• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

কম সময় ঘুমিয়েই যেভাবে দীর্ঘজীবন পেলেন এসব বিখ্যাত ব্যক্তিরা

প্রকাশিত: ৯ অক্টোবর ২০১৯  

বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনযাপন সম্পর্কে সবারই জানার আগ্রহ রয়েছে। কারণ তাদের সফলতার পেছনে ছোটখাট অনেক গল্প রয়েছে যা অন্যদের উৎসাহ যোগায়। তবে কখনো কি ভেবে দেখেছেন এসব গুণী মানুষেরা কয় ঘণ্টা ঘুমাতেন? যেখানে সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমানো প্রত্যেকের জন্যই জরুরি। কয়েকটি সূত্র দাবী করে, বিখ্যাত শিল্পী লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি নাকি প্রতিদিন অন্তত পক্ষে ২২ ঘন্টা জেগে থাকতে পারতেন। 

অথচ তার স্বাভাবিক শিল্পী সত্তাতে এর কোনো প্রভাব পড়ত না। তিনি প্রতি ৪ ঘন্টা জেগে থাকার পরে ১৫ থেকে ২০ মিনিট বিশ্রাম করতেন। এভাবে সারা দিনে ও রাতে তিনি মোট দেড় থেকে দুই ঘণ্টা ঘুমাতেন। আজকের দিনে এই ধরনের ঘুমকে পলিফেজিক স্লিপ বলা হচ্ছে। যারা এই পদ্ধতিতে ঘুমান তাদের এতে কোনো অসুবিধে হয় না।

যারা লিওনার্দো সম্পর্কে এই তথ্য মানতে চান না, তারা বলেন এটা একটা মিথ। লিওনার্দোর এই ধরনের ঘুমের সত্যতা সম্পর্কে অবশ্য পর্যাপ্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায় নি। তবে রাতে মাত্র ৪ ঘণ্টা ঘুমিয়ে দিব্যি সুস্থ ছিলেন এমন কিছু বিখ্যাত মানুষের সন্ধান কিন্তু পাওয়া গেছে। তবে জেনে নিন কিছু বিখ্যাত মানুষের ঘুম সম্পর্কে-

স্যার আইজাক নিউটন

প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা ঘুম হলেই নাকি হয়ে যেত নিউটনের। শোনা যায় তিনি এতটাই পরিশ্রম করতেন যে, মাঝে মাঝে কয়েকদিন ধরে এক ফোঁটাও ঘুমাতেন না। অবশ্য তার পরিণাম হত মারাত্মক। তিনি মাঝে মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়তেন। তার মাথায় মাধ্যাকর্ষণ সংক্রান্ত তথ্য-সহ এত গবেষণামূলক ভাবনার ঘোরাফেরা ছিল যে, বেচারি ঘুম যেন পালিয়ে বাঁচত। তিনি ৮৪ বছর বয়সে মারা যান।

নেপোলিয়ান বোনাপার্ট

রাত ১২ টায় ঘুমাতে গিয়ে নাকি ২ ঘণ্টা বাদে উঠে পড়তেন নেপোলিয়ান। তার পরে আবার ভোর ৫টায় শুয়ে বিছানা ছাড়তেন সকাল ৭টা নাগাদ। অর্থাৎ সাকুল্যে সারা রাতে তিনি ঘুমাতেন মোটা ৪ ঘন্টা। অথচ নেপোলিয়ন সংক্রান্ত কয়েকটি লেখায় দাবি করা হয়েছে, তিনি রাতে ৬ ঘণ্টা ঘুমানোর পক্ষে সওয়াল করেছেন। তার কয়েকজন সেনাপতির কাছ থেকে জানা গেছে, দীর্ঘ সময় ধরে যুদ্ধ চলাকালীন নেপোলিয়ান এক অদ্ভুত ক্ষমতাবলে যুদ্ধক্ষেত্রেই আধঘণ্টা বিশ্রাম নিয়ে নিজেকে চাঙ্গা করে নিতে পারতেন। 

এই সময়ে যুদ্ধের ভার অধঃস্তনদের ওপর ছেড়ে দিতেন। তিনি নির্দেশ দিতেন, এই আধঘণ্টায় যেন তাকে কোনো অবস্থাতেই বিরক্ত করা না হয়। গবেষকদের ধারনা, তিনি ঘুম-ঘাটতি বা স্লিপ ডিপ্রাইভেশনে ভুগতেন। কারো মতে, ওয়াটারলুর যুদ্ধে তার পরাজয়ের পিছনে ছিল এই ঘুমজনিত শারীরিক অসুস্থতা। যদিও এমনটা শোনা যায় যে, সেন্ট হেলেনায় থাকাকালীন তিনি স্বাভাবিক মানুষের মতোই ঘুমাতেন। নেপোলিয়ন ৫২ বছর বেঁচে ছিলেন।

বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিন

‘আর্লি টু বেড, আর্লি টু রাইজ, মেকস এ ম্যান হেলদি, ওয়েলদি অ্যান্ড ওয়াইজ’ এই বিখ্যাত প্রবচনের সৃষ্টিকর্তা বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিন সম্পর্কে কয়েকটি সূত্রের দাবী যে তিনি নিজে রাতে মাত্র ২ থেকে ৪ ঘণ্টা ঘুমোতেন। আসলে তিনি যে-সময়ের মানুষ তখন কঠোর পরিশ্রম করতে পারার ক্ষমতাকে অতি গুরুত্বপূর্ণ মানবিক গুণ বলে মনে করা হত। 

অপর প্রখ্যাত বৈজ্ঞানিক থমাস এডিসনকেও ফ্র্যাঙ্কলিন নির্দেশিত পথে চলতে দেখা গেছে। উভয়ের ক্ষেত্রেই এটা প্রমাণ করার দায় ছিল, তারা খুব বেশি আরাম-বিলাস করেন না। নিজের আত্মজীবনীতেও ফ্র্যাঙ্কলিন মানুষের নৈতিক উত্কর্ষতা প্রসঙ্গে লিখতে গিয়ে রাতে ৪ ঘণ্টা ঘুমানোর সুপারিশ করেছেন। ‘কবরে অনেক ঘুমানোর সময় পাওয়া যাবে’ এই ছিল তার পরিচিত শ্লোগান। তিনি ৮৪ বছর বাঁচেন।

থমাস এডিসন

এই মহান বিজ্ঞানী নিজেই জানিয়েছেন, তিনি রাতে ৫ ঘণ্টারও কম ঘুমাতেন। গবেষণাগারে তিনি এতটাই মগ্ন হয়ে কাজ করতেন যে প্রকৃত অর্থে কয়েক দিন ধরে তার প্রায় ঘুমই হত না। কখনো গবেষণাগারে রাখা ছোট একটি খাটে কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে তিনি আবার নতুন উদ্যমে কাজে লেগে যেতেন। কখনোবা প্রায় সারা দিন ধরেই ঘুমাতেন তিনি। এডিসন মনে করতেন, অধিকাংশ মানুষ প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খান এবং বেশি ঘুমান। আর এই অপরিমিত কুঅভ্যাসের কারণে তাদের স্বাস্থ্য খারাপ হয়। ৮৪ বছর বয়সে তার মৃত্যু হয়।

উইনস্টন চার্চিল

এই প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ তার ৯১ বছরের জীবদ্দশায় রাতে গড়ে মাত্র ৫ ঘণ্টা  ঘুমালেও দিনে নিয়মিত ভাতঘুম দিয়ে ঘাটতি পূরণ করে নিতেন। মোটামুটি দেড়  থেকে দুই ঘণ্টার দিবানিদ্রা দিতেন তিনি। সাধারণত প্রতিরাতে ৩টার সময় শুতে গিয়ে সকাল ৮টা নাগাদ ঘুম থেকে জেগে তিনি বিছানায় বসেই খবরের কাগজ পড়তেন, চিঠি ডিকটেশন দিতেন কিংবা ফাইলে সই করতেন। তার শোয়ার ঘরে ছিল দু’টি বিছানা। 

কোনো একটি বিছানায় ঘুম না এলে তিনি বিছানা পাল্টে অন্যটায় গিয়ে শুতেন। ঘুম নিয়ে তিনি বেশ মজার কথা বলতেন। তার কথায়, দিবানিদ্রাতে সময় নষ্ট, এটি কিছু কল্পনাহীন মানুষের বোকা বোকা ধারণা। সময় নষ্টের তো প্রশ্নই নেই বরং দিবানিদ্রা দিলে বেশি কাজ করা যায়। তার মতে, দুপুরে ঘুমিয়ে তিনি একদিনে দু’দিনের কাজ না করতে পারলেও অন্তত দেড় দিনের কাজ তো করেনই।

অ্যালবার্ট আইনস্টাইন

অ্যালবার্ট আইনস্টাইন সাধারণত রাতে দশ ঘণ্টা ঘুমাতেন। তবে তিনি যদি কোনো গভীর চিন্তায় মগ্ন থাকতেন তবে সে ঘুম আরও বেড়ে গিয়ে হত ১১ ঘণ্টা। তিনি দাবী করতেন, তার বহু আবিষ্কারের সঙ্গে নাকি রাতে দেখা স্বপ্নের সম্পর্ক আছে। আইনস্টাইন এটাও মনে করতেন যে, দিবানিদ্রা মনকে তাজা করে এবং এই দিবানিদ্রাই তাকে আরও সৃজনশীল করে তুলতে সাহায্য করেছে। তিনি ৭৬ বছর বেঁচেছিলেন।

জন এফ কেনেডি

মাঝ দুপুরে সাঁতার এবং অনেকটা এক্সারসাইজ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি বিছানায় বসেই দুপুরের খাবার সেরে নিতেন। পরে খুব দ্রুত এক বা দুই ঘণ্টার একটা নিটোল ভাতঘুম দিতেন। কোনো অতি জরুরি ব্যাপার ছাড়া তাকে যাতে বিরক্ত করা না হয় ঘনিষ্ঠ মহলে এমনই নির্দেশ দেয়া ছিল। যত গুরুত্বপূর্ণ কাজই থাকুক, স্ত্রী জ্যাকি কিন্তু এই সময় তাকে সঙ্গ দিতেন। 

এই সময় ঘরের দরজা বন্ধ থাকত, টেলিফোন ধরা হত না, কোনো ফাইল পাঠানো যেত না, এমন কী তটস্থ হয়ে কোনো কারণেই কেউ সিঁড়ি দিয়ে ওপরে পর্যন্ত উঠতেন না। ঘুম থেকে জেগে কেনেডি দ্বিতীয়বারের জন্য গরম পানিতে গোসল করে বিকেল সাড়ে তিনটে থেকে কাজ শুরু করতেন।

ম্যাডোনা

বিশিষ্ট পপ-সঙ্গীত শিল্পী ম্যাডোনা বিবিসি-কে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে স্বীকার করেছেন, তিনি রাতে মাত্র ৪ ঘণ্টা ঘুমান। তার জীবনে ঘটে যাওয়া প্রতিটি ঘটনার অভিঘাত এতটাই প্রবল যে তিনি নাকি নিরবচ্ছিন্নভাবে উদ্বিগ্ন থাকেন। এ কারণেই তার ঘুম হয় না।

আরও যারা

রাতে মাত্র চার-ছয় ঘণ্টা ঘুমিয়ে বিখ্যাত হয়েছেন এমন অসংখ্য মানুষের মধ্যে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করা হচ্ছে- ফ্লোরেন্স নাইটেঙ্গেল, মাইকেল অ্যাঞ্জেলো, বিল ক্লিন্টন, মার্গারেট থ্যাচার, ইন্দিরা গান্ধি ইত্যাদি।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –