• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

করোনা: অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ২৪৪ উন্নয়ন কৌশল নিচ্ছে সরকার

প্রকাশিত: ৩০ ডিসেম্বর ২০২০  

কোভিড-১৯ মোকাবেলাসহ অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ২৪৪টি উন্নয়ন কৌশল নিচ্ছে সরকার। আগামী পাঁচ বছরে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আওতায় এসব কৌশল বাস্তবায়ন করা হবে। এ ক্ষেত্রে শুধু করোনা মোকাবেলায় আসছে পাঁচটি কৌশল।

এ ছাড়া আন্তঃসম্পর্কিত উন্নয়ন কৌশল রয়েছে ছয়টি। পশ্চাৎপদ অঞ্চলের দারিদ্র্য সমস্যা মোকাবেলায় ছয়টি কৌশল। সেই সঙ্গে খাতভিত্তিক উন্নয়ন কৌশল রয়েছে ২২৭টি। ১৪টি অধ্যায়ে এসব কৌশল নির্ধারণ করেছে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)।

মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে উপস্থাপন হচ্ছে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০২১-২০২৫)। এ সময় বিস্তারিতভাবে কৌশলগুলো তুলে ধরা হবে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও গণভবন থেকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনাটি তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত জিইডির সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম সোমবার যুগান্তরকে বলেন, পরিকল্পনাটি তৈরির প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়েছে মূলত করোনার কারণেই।

কেননা, একদিকে করোনার কারণে কাজ করা যাচ্ছিল না, অন্যদিকে অর্থনীতিতে করোনার প্রভাব এবং তা থেকে উত্তরণের কৌশলগুলো এই পরিকল্পনায় যুক্ত করাটা জরুরি ছিল।

দুটি মিলিয়েই একটু দেরি হয়েছে। তবে সার্বিকভাবে এতে কোনো সমস্যা হবে না। কেননা, ছয় মাস পর অনুমোদন পেলেও এটির বাস্তবায়নকাল ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে।

এটি গত সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়ও হয়েছিল। সুতরাং এটা বড় কোনো সমস্যা নয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোভিডের ধাক্কা বিশ্বব্যাপী নড়ে উঠেছে।

আমাদের অর্থনীতিতে এর বিশাল প্রভাব আছে। তবে আমরা সেগুলো মাথায় রেখেই পরিকল্পনাটির খসড়া চূড়ান্ত করেছি।

ড. আলম আরও জানান, গত ১৩ ডিসেম্বর পরিকল্পনামন্ত্রীর সভাপতিত্বে জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটির সভায় এ পরিকল্পনাটি অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়।

২৩ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অবহিতকরণ সভায় উপস্থাপন করা হয়। এ সময় তার দেয়া সুপারিশ প্রতিপালন করে খসড়া পরিকল্পনাটি অধিকতর পরিমার্জন ও সংশোধন করা হয়েছে। আশা করছি, আজ অনুমোদন দেয়া হবে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাটি।

জিইডি সূত্র জানায়, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় কোভিড-১৯-এর প্রভাব মোকাবেলায় কৌশলগুলো হচ্ছে, সরকারের উন্নয়ন রূপকল্প ও নির্বাচনী ইশতেহারের আলোকে পরিকল্পনায় নীতি ধারাবাহিকতার দিকটিতে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হবে।

এ ক্ষেত্রে যেসব কার্যসম্পাদক সূচকে বাংলাদেশ এখনও পিছিয়ে, আগে সেসব ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া অর্থনীতিতে পিছিয়ে পড়া খাতগুলো সংস্কারের গতি বাড়ানোর বিষয়টি কোভিডের কারণে আরও বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে।

কোভিড-১৯-এর কারণে সৃষ্ট সাময়িক বেকারত্বসহ বিদেশ ফেরত কর্মীদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য খাতে কোভিড-১৯ মহামারীসহ ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে ক্রমান্বয়ে একটি সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা বা ইউনিভার্সেল হেলথ সিস্টেম প্রবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

কোভিড-১৯-এর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা এবং প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের হার বাড়াতে জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করা হবে।

এ ক্ষেত্রে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা ও উপকারভোগীর সংখ্যা বৃদ্ধিতে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় আন্তঃসম্পর্কিত থিম সংক্রান্ত উন্নয়ন কৌশলগুলো হচ্ছে, কোভিড-১৯-এর কারণে সৃষ্ট মহামারী থেকে পুনরুদ্ধারে স্বাস্থ্য, আত্মবিশ্বাস, কর্মসংস্থান, আয় এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম পূর্বের ধারায় ফিরিয়ে আনা হবে।

এ ছাড়া প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিতকরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দ্রুত দারিদ্র্য হ্রাস করা হবে। উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় প্রত্যেক নাগরিকের অংশগ্রহণ, তা থেকে উপকৃত হওয়া এবং দুর্দশাগ্রস্ত জনগোষ্ঠীকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক বিস্তৃত কৌশল গ্রহণ।

টেকসই উন্নয়নের জন্য পথপরিক্রমা প্রণয়ন করা হবে। যেটি হবে দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তন সহনশীল, প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবহার এবং সাফল্যের সঙ্গে পরিকল্পিত নগরায়ণ নিশ্চিত করবে।

এ ছাড়া ২০৩১ সাল নাগাদ বাংলাদেশের অর্থনীতি উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে নিয়ে যেতে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়ন করা হবে। ২০৩০ সাল নাগাদ এসডিজির গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যগুলো অর্জন করা হবে।

অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাটির খসড়া পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দেশের পিছিয়ে থাকা অঞ্চলগুলোর জন্য দারিদ্র্য সমস্যা মোকাবেলার ছয়টি কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে।

এগুলো হল-পশ্চাৎপদ জেলাগুলোয় সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচিকে উচ্চ অগ্রাধিকার এবং সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়ানো হবে।

এসব জেলায় কৃষির উৎপাদনশীলতা ও আয় বৃদ্ধির জন্য কৃষি গবেষণা ও সম্প্রসারণ সেবার ওপর অধিক গুরুত্ব দেয়া হবে। ঋণ, প্রযুক্তি ও বিপণন পরিষেবাদি সুনির্দিষ্ট সহায়তা কর্মসূচির মাধ্যমে পশ্চাৎপদ জেলাগুলোয় খামারবহির্ভূত গ্রামীণ উদ্যোগ বাড়ানো হবে।

এসব জেলা থেকে বিদেশে কর্মী পাঠানোর সুযোগ তৈরির লক্ষ্যে সঠিক তথ্য, প্রশিক্ষণ, অভিবাসন ব্যয় মেটাতে ঋণ সহায়তা দেয়া হবে।

জেলাভিত্তিক আয়ের ধরন নির্ধারণ এবং অর্থনীতির রূপান্তরে প্রকৃতি অনুধাবনের জন্য বিবিএসের জেলাভিত্তিক জিডিপি প্রাক্কলনের কার্যক্রম পুনঃপ্রবর্তন।

খাতভিত্তিক উন্নয়ন কৌশল: অধ্যায়-১-এ জনপ্রশাসন, সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং গভর্ন্যান্স শক্তিশালীকরণ সংক্রান্ত উন্নয়ন কৌশল রয়েছে ১৭টি। এ ছাড়া অধ্যায়-২-এ রফতানিমুখী প্রবৃদ্ধিসহ ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের উন্নয়ন কৌশল ১২টি। অধ্যায়-৩-এ সেবা খাত সংক্রান্ত কৌশল রয়েছে নয়টি।

অধ্যায়-৪-এ কৃষি ও পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা খাতের উন্নয়ন কৌশল ২০টি। অধ্যায়-৫-এ বিদ্যুৎ সংক্রান্ত কৌশল রয়েছে নয়টি। অধ্যায়-৬-এ পরিবহন ও যোগাযোগ খাত সংক্রান্ত ২৪টি কৌশল।

অধ্যায়-৭-এ স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় সংক্রান্ত ১৬টি কৌশল। অধ্যায়-৮-এ পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত ১৪টি কৌশল। অধ্যায়-৯-এ নগরায়ণে ১১টি কৌশল রয়েছে।

এ ছাড়া অধ্যায়-১০-এ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা এবং পুষ্টি সংক্রান্ত ১৩টি কৌশল। অধ্যায়-১১-তে শিক্ষা খাতে ১৮টি কৌশল।

অধ্যায়-১২-তে ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সংক্রান্ত সাতটি কৌশল। অধ্যায়-১৩-তে যুব উন্নয়ন, ক্রীড়া, সংস্কৃতি, তথ্য ও ধর্মবিষয়ক ১৬টি কৌশল।

অধ্যায়-১৪-তে সামাজিক নিরাপত্তা, সমাজকল্যাণ ও সামাজিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে রয়েছে ৩০টি কৌশল।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –