• মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
যুদ্ধের অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয় হলে বিশ্ব রক্ষা পেত- প্রধানমন্ত্রী দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড মেডিকেল কলেজের ক্লাস অনলাইনে নেয়ার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘গণতান্ত্রিক রীতিনীতি না মানলে জনগণই বিএনপিকে প্রতিহত করবে’ লালমনিরহাটে হত্যা মামলায় বিএনপির দুই নেতা কারাগারে

চিকিৎসায় নতুন যন্ত্র উদ্ভাবন করে তাক লাগিয়ে দিলেন বিপ্লব

প্রকাশিত: ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

পেশায় যন্ত্র প্রকৌশলী। বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সাবেক এই শিক্ষার্থী এর আগে ‘ইনটেলিজেন্ট ডিসি ভেন্টিলেশন সিস্টেম’ এবং ‘বন্যা সতর্কীকরণ যন্ত্র’ উদ্ভাবন করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। এবার আরো দুটি নতুন যন্ত্র উদ্ভাবন করে তাক লাগিয়ে দিলেন। তিনি আর কেউ নন, তিনি হলেন বগুড়ার ছেলে মাহমুদুন নবী বিপ্লব।

শূন্য থেকে ছয় মাস বয়সী কোনো শিশু বিছানায় প্রস্রাব করলে তা জানিয়ে দেবে তার উদ্ভাবিত যন্ত্র। পাশাপাশি ‘স্যালাইন অ্যালার্ম সিস্টেম’ নামে আরেকটি যন্ত্র উদ্ভাবন করেছেন তিনি। স্যালাইন শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে সেন্সরের মাধ্যমে ডিউটিরত নার্স ও রোগীর স্বজনদের সতর্ক বার্তা জানিয়ে দেবে যন্ত্রটি।

এর আগে তার দুটি যন্ত্র অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পে উপস্থাপন করা হয়। এরপর তাকে সরকারি সহযোগিতা পাওয়ার আশ্বাস দেয়া হয়। তবে এখন পর্যন্ত তাকে কোনো সহযোগিতা করা হয়নি।

বিপ্লবের নতুন উদ্ভাবিত দুটি যন্ত্র হলো- ‘বেবি ইউরিন অ্যালার্ম বেড’ এবং ‘স্যালাইন অ্যালার্ম সিস্টেম’। আড়াই বছর আগে নিজের সন্তান জন্মের পর বিছানায় প্রস্রাব করে অসুস্থ হওয়ায় ‘বেবি ইউরিন অ্যালার্ম বেড’ উদ্ভাবন করেন বিপ্লব। পাশাপাশি অসুস্থ রোগীদের কথা বিবেচনা করে ‘স্যালাইন অ্যালার্ম সিস্টেম’ উদ্ভাবন করেন তিনি।

মাহমুদুন নবী বিপ্লব বলেন, আমার সন্তান বিছানায় প্রস্রাব করে ৩-৪ ঘণ্টা ওই প্রস্রাবের মধ্যেই শুয়ে থাকত। ভেজা বিছানায় থেকে ঠান্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয় শিশুটি। তখন আমি ভাবি, শিশুরা তো কথা বলতে জানে না। প্রস্রাব করে অনেক সময় কান্নাও করে না। তাই তাদের জন্য এমন একটি বিছানা যদি করা যায়, যে বিছানায় শিশু প্রস্রাব করার সঙ্গে সঙ্গে অ্যালার্ম বেজে উঠবে। তাৎক্ষণিক মা-বাবা কিংবা পরিবারের অন্য কেউ এসে শিশুর বিছানা বদলে দিতে পারবেন। এরপর প্রায় দু’বছর গবেষণা করে ‘বেবি ইউরিন অ্যালার্ম বেড’ তৈরি করি।

তিনি বলেন, এই বিছানা তৈরিতে চায়নার একধরনের সেলুলয়েডের সুতা ও ওয়াটার প্রুফ (পানি নিরোধ) কাপড় ব্যবহার করা হয়েছে। দুটি উপাদানই চায়না থেকে আনা হয়েছে। একটি বিছানা তৈরি করতে খরচ পড়েছে ১ হাজার ৩৫০ টাকা। এটি ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি করা হয়। রাবার ক্লথের মতো দেখালেও এই বিছানায় রয়েছে সেলুলয়েডের সুতা দিয়ে তৈরি নকশা করা সার্কিট। যেটি শিশুর শরীরের ক্ষতি করবে না, আবার প্রস্রাব কিংবা পানি চিনতে পারবে। এই বিছানায় রয়েছে একটি কন্ট্রোল সার্কিট ও একটি ওয়্যারলেস কলিংবেল। বিছানায় শিশু প্রস্রাব করলে সিস্টেমটি কলিং বেলে সিগন্যাল পাঠাবে। সঙ্গে সঙ্গে কলিংবেল বেজে উঠবে। এতে জানা যাবে শিশু প্রস্রাব করেছে।

এরই মধ্যে বিপ্লবের তৈরি ‘বেবি ইউরিন অ্যালার্ম বেড’ বগুড়া শহরের বড় বড় মেগা শপে পাওয়া যাচ্ছে। ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি বেড।

পাশাপাশি আরো একটি যন্ত্র উদ্ভাবন করেছেন বিপ্লব। সেটি হলো ‘স্যালাইন অ্যালার্ম সিস্টেম’। এটি ডিজিটাল সিস্টেম। রোগীকে স্যালাইন দেয়ার পর যখন স্যালাইন শেষ হবে তার আগমুহূর্তে সেন্সরের মাধ্যমে ডিউটিরত নার্সকে অবহিত করবে যে আপনার রোগীর স্যালাইন শেষ হয়ে গেছে।

একটি ক্লিনিক বা হাসপাতালে অনেক কেবিন বা ওয়ার্ড থাকে। প্রতিটি কেবিন বা ওয়ার্ডের সিরিয়াল নম্বর থাকে। ওই ক্লিনিক বা হাসপাতালে নার্স থাকে রোগীর তদারকি করার জন্য। দায়িত্বরত নার্স বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে নতুন স্যালাইন দিতে পারবেন।

এই যন্ত্রের কার্যকারিতা সম্পর্কে মাহমুদুন নবী বিপ্লব বলেন, মনে করুন হাসপাতালে ১০টি কেবিন এবং একটি ওয়ার্ড আছে। ওয়ার্ডে ১০টি বেড আছে। সর্বমোট বেড হলো ২০টি। কিন্তু সেখানে নার্স আছেন চারজন। ২০টি বেডের জন্য চারজন নার্সের পক্ষে সব রোগীর খোঁজখবর রাখা সম্ভব হয় না। তাই দেখা যায় রোগীর স্যালাইন শেষ হওয়ার পর রক্ত স্যালাইনের মধ্যে ওঠে যায়। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য আমি ‘স্যালাইন অ্যালার্ম সিস্টেম’ উদ্ভাবন করেছি।

তিনি বলেন, দেখা যায় হাসপাতাল ও ক্লিনিকের একটি ডিউটি রুম থাকে। যেখানে নার্সরা অবস্থান করেন। এই ডিভাইসটি দুটি অংশে বিভক্ত। এর একটি হলো সেন্সর ও অপরটি হলো কলিং বেল। তাই ২০টি বেডের জন্য ২০টি সেন্সর থাকবে প্রতিটি স্যালাইনের সঙ্গে। সেই সঙ্গে ২০ কলিং বেল থাকবে নার্সের ডিউটি রুমে। বেডের সিরিয়াল নম্বর অনুযায়ী যে বেডের রোগীর স্যালাইন শেষ হবে সঙ্গে সঙ্গে সেই বেডের বেলটি বেজে উঠবে। তখন সঙ্গে সঙ্গে ডিউটিরত নার্স ওই বেডে গিয়ে স্যালাইনটি রোগীর শরীর থেকে খুলে দেবেন। ফলে রোগী বিপদ থেকে রক্ষা পাবেন।

যন্ত্র প্রকৌশলী বিপ্লব আরো বলেন, স্যালাইন অ্যালার্ম হলো ডিজিটাল সিস্টেম। স্যালাইন শেষ হওয়ার আগমুহূর্তে সিস্টেমটি সেন্সরের মাধ্যমে বিষয়টি জানাবে ডিউটিরত নার্স ও রোগীর স্বজনদের। এটি করতে প্রতিটি স্যালাইনের সঙ্গে একটি করে সেন্সর লাগাতে হবে। সবমিলে প্রতিটি ডিভাইসের জন্য ৬ থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ হবে। পরিমাণে বেশি তৈরি করলে খরচ কম হবে।

এর আগে বিপ্লবের দুটি উদ্ভাবিত যন্ত্র অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পে প্রদর্শন করা হয়। ওই দুই উদ্ভাবনকে গ্রহণ করে সহযোগিতার আশ্বাস দেন এটুআই প্রকল্পের কর্মকর্তারা।

দুটি উদ্ভাবনের একটি ছিল ‘ইনটেলিজেন্ট ডিসি ভেন্টিলেশন সিস্টেম’ এবং অন্যটি ‘বন্যা সতর্কীকরণ যন্ত্র’। নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংকেত পাঠাতে থাকবে ‘বন্যা সতর্কীকরণ যন্ত্র’। এমনকি বন্যার পানি বাড়ার আগে থেকে অবিরাম সাইরেন বাজিয়ে নদী তীরবর্তী জনপদের লোকজনকে সতর্ক করবে যন্ত্রটি। এতে সুযোগ মিলবে জানমাল নিয়ে নিরাপদ দূরত্বে সরে যাওয়ার। ‘বন্যা সতর্কীকরণ যন্ত্রটি’ তৈরিতে খরচ পড়বে পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা।

পাশাপাশি ‘ডিসি ভেন্টিলেশন সিস্টেম’ হলো- বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী একটি যন্ত্র। যন্ত্রটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের (এসি) বিকল্প হিসেবে কাজ করে। তৈরিতে খরচও তুলনামূলক কম। ৩৫-৩৬ হাজার টাকা খরচ পড়বে। দুই টনের একটি এসি (দুই হাজার ৪০০ ওয়াট) প্রতি ঘণ্টায় ১৬ ওয়াট বিদ্যুৎ খরচ করে। সেখানে ‘ডিসি ভেন্টিলেশন সিস্টেমে’ (৯৫ ওয়াট) প্রতি ঘণ্টায় বিদ্যুৎ খরচ হবে মাত্র ১ দশমিক ৫২ ওয়াট। এতে করে বাতাসে কার্বন নির্গমন অনেক কমে পরিবেশ দূষণ রোধ হবে।

অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পের বগুড়ার বোর্ড সদস্য ও বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ শাহাদৎ হোসেন বলেন, বিল্পবের উদ্ভাবন আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি। তার আবিষ্কৃত যন্ত্রগুলো সুন্দরভাবে কাজ করে। আমরা এ ব্যাপারে সরকারের সহযোগিতার জন্য সুপারিশ করেছি।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –