• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাস, আজ ৭৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। বন্যায় দুবাই এবং ওমানে বাংলাদেশীসহ ২১ জনের মৃত্যু। আন্তর্জাতিক বাজারে আবারও বাড়ল জ্বালানি তেল ও স্বর্ণের দাম। ইসরায়েলের হামলার পর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানে।

জলে ডুবে জীবিকা

প্রকাশিত: ১২ মার্চ ২০২১  

কয়েক মিনিট পর পর নদীর জলে ডুবে পাথর তুলেন কাবুল শেখ। পাথর তোলার সরঞ্জাম নিয়ে সকাল সকাল ছুটে আসেন নদীতে পাথর তুলতে সঙ্গে আরো দুজন। সারাদিন জলে ডুবে ডুবে পাথর তুলে হাতে আসে মাত্র ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। এ নিয়েই চলছে টানাপোড়নের সংসার জীবন। 

এক সময় পাথরের রাজত্বে কাজ করে যেখানে দৈনন্দিন শ্রমের মূল্য আসতো হাজার থেকে দু’হাজার টাকা। এখন মাত্র ২০০-৩০০ টাকাতেই চলছে কষ্টের সংসার। এ চিত্র যেন পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার উপজেলার দেবনগর ইউনিয়নের পাথরঘাটা এলাকার প্রবাহিত করতোয়া নদীর শ্রম জীবিদের আর্তনাদ।

পাথরের রাজত্ব বলা হয়ে থাকে ভজনপুরকে। এলাকায় এসময় টনকে টন পাথর রফতানি হয়েছে। পরিবেশ ধ্বংসাত্মক যন্ত্র ড্রেজার মেশিনে উত্তোলিত হতো এ পাথর। অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিনে উত্তোলন করে একশ্রেণির সুবিধাবাদী ব্যক্তি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে উঠলেও ভাগ্য খুলেনি সাধারণ দিনমজুর শ্রমিকদের।

জেলায় পুলিশ সুপার মুহম্মদ ইউসুফ আলী যোগদানের পর থেকে অবৈধভাবে ধ্বংসাত্মক যান্ত্রিক পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলন বন্ধ করে দেন। প্রকৃতি রক্ষা পেলেও কৃষি অনুপযোগী হয়ে পড়েছে এখানকার ভূমি। এতে চরম দরিদ্রতার দিন গুনতে হচ্ছে এ এলাকার হাজার হাজার পাথর শ্রমিককে। 

উপজেলার ভজনপুরে প্রবাহিত নদী করতোয়া নিজবাড়ি, পাথরঘাটা, আঠারখাড়ি, শেখগছ, ময়নাগুড়ী ও কাকপাড়া, ভেলকুপাড়া ও বোদাপাড়া হয়ে জেলায় প্রবেশ করেছে। ড্রেজার মেশিনের পাথর সাইট বন্ধ থাকায় এ নদী থেকে পাথর ও বালু উত্তোলন করে জীবিকা নির্বাহ করছে প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক।

নদীটি ঘুরে দেখা যায়, পানিতে ডুবে ডুবে পাথর তুলছে কাবুল শেখ, মোখলেসুর, কামালসহ ৫-৮ জনের শ্রমিক। তাদের কাউকে দেখা যায় বালু তুলতে। তারা নৌকায় বালু জমা করে তীরে এনে স্তূপ করছেন। এ নদীতে শতাধিকের বেশি নৌকা রয়েছে।

পাথরঘাটা গ্রামের পাথর শ্রমিক কাবুল শেখ বলেন, ভাই পাথরের সাইট বন্ধ। সকাল সকাল এ নদীতে নেমে পড়ি। বুক-গলা পানিতে ডুবে ডুবে পাথর তুলি। সারাদিনে পাথর তুলে মহাজনের কাছে বিক্রি করে ২০০-৩০০ টাকা মজুরি পাই। এটা নিয়েই চলছে আমার কষ্টের সংসার।

আইনুল হকসহ কয়েকজন বালু শ্রমিক বলেন, আমরা দিনে ৮ জন মিলে নদী থেকে ৫০০ সিএফটি বালু তুলতে পারি। এই ৫০০ সিএফটি বালুর দাম পড়ে ২ হাজার টাকা। এ টাকায় সংসার চলছে না অন্য কোনো কাজ নেই যে করব, খুব কষ্টে দিন যাচ্ছে।

সরেজমিন ঘুরে আরো দেখা যায়, এ অঞ্চলের হাজার হাজার নারী-পুরুষ ও নারী পাথর শ্রমে জড়িত। কৃষির উপযোগী জমি না থাকায় একমাত্র পাথর উপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করতে হয় তাদের। পুরুষরা পাথর তুলেন, নারীরা সেই উত্তোলিত পাথর বাছাই ও মেশিনে ভাঙানোর কাজ করেন।

২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ রয়েছে ড্রেজার দিয়ে পাথর উত্তোলন। কাজ না থাকায় শ্রমিকদের খেয়ে-না খেয়েও দিন অতিবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অনেক শ্রমিক। শ্রম নির্ভর কোনো কল কারখানা না থাকায় কাজের অভাবে না খেয়ে স্ত্রী-সন্তান ও পরিবারের মৌলিকা চাহিদা পূরণে ভীষণ হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। তার মধ্যে গত বছর মার্চ থেকে মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপে লকডাউনসহ চলমান বিপর্যস্ত পরিস্থিতির কারণে চরম দরিদ্রতার মুখোমুখিতে এ অঞ্চলের সাধারণ শ্রমিকরা। 

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –