• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

চীনের মহাপ্রাচীর ‘রহস্য’

প্রকাশিত: ২৮ নভেম্বর ২০১৮  

পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যের একটি চীনের মহাপ্রাচীর। বলা হয়, এটিই পৃথিবীর একমাত্র স্থাপনা যা চাঁদ থেকেও দেখা যায়। চীনের মহাপ্রাচীরের দৈর্ঘ্য প্রায় ৬২৭৬ কিলোমিটার। তবে এই প্রাচীরের শাখা দেয়ালগুলো এক করলে দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় প্রায় ৫৫০০ মাইল। এই মহাপ্রাচীরের চাইনিজ নাম চাংছ্যাং, যার অর্থ লম্বা দেয়াল। ২৩০০ বছরের পুরোনো এই প্রাচীরের আদ্যোপান্ত জানবো আজ!

 

1.চীনের মহাপ্রাচীর ‘রহস্য’

কে এই মহাপ্রাচীরের নির্মাতা

কিন সাম্রাজ্যের প্রথম সম্রাট এই মহাপ্রাচীরটি নির্মাণ করেছেন-এই ধারণা বেশিরভাগ মানুষের। তা আসলে পুরোপুরি সত্য নয়। অনেক ইতিহাসবিদ, অনেক তথ্যের ভিত্তি প্রচলিত এই কথাকে মানতে নারাজ। তাদের মতামত অনু্যায়ী, ঝাউ সাম্রাজ্যের শুরুতে চীনের মহাপ্রাচীর নির্মাণের উদ্যোগ নেন সম্রাট ঝাউ। তিনি প্রথম রাজ্যের সীমানা বরাবর বড় প্রাচীর তৈরির উদ্যোগ নেয়। খ্রিস্টপূর্ব ৮ম শতাব্দীতে এই কাজ শুরু হয় বলে অনেকের ধারণা। তবে মূল কাজ শেষ হয় কিন সাম্রাজ্যের সময়ই। হান (২০৬ খ্রীষ্টপূর্ব থেকে ২২০ খ্রীষ্টাব্দ) সাম্রাজ্যের সময় এই প্রাচীর আরো দীর্ঘ করা হয়েছিলো।

পরবর্তীতে মিং সাম্রাজ্যের সময় (১৩৬৮-১৬৪৪) চীনের মহাপ্রাচীর সংস্কার করা হয়। তখনই এই প্রাচীর আধুনিক রূপ পায়। তাই অনেকেই চীনের মহাপ্রাচীরকে ‘মিং-এর দেয়াল’ বলে থাকে। ধারণা করা হয়, ১মিলিয়নের অধিক শ্রমিক বিভিন্ন সময়ে এই প্রাচীর নির্মাণের জন্য কাজ করেছে। বিজ্ঞানীদের মতে, এই প্রাচীর তৈরীর সময় বেশিরভাগ শ্রমিক মারা যায় এবং অনেককে সে স্থানেই দাফন করা হয়েছিলো।

 

2.চীনের মহাপ্রাচীর ‘রহস্য’

গৌরবান্বিত এই প্রাচীরটি তৈরীর নেপথ্যে ছিলো কঠোর পরিশ্রম, মেধা ও মননশীলতা। এই প্রাচীরটি তৈরীর সময় আশেপাশে যা পাওয়া গিয়েছিলো প্রায় সব ব্যবহার করা হয়েছিলো। পাথর থেকে কাঠ বাদ যায়নি কিছুই। মিং সাম্রাজ্যের সময় যখন দেয়ালটির পুনর্নির্মাণ করা হয়েছিলো তখন পাথরের জায়গায় ইট ব্যবহার করা হয়েছিলো!

মহাপ্রাচীরের নেপথ্যে

চীনের মহাপ্রাচীর তৈরীর মূল উদ্দেশ্য ছিলো বাইরের আক্রমণ থেকে সাম্রাজ্যকে রক্ষা করা। সে সময় মঙ্গলীয়রা খুবই আক্রমণাত্মক জাতি হিসেবে পরিচিত ছিলো। তারা বিভিন্ন সাম্রাজ্য জয় করার জন্য তীরন্দাজ বাহিনী গড়ে তোলে, যাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ছিলো প্রায় অসম্ভব। মূলত তাদের রুখতেই এই মহাপ্রাচীর তৈরীর উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো। কারণ, কিন সি হিউয়াং চেয়েছিলেন তার উত্তরাঞ্চলের সাম্রাজ্য সম্পূর্ণ শত্রু মুক্ত রাখতে। এজন্যই হাজারটি টাওয়ারসহ একটি বিশাল প্রাচীর তৈরী করা হয়েছিলো। আর এই টাওয়ারগুলোতে সবসময়ই সৈন্য রাখা হতো, যাদের কাজ ছিলো বাইরের শত্রুর গতিবিধির উপর দৃষ্টি রাখা। প্রতিরক্ষার পাশাপাশি সীমান্ত হিসেবেও চীনের মহাপ্রাচীরের বড় ভূমিকা ছিলো সে সময়ে। তাছাড়া বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মহাপ্রাচীরটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

 

3.চীনের মহাপ্রাচীর ‘রহস্য’

এটা শুধুই দেয়াল?

মহাপ্রাচীরটি একটা অবিচ্ছিন্ন লম্বা দেয়াল তা সত্য। এছাড়াও এই প্রাচীরটিতে রয়েছে বিভিন্ন টাওয়ার, যেখানে সেনারা পাহারায় থাকতো এবং আরো আছে সেনাদের জন্য আবাসস্থল। ধারণা করা হয় মিং সাম্রাজ্যের সময় প্রায় ১০ লক্ষ সেনা এই মহাপ্রাচীরটির পাহারায় নিয়োজিত থাকতো। এটি ছিলো তাদের সামরিক প্রতিরক্ষার দূর্গ।

 

4.চীনের মহাপ্রাচীর ‘রহস্য’

ধ্বংসের পথে এই প্রাচীর

বেইজিং-এর দিকে থাকা প্রাচীরটি যে অংশে পর্যটকদের ভ্রমণের সু্যোগ করে দেয়া হয়েছে। সেটা ছাড়া প্রাচীরের অন্যান্য অংশ ধ্বংসের আশঙ্কায় আছে। বর্তমানে প্রাচীরের প্রায় ২০০০ কিলোমিটার অর্থাৎ ৩০ শতাংশ ক্ষয়ক্ষতির শিকার। এর মূল কারণ প্রাকৃতিক দুর্যোগ। যদিও প্রাচীরটি টিকিয়ে রাখার জন্য চীনের সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা করে চলছে। মহাপ্রাচীরের সুরক্ষার জন্য আইনও প্রণয়ন করেছে চীন সরকার।

 

5.চীনের মহাপ্রাচীর ‘রহস্য’

দিনে ৭০ হাজার লোকের ভীড়

চীনের মহাপ্রাচীর দেখতে হাজার হাজার পর্যটক ভীড় জমায় প্রতিদিন। সবচেয়ে বেশি ভীড় হয় বেডেলিং-এর অংশে। ২০০১ সালে এই অংশে প্রায় ৬ কোটি মানুষ পরিদর্শন করতে আসেন। এই প্রাচীর ঘুরতে আসার মৌসুমে পর্যটকের সংখ্যা দিনে ৭০ হাজার ও ছাড়িয়ে যায়!

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –