• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানঃ বাংলাবান্ধা দিয়ে দেড় শতাধিক নেপালির পলায়ন

প্রকাশিত: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে চলছে ক্যাসিনোবিরোধী একের পর এক অভিযান। গণমাধ্যমের ভাষ্য, এসব অবৈধ জুয়ার আখড়া গড়ে তোলার ক্ষেত্রে শুরু থেকেই সম্পৃক্ত ছিল বেশ কিছু নেপালি নাগরিক। ১৮ সেপ্টেম্বর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু করে। সেদিন গণমাধ্যমের শীর্ষ সংবাদে এ অভিযানের খবর স্থান পায় এবং দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে। এর ঠিক একদিন পর অর্থাৎ ১৯ সেপ্টেম্বর পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর হয়ে দেড় শতাধিক নেপালি নাগরিক বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যায়। তারা প্রত্যেকেই রাজধানীর ক্লাবপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় গড়ে তোলা ক্যাসিনো কারবারে জড়িত ছিল; কেউ কেউ ছিল নানা পদে কর্মরত।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সারাদেশে যখন অবৈধ ক্যাসিনো কারবার নিয়ে তোলপাড় চলছিল, তখন একসঙ্গে নেপালের এতজন নাগরিক কীভাবে দেশ ছাড়লেন? এ ক্ষেত্রে ইমিগ্রেশনের ভূমিকাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। খোদ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও তাদের এমন অবাধে এ দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া নিয়ে বিস্মিত।

সূত্রমতে, জুয়া আর মাদকের আখড়া রাজধানীর ক্যাসিনোগুলোর সঙ্গে নানাভাবে যুক্ত বেশিরভাগ নেপালি নাগরিক এরই মধ্যে এ দেশ ছেড়েছেন। কিছু নেপালির পাসপোর্ট র‌্যাব জব্দ করায় তারা অবশ্য বাংলাদেশ ছাড়তে পারছেন না এবং সূত্রের খবর, ক্যাসিনো সম্পৃক্ততার জেরে তারা যে কোনো সময় গ্রেপ্তার হতে পারেন।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশের বাংলাবান্ধা এবং ভারতের ফুলবাড়ী এ দুই স্থলবন্দর হয়ে ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন ঢাকা ছেড়ে যাওয়া দেড় শতাধিক নেপালি নাগরিক। এ বন্দর থেকে ভারতের ভেতর দিয়ে মাত্র ৬১ কিলোমিটার দূরে নেপালের কারকরভিটা স্থলবন্দর। এ রুটে সহজেই নেপালে প্রবেশ করেন তারা।

ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান পরিচালনাকারী কর্মকর্তারা বলছেন, গত ১৮ সেপ্টেম্বর প্রথমে রাজধানীর তিনটি ক্যাসিনোয় একযোগে অভিযান শুরু করে র‌্যাব। এসব ক্যাসিনোয় অভিযানের খবর পেয়ে এর সঙ্গে যুক্ত নেপালিরা সতর্ক হয়ে যায়। এদিকে ক্যাসিনোতে অভিযান শেষ করে পরদিন ভোরে নেপালি নাগরিকদের ধরতে বিশেষ অভিযান শুরু করে র‌্যাব। কিন্তু এ অভিযানের আগেই বিভিন্নজনের সহায়তায় অধিকাংশ নেপালি ঢাকা থেকে সটকে পড়ে এবং পরদিন বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ী-কারকরভিটা স্থলবন্দর হয়ে নিজ দেশে ফিরে যায়।

অপরদিকে ক্যাসিনোয় জড়িত নেপালিদের মধ্যে কয়েকজন বাস করতেন সেগুনবাগিচার একটি ফ্ল্যাটে। জানা গেছে, ৬ নেপালি-জুয়াড়ির বসবাসে ফ্ল্যাটটি ভাড়া করে দিয়েছিলেন মোহামেডান ক্লাবের কর্মকর্তা মো. মাছুম। ১৮ সেম্পেম্বর রাতে ক্যাসিনোয় অভিযান শেষে ভোরে ওই ফ্ল্যাটে অভিযান চালায় র‌্যাব। কিন্তু এর আগেই সেখান থেকে সটকে পড়ে নেপালি জুুয়াড়িরা। ওই বাড়ির সিসিটিভিতে ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, অভিযানের আগের রাতে ১০টার পর সাদা পোশাকধারী তিন ব্যক্তি ওয়াকিটকি হাতে নেপালিদের ওই ফ্ল্যাটে প্রবেশ করেন।

জানা গেছে, তারা এ সময় পুলিশ কর্মকর্তা বলে নিজেদের পরিচয় দেন। যদিও পরবর্তী সময়ে জানা যায়, তিন ব্যক্তির মধ্যে দুজন একটি গোয়েন্দা সংস্থায় কর্মরত, অন্যজন পুলিশ সদস্য। গোয়েন্দা সংস্থার দুজনের পরিচয়ও উদ্ঘাটিত হয়। তারা হলেন সংস্থাটির প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা সহকারী প্রোগ্রামার তারিকুল ইসলাম আরিফ এবং ওয়াচার পদধারী দীপঙ্কর চাকমা; আর পুলিশের সদস্যের নাম দীপঙ্কর, আছেন কনস্টেবল পদে। রহস্যময় এ আচরণের কারণে তাদের ইতোমধ্যে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। চলছে গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশের পৃথক তদন্তও। ভোরে অভিযান চালিয়ে নেপালিদের না পেলেও র‌্যাব ওই বাসা থেকে তাদের ৭টি পাসপোর্ট জব্দ করেছে। জব্দ করা পাসপোর্ট থেকে জানা যায় তাদের নাম প্রসয়ন প্রবীন, সিধাই, ড্যাঙ্গল, ন্যাকর্মি, গৌতম, রণজিৎ ও নয়াজি।

সূত্রমতে, সহকারী প্রোগ্রামার তারিকুল ইসলাম গোয়েন্দা সংস্থাটিতে দাপ্তরিক কাজ করেন; মাঠপর্যায়ের কোনো দায়িত্বে নন। একাধিক সূত্রের তথ্য, নেপালি ও চীনাদের গড়া সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ক্যাসিনো কারবার থেকে আসা শত শত কোটি টাকা হু-ির মাধ্যমে পাচার হয়ে যেত। তাই সন্দেহভাজন নেপালি ও চীনাদের না ধরা হলে পাচারকৃত অর্থের সঙ্গে সম্পৃক্তদের বিষয়ে তথ্য পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।

দেড় শতাধিক নেপালির বাংলাবান্ধা হয়ে বাংলাদেশ ত্যাগের বিষয়ে জানতে স্থলবন্দরটির ইমিগ্রেশন ওসি ইজার উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে গ্রেপ্তার ক্যাসিনো সম্রাট যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার মামলার তদন্তভার গতকাল র‌্যাবের হাতে ন্যস্ত হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে। মামলাটির তদন্তভার চেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর হয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইতিপূর্বে আবেদন করা হয়েছিল র‌্যাবের তরফে। গুলশান থানায় হওয়া অস্ত্র ও মাদকের মামলা দুটি এতদিন তদন্ত করছিল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এ ছাড়া অর্থপাচার আইনে হওয়া আরেকটি মামলা বিধি অনুযায়ী তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –