• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী গরমে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশ-ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ

করোনার মাঝেও মধ্যপাড়ার খনিতে পাথর বিক্রির রেকর্ড

প্রকাশিত: ৮ জুন ২০২১  

করোনা মহামারির মধ্যে পাথর উৎপাদন ও বিক্রিতে নতুন রেকর্ড গড়েছে দিনাজপুরের মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (এমজিএমসিএল)। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে প্রায় দুই মাস বন্ধ থাকার পরও গত নয় মাসে ৯ লাখ ২৪ হাজার মেট্রিক টন পাথর উত্তোলন হয়েছে। বিক্রি হয়েছে ১১ লাখ ১২ হাজার মেট্রিক টন; যার মূল্য ২৫৬ কোটি টাকা। এর আগে কখনও নয় মাসে এতো বেশি পাথর বিক্রি হয়নি। ফলে তৃতীয়বারের মতো লাভজনক অবস্থান ধরে রাখতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

খনি সূত্রে জানা যায়, করোনার কারণে দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার পর গত বছরের আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি থেকে পাথর উত্তোলন শুরু করে কর্তৃপক্ষ। চলতি বছরের ৩১ মে পর্যন্ত নয় মাসে ৯ লাখ ২৪ হাজার মেট্রিক টন পাথর উত্তোলন করা হয়। আগের মজুতসহ এ সময়ে ১১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন পাথর বিক্রি হয়েছে; যা থেকে রাজস্ব এসেছে প্রায় ২৫৬ কোটি টাকা।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে খনি থেকে ১০ লাখ ৬৭ হাজার ৬৪৬.৬৩ মেট্রিক টন পাথর উত্তোলন করা হয়। এর মধ্যে বিক্রি হয় ৭ লাখ ৩১ হাজার ৪৯৩.৫৬ মেট্রিক টন; যার মূল্য ১৬৩ কোটি ১৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। ওই অর্থবছরে খনিটি সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে ৩৩ কোটি ২ লাখ ৭৬ হাজার টাকা টাকা। পাশাপাশি নিট মুনাফা অর্জন হয়েছে ৭ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এটিই প্রথমবারের মতো খনির লাভ।

২০১৯-২০২০ অর্থবছরে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে সাড়ে চার মাস বন্ধ থাকা সত্ত্বেও পাথর উত্তোলিত হয়েছে ৮ লাখ ২৩ হাজার ৯৫৯.১০ মেট্রিক টন। আগের মজুতসহ এই অর্থবছরে বিক্রি হয়েছে ৮ লাখ ৬৪ হাজার ৯০৬.৫২ মেট্রিক টন পাথর; যার মূল্য ২০৭ কোটি ৮১ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। এই অর্থবছরে সরকারি কোষাগারে জমা হয় ২২ কোটি ৬ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। নিট মুনাফা অর্জিত হয়েছে ২২ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

২০২০-২০২১ অর্থবছরে আরও বেশি মুনাফা হবে বলে আশা করছে খনি কর্তৃপক্ষ। কারণ গত অর্থবছরগুলোর তুলনায় চলতি অর্থবছরে পাথর বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে।

মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (এমজিএমসিএল) বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করে ২০০৭ সালের ২৫ মে। প্রথম অবস্থায় খনি থেকে দৈনিক এক হাজার ৫০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টন পাথর উত্তোলন হলেও পরে তা নেমে আসে ৫০০ টনে। উৎপাদনে যাওয়ার পর থেকে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত লোকসানের পরিমাণ দাঁড়ায় শতকোটি টাকার ওপরে।

এমন অবস্থায় উৎপাদন বাড়াতে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ৯২ লাখ মেট্রিক টন পাথর উত্তোলনের বিপরীতে ১৭১.৮৬ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি করে খনির উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয় বেলারুশের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়ামকে (জিটিসি)। বর্তমানে তিন শিফটে পাথর উত্তোলন করছেন সাত শতাধিক শ্রমিক। পাশাপাশি দেশি-বিদেশি মিলে রয়েছে প্রায় ২০০ জন কর্মকর্তা। প্রতিদিন তিন শিফটে পাথর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পাঁচ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। অবশ্য কখনও কখনও লক্ষ্যমাত্রারও বেশি পাথর উত্তোলন হয়।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৪ সালে জিটিসি খনির দায়িত্ব নিয়েই তিন মাসের মধ্যে তিন শিফটে পাথর উত্তোলন শুরু করে এবং উত্তোলনের রেকর্ড সৃষ্টি করে। যেখানে প্রতিদিন ৫০০ টনের মতো পাথর উত্তোলন হতো; সেখানে পাথর উত্তোলনের পরিমাণ বাড়ে দৈনিক ৪ হাজার মেট্রিক টনেরও বেশি। উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি বিপণনও বৃদ্ধি পায়। প্রথম অর্থবছর ২০১৪-২০১৫-এ খনিতে পাথর উত্তোলন হয় ৯ লাখ ৩১ হাজার ৪৭৬.২০ মেট্রিক টন। বিক্রি হয় ৫ লাখ ১৫ হাজার ৪৯৭.১৭ মেট্রিক টন। যার বিক্রি মূল্য ৭৪ কোটি ৪৯ লাখ ১১ হাজার টাকা।

এছাড়া ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে পাথর উত্তোলন হয় এক লাখ ৫৩ হাজার ৭১৯ মেট্রিক টন, আর আগের মজুতসহ বিক্রি হয় ৬ লাখ ২৫ হাজার ৮৩১ মেট্রিক টন। যার বিক্রি মূল্য ১০৫ কোটি ৬১ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় উত্তোলনে বিঘ্ন ঘটে। এই অর্থবছরে পাথর উত্তোলন হয় ৫৬ হাজার ৫১৮.২৯ মেট্রিক টন। আগের মজুতসহ বিক্রি হয় এক লাখ ৮২ হাজার ৯৮ মেট্রিক টন, যার বিক্রি মূল্য ২১ কোটি ১৭ লাখ ৭১ হাজার টাকা।

২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ মেরামত করে আবারও উত্তোলনের রেকর্ড তৈরি হয়। এই অর্থবছরে ৭ লাখ ৫৯ হাজার ৩৩৩.২২ মেট্রিক টন পাথর উত্তোলন হয়। এর মধ্যে বিক্রি হয় ৬ লাখ ৪৮ হাজার ৮৮.৫৬ মেট্রিক টন; যার বিক্রি মূল্য ১৪৭ কোটি ৮৮ লাখ ৩১ হাজার টাকা। ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে ২৭ কোটি ৭৪ লাখ ৪৬ হাজার টাকা।

জিটিসি সূত্রে জানা যায়, দেশে প্রতি বছর ৬ হাজার কোটি টাকার (প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ টন) পাথরের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১০ লাখ টন সরবরাহ হয় মধ্যপাড়া খনি থেকে। সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা গেলে মধ্যপাড়া খনির লাভবান হওয়ার ধারা অব্যাহত থাকবে।

মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক আবু তালেব ফরাজী বলেন, এখানে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মানায় করোনায় কোনো সমস্যা হয়নি। খনি থেকে গড়ে প্রতিদিন পাথর উত্তোলন হচ্ছে ৪ হাজার মেট্রিক টন এবং বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৫ হাজার মেট্রিক টন। গত দুই বছর থেকে খনিটি লাভজনক অবস্থায় রয়েছে। লাভজনকের এ অবস্থা অব্যাহত থাকবে।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –