• মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ৫ ১৪৩০

  • || ০৮ রমজান ১৪৪৫

কোরবানি প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়ালা’র ঘোষণা

প্রকাশিত: ৯ জুলাই ২০২০  

কোরবানি হচ্ছে মনের তাকওয়া। শুধু মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই কোরবানির পশু জবাই করা। এর মধ্যে যদি অন্য কোনো চিন্তা থাকে তবে সে কোরবানি আদায় হবে না। কোরবানি প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন-

لَن يَنَالَ اللَّهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَاؤُهَا وَلَكِن يَنَالُهُ التَّقْوَى مِنكُمْ كَذَلِكَ سَخَّرَهَا لَكُمْ لِتُكَبِّرُوا اللَّهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ وَبَشِّرِ الْمُحْسِنِينَ
‘এগুলোর গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, কিন্তু পৌঁছে তাঁর কাছে তোমাদের মনের তাকওয়া। এমনিভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের বশ করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর মহত্ত্ব ঘোষণা কর এ কারণে যে, তিনি তোমাদের পথ প্রদর্শন করেছেন। সুতরাং সৎকর্মশীলদের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন।’ (সূরা হজ: আয়াত: ৩৭)।

উত্তম পশু কোরবানির পদ্ধতি ও দোয়া সম্পর্কে হাদিস-

আনাস (রা.) বলেন, নবী রাসূলুল্লাহ (সা.) এক ঈদুল আজহাতে ধূসর রঙের শিংদার দু‘টি দুম্বা কোরবানি করলেন। তিনি সে দু‘টি নিজ হাতে জবেহ করলেন এবং ‘বিসমিল্লা-হি ওয়াল্লাহু আকবার’ বললেন এবং তিনি তাঁর একটি পা সেগুলোর পাজরের ওপরে রাখলেন। (সহিহ মুসলিম, হা: ১৭/ ১৯৬৬)।

হাদিসের রাবি পরিচিতি: হাদিসের রাবিরা সবাই বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য। হাদিসের মূল রাবি আনাস (রা.) ছিলেন রাসূলুল্লাহর (সা.) একান্ত সান্নিধ্যপ্রাপ্ত একজন মর্যাদাবান সাহাবি। তিনি দীর্ঘ ১০ বছরকাল নবী (সা.) এর আন্তরিক খিদমতে নিযুক্ত ছিলেন। (উমতাদু কারী-১ম খণ্ড ৩৮ পৃ.)।

তিনি ‘ইলমে হাদিসের শিক্ষা ও প্রচারে বিশেষ খিদমত আঞ্জাম দিয়েছেন। সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমে আনাস (রা.) কর্তৃক বর্ণিত হাদিস সংখ্যা ৬৮টি। তিনি নবী (সা.) হতে মোট ২২৮৬টি হাদিস বর্ণনা করেছেন। (প্রাগুক্ত-পৃ.১৪০)।

হাদিসের ব্যাখ্যা-

‘ধূসর রঙের শিংদার দু‘টি দুম্বা: হাদিসে বর্ণিত নবী (সা.) কর্তৃক কোরবানিকৃত পশুর বর্ণনায় আগত শব্দটির অর্থ সম্পর্কে হাদিসবেক্তা মনীষীরা বিভিন্ন কথা তুলে ধরেছেন। ইমাম আবূ হাতিম বলেন, ‘তা হলো- সাদা ও লালের মিশ্রণ।’ খাত্তাবী (রা.) বলেন, ‘তা হলো-সাদার মধ্যে ফাঁকে ফাঁকে কালো পশমের ডোরা।’ (সহিহ মুসলিম শারহিলিন নাব্বী- ২য় খনণ্ড, ১৫৫পৃ.)।

‘দুম্বা দু‘টি সুন্দর ও চমৎকার শিংবিশিষ্ট’: সৃষ্টিগতভাবে শিং না থাকলেও উপযুক্ত পশুর কোরবানীর জায়েয, তবে শিংদার পশু হলে সেটি অধিক পচ্ছন্দের কারণ হবে। (প্রাগুক্ত-পৃ.১৫৫)।

কোরবানির নাজায়েজ পশুগুলো  হলো- (১) স্পষ্ট খোঁড়া, স্পষ্ট কানা, স্পষ্ট রোগা ও হাড্ডিসার জীর্ণশীর্ণ, অর্ধেক কান কাটা বা ছিদ্র করা এবং অর্ধেক শিং ভাঙ্গা। (সুনানে আত তিরমিযী, মুআত্তা, ফিকহুস সুন্নাহ-২/৩০ পৃ.কায়রো ছাপা)।

‘তিনি সে দু’টিকে নিজ হাতে জবেহ করলেন’: হাদিসের এ অংশের মর্ম হলো, কোরবানির পশু কোরবানিদাতার নিজ হাতে জবেহ করা মুস্তাহাব। তবে ওজরের কারণে অন্যের দ্বারা জবেহ করানো যায়। সেক্ষেত্রে কোরবানীদাতার সেখানে থাকা মুস্তাহাব। (সহিহ মুসলিম শারহিলিন নব্বী-২য় খণ্ড, ১৫৫পৃ.)।

‘তিনি তাসমিয়া ও তাকবীর বললেন’: অর্থাৎ- জবেহকালে ‘বিসমিল্লাহ ওয়াল্লাহু আকবার’ বললেন। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,

وَلاَ تَأْكُلُواْ مِمَّا لَمْ يُذْكَرِ اسْمُ اللّهِ عَلَيْهِ
‘আর যে জন্তু জবেহ করার সময় আল্লাহর নাম নেয়া  হয়নি তা তোমরা খেয়ো না। কেননা তা গুনাহ।’ (সূরা: আল আন‘আম, আয়াত: ১২১)।

কোরবানির পশু ও অন্যান্য প্রাণী জবেহর সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলার এটি স্পষ্ট প্রামাণ্য দলিল। সঙ্গে সঙ্গে ‘আল্লাহুম্মা তাকাব্বাল মিন্নী ওয়মিন আহলি বাইতী’ বলা দলিলসম্মত। (সহিহ মুসলিম, মিশকা-তুল মাসা-বীহ-হা: ১৩৭০)।

অন্যের পক্ষ থেকে হলে তার নাম উচ্চারণ করা বা মনে মনে তার নাম খেয়াল রাখা যায়। (মিরআত-২/৩৫০পৃ)।

এভাবে আরো দোয়া রয়েছে-

‘ইন্নী ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাাযী ফাতারাস সামাওয়াতি  ওয়াল আরদা হানীফাঁও  ওয়া মা আনা মিনাল মুশরিকীন। ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ও মাহইয়ায়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। লা শারিকালাহু ওয়াবিযালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমীন। আল্লাহুমা মিনকা ওয়া লাকা, বিসমিল্লা-হি ওয়াল্লাহু আকবার। (বাইহাকী-৯/ ২৮৭, মিরআত -৫/৯২)।

এবং নবী (সা.) তাঁর একটি পা (ডান পা) সে দু‘টি পশুর ওপর রাখলেন: (বুলূগুল মা‘আ ইতহাফিল কিরাম-সফীহুর রহমান মোবারকপুরী, দারুস সালাম, রিয়াদ,পৃ.৪০৪)।

পশুটিকে সুদূঢ় ও মজবুতভাবে চেপে রাখতে এবং জবেহকার্য নির্বিঘ্নে সুসম্পন্ন করতেই নবী (সা.) তাঁর ডান পা পশুর পাঁজরে বা ঘাড়ের এক পাশে রাখতেন।

হাদিসের শিক্ষাসমূহ: প্রতিপাদ্য হাদিসের শিক্ষাগুলো নিম্নরুপ-

(১) নিখুঁত ও দোষমুক্ত পশু কোরবানি করা মুস্তাহাব।

(২) নিজ হাতে নিজের কোরবানি পশুটি জবেহ করা উত্তম।

(৩) জবেহর প্রাক্কালে ‘বিসমিল্লাহি ওয়াল্লাহু আকবার’ বলতে হবে।

(৪) সুন্দর শিং বিশিষ্ট ও দৃষ্টি নন্দন পশু জবেহ করা উত্তম।

ইয়া আল্লাহ! একমাত্র আপনার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই মুসলিম উম্মাকে কোরবানির পশু জবাই করা তাওফিক দান করুন। আমিন।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –