• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
যুদ্ধের অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয় হলে বিশ্ব রক্ষা পেত- প্রধানমন্ত্রী দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড মেডিকেল কলেজের ক্লাস অনলাইনে নেয়ার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘গণতান্ত্রিক রীতিনীতি না মানলে জনগণই বিএনপিকে প্রতিহত করবে’ লালমনিরহাটে হত্যা মামলায় বিএনপির দুই নেতা কারাগারে

‘জয়বাংলা পল্লী’তে ঠাঁই পাচ্ছে ৪৭৬৬ পরিবার

প্রকাশিত: ২১ জানুয়ারি ২০২১  

‘সারাজীবন কাঁচা মাটি আগুনত পুড়ি হাঁড়ি-পাতিল বানাইছু, কিন্তু স্বপনেতও ভাবো নাই-কাঁচা মাটি পুড়ি ইট বানেয়া পাকা বাড়িত থাকিবা পারিমো। দুইটা বেটিক বিহা (বিয়ে) দিবার পর আর সহায়-সম্বলও নাই। সেইতানে চিন্তা করা তো দূরের কতা এই বুড়া বয়সোত আসি পাকা বাড়িত শুতিবা পারিমো, সেইটা স্বপনেতও ভাবি নাই। কিন্তু সরকার এখন হামাক পাকা বাড়ি করি দিছে। এখন মনে হচে জীবনটা স্বার্থক।’

চোখে-মুখে অন্যরকম এক উচ্ছ্বাস নিয়ে এমনই কথা জানাচ্ছিলেন, দিনাজপুরের বিরল উপজেলার শ্রীকুষ্ণপুর গ্রামের ৬৭ বছর বয়স্ক অভাবী মৃৎশিল্পী রম্বিকা চন্দ্র পাল। অভাবের সংসারে তার সন্তান বলতেই দুই মেয়ে। সহায়-সম্বল বিক্রি করে দুই মেয়ের বিয়ে দেয়ার পর এখন স্ত্রী নিয়ে থাকেন অন্যের জায়গায় ঝুপড়িঘর বানিয়ে।

সারাজীবন হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে এখন বয়সের ভারে নুইয়ে পড়েছেন। আর কোনো সন্তান না থাকায় দু-মুঠোর আহার জোগাতেই হিমসিম খেতে হয় তাকে। এই শেষ জীবনে বাড়ি বানানোর কথা কখনোই ভাবতে পারেননি তিনি। তাও আবার পাকা বাড়ি।

এতসবের মধ্যে শেষ জীবনে সরকারের দেয়া পাকা বাড়িতে ঠাঁই পেয়ে আনন্দে উদ্বেলিত তিনি। দিনাজপুরের বিরল উপজেলার বিজোড়া গ্রামে ‘জয়বাংলা পল্লী’তে তিনি পেয়েছেন একটি পাকা বাড়ি।

একই পল্লীতে পাকা বাড়ি পাওয়া আক্তার বানু জানান, ২০ বছর আগে দিনমজুর শফিকুল ইসলামের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। স্বামীর জমি না থাকায় মানুষের পুকুরপাড়ে ঝুপড়ি বানিয়ে আছেন। তাও আবার মাঝে মাঝে জোরে বাতাস হলে সব উড়িয়ে নিয়ে যায়। স্বামীর যা রোজগার তা পেট শান্ত করতেই চলে যায়। স্থায়ী ঠিকানার কথা ভাবতেই পারেননি। নিজের বাড়ি হবে, তাও আবার পাকা বাড়ি-এটি স্বপ্নেও ভাবেননি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সরকারের দেয়া এমন পাকা বাড়িতে ঠাঁই মিলবে।

এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতেই দুই নয়ন দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে তার। অতীতের দুর্বিষহ জীবন আর বর্তমানের এসব কথা বলতে বলতে এক পর্যায়ে আবেগাপ্লুত হয়ে আনন্দের কান্নায় হু হু করে কেঁদে উঠেন তিনি।

শুধু রম্বিকা চন্দ্র দাস আর আক্তার বানু নয়, ভিন্ন ভিন্ন হলেও অনুরূপ প্রতিক্রিয়া দিনাজপুর জেলার প্রায় ৪ হাজার ৭৬৬টি গৃহহীন পরিবারের। মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে দিনাজপুরে পাকা বাড়ি পাচ্ছে এসব গৃহহীন পরিবার। দিনাজপুরে গৃহহীনদের জন্য এসব পাকা বাড়ি নির্মিত পল্লীর নাম দেয়া হয়েছে ‘জয়বাংলা পল্লী’।

সংশ্লিষ্টরা জানান, যেই ‘জয়বাংলা’ স্লোগান দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে একটি মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এই দেশ স্বাধীন হয়েছিল, সেই স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রে মানুষ গৃহহীন থাকবে, তা হয় না। তাইতো মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রথম পর্যায়ে দিনাজপুর জেলায় সেই স্লোগানের নামকরণে ‘জয়বাংলা পল্লী’তে ঠিকানা পাচ্ছে প্রায় ৫ হাজার গৃহহীন পরিবার। এতদিন গৃহহীন থাকলেও স্বাধীনতার ৫০ বছরে সৌন্দর্যমণ্ডিত নতুন পাকা ঘরে স্থায়ী ঠিকানা হতে যাচ্ছে-এটি নিশ্চিত হওয়ার পর আনন্দে উদ্বেলিত সুবিধাভোগী গৃহহীন পরিবারগুলো।

দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা জাবের মো. সোয়াইব জানান, সরকার এসব বাড়ি নির্মাণ করে দিলেও নিজের বাড়ির কাজ যাতে নিজেই ভালোভাবে বুঝে নিতে পারেন-সেজন্য আগেই মালিকানা বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে গৃহহীন পরিবারগুলোকে। এজন্য তারা নিজেই তদারকি করে নিজের বাড়ির কাজটি ভালোভাবে বুঝিয়ে নিচ্ছেন। এতে একদিকে তাদের বাড়ির প্রতি মালিকানা প্রতিষ্ঠা ও আন্তরিকতা বাড়ছে, অন্যদিকে কাজের মানও ভালো হচ্ছে।

দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল আলম জানান, মুজিববর্ষ উপলক্ষে গৃহহীনদের প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় দিনাজপুর জেলায় প্রথম পর্যায়ে বরাদ্দ পাওয়া গেছে ৪ হাজার ৭৬৬টি বাড়ি। এসব পাকা বাড়ি নির্মিত গ্রামগুলোর নাম দেয়া হয়েছে ‘জয়বাংলা ভিলেজ’। বাড়িগুলোর নির্মাণকাজ প্রায় শেষপর্যায়ে। আগামী ২৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহহীনদের মাঝে এসব বাড়ি বুঝিয়ে দেবেন বলে জানান জেলা প্রশাসক।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –