তা’ উপাধিও দিয়েছিল গ্যালাতাসারে সমর্থকেরা।

ক্লাব ফুটবলে দারুণ সফল দ্রগবা উজ্জ্বল ছিলেন দেশের জার্সিতেও। ২০০৬ সালে আইভরিকোস্টকে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের মূল পর্বে তুলতে প্রত্যক্ষ অবদান রেখেছিলেন তিনি। দ্রগবার নেতৃত্বেই ২০০৬ সালে নিজেদের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো আফ্রিকান নেশন্স কাপের ফাইনালে ওঠে আইভরিকোস্ট। ফাইনালে মিশরের কাছে পেনাল্টি শুটআউটে ৪-২ ব্যবধানে হেরে যায় তার দল, দ্রগবা নিজে পেনাল্টি মিস করেন।

দেশের ইতিহাসে প্রথম বিশ্বকাপ গোলটিও এসেছিল দেশটির ইতিহাসের সর্বকালের সেরা ফুটবলার দ্রগবার পা থেকেই, সেটিও আবার দুবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার বিপক্ষে। আর্জেন্টিনা ও নেদারল্যান্ডসের কাছে প্রথম দুই ম্যাচ হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিলেও শেষ ম্যাচে সার্বিয়া ও মন্টেনেগ্রোর বিপক্ষে দুই গোলে পিছিয়ে থেকেও ৩-২ গোলের জয়ে বিশ্বকাপে প্রথম জয় নিয়ে দেশে ফেরে আইভরিকোস্ট।

২০০৮ সালের আফ্রিকান নেশন্স কাপেও দলকে সেমিফাইনালে তোলেন দ্রগবা, কিন্তু এবারে সেমিতেই আটকে যেতে হয় তাদের, ঘাতক সেই মিশর। আইভরিকোস্টকে ২০১০ সালে টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপে তুলে আনতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন দ্রগবা, বাছাইপর্বে ৫ ম্যাচে করেন ৬ গোল। ২০০৭ এর পর ২০০৯ সালে দ্বিতীয়বারের মতো জেতেন আফ্রিকান বর্ষসেরা ফুটবলের খেতাবটি।

দেশের হয়ে কিছু জেতার সুবর্ণ সুযোগ আরো একবার এসেছিল দ্রগবার সামনে, ২০১২ আফ্রিকান নেশন্স কাপে। কিন্তু ফাইনালে জাম্বিয়াকে হারাতে পারেনি আইভরিকোস্ট, আর সেটির জন্য দায়ী দ্রগবা নিজেও। ম্যাচ শেষের ১৫ মিনিট আগে পেনাল্টি পেয়েও সেটিকে কাজে লাগাতে পারেননি। পরে টাইব্রেকারে হেরে দ্বিতীয়বারের মতো স্বপ্নভঙ্গ হয় দ্রগবার।

6.দিদিয়ের দ্রগবা: একজন ফুটবল নেতার গল্প

তবে একজন দ্রগবাকে ট্রফি দিয়ে কখনোই বিচার করা সম্ভব হবে না। দ্রগবা যে ফুটবলের গণ্ডি ছাড়িয়ে মানুষের জীবনের সঙ্গেই মিশে গিয়েছিলেন! হয়ে উঠেছিলেন মানুষের নেতা। নেতৃত্বগুণ দিয়ে অনুপ্রাণিত করেছেন অসংখ্য আফ্রিকান কিশোরদের, হয়ে উঠেছেন তাদের আইকন। এখনো দ্রগবা মানে আফ্রিকানদের কাছে একটি আবেগের নাম, ভালোবাসার নাম, অনুভূতির নাম। আর সেই ভালোবাসা অমলিন থাকবে চিরকাল।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –