• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

ডাকসু প্রার্থিতা ঘোষণা নিয়ে দোটানায় ছাত্রদল

প্রকাশিত: ৩০ জানুয়ারি ২০১৯  

দীর্ঘ ২৮ বছরের বেশি সময় পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। এক বছর মেয়াদের এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এরইমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। ক্যাম্পাস জুড়ে এখন আলোচনার অন্যতম ইস্যু এবং বহুল প্রত্যাশিত এ নির্বাচন নিয়ে ছাত্রলীগসহ অন্যান্যদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য থাকলেও দলীয় প্রার্থী নিয়ে দোটানায় আছে ছাত্রদল। 

ছাত্রদলের একাধিক নেতা জানান, ২০১০ সাল থেকে তারা ক্যাম্পাসের বাইরে। ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির মেয়াদ অনেক আগেই উত্তীর্ণ হয়েছে। বিভিন্ন কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করাও সম্ভব হয়নি। গঠন হয়নি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটিও। ফলে ডাকসু ও হল সংসদগুলোয় প্রার্থী দেয়ার ক্ষেত্রে নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। এসব কারণে প্রার্থিতা ঘোষণা নিয়ে দোটানায় ছাত্রদল নেতারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রদলের এক সিনিয়র নেতা জানান, এর আগে অন্তত পাঁচবার ডাকসু নির্বাচন আলোচনায় আসলেও শেষ মুহূর্তে আলোর মুখ দেখেনি। ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার সক্ষমতা নিয়েও দলের মধ্যে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। তবে নির্বাচনে যাওয়ার জন্য ক্যাম্পাসে সহাবস্থানের বিষয়টি নিশ্চিতের দাবি এখন ছাত্রদল নেতাদের।

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান বলেন, মধুর ক্যান্টিন ও আবাসিক হলগুলোতে সহাবস্থান নিশ্চিতের সিদ্ধান্ত বা পরিবেশ কার্যকর হওয়ার পরই ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দাবি জানানো হয়েছে।

ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার সিদ্দিকী জানান, আমরা ডাকসু নির্বাচনে অংশ নেবো। তবে আমরা সহাবস্থান নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রার্থিতার বিষয়টি বিবেচনা করবেন বলে আশা করি।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ডাকসু প্রতিষ্ঠা হয় ১৯২৪ সালে। এরপর ১৯৫৩ সালে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭১ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সাতবার ডাকসু নির্বাচন হয়। ১৯৯০ সালে জাতীয় পার্টির সরকার পতনের পর গেলো ২৮ বছর এই ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়নি।

এর মধ্যে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত সাত বছরে তিনবার তফসিল ঘোষণার পরও শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হয়নি। কখনো ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠন চায়নি, কখনো বিরোধী দলে থাকা ছাত্রসংগঠনের তীব্র আপত্তিসহ বিভিন্ন কারণে ডাকসু নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ১৯৯৮ সালে ডাকসু'র কমিটি ভেঙে দেয়া হয়। ওই সময় পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচনের ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু পরবর্তী ২০ বছরে পাঁচজন উপাচার্য দায়িত্ব পালন করলেও ডাকসু নির্বাচন নিয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।

এর মধ্যে ডাকসু নির্বাচনের জন্য একাধিকবার আন্দোলন হয়েছে। ২০১২ সালে বিক্ষোভ, ধর্মঘট, কালো পতাকা মিছিল এবং ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে নির্বাচনের দাবি জানান সাধারণ শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা। ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী অধিকার মঞ্চ’ তৈরি করে লাগাতার কর্মসূচিও চলে কয়েক মাস। ২০১২ সালের ২১ মার্চ হাইকোর্টে আন্দোলনকারী ২৫ শিক্ষার্থী রিট আবেদন করেন।

২০১৭ সালে আবারো ‘শিক্ষার্থী অধিকার মঞ্চ’ ও পরে ‘ডাকসুর দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। ওই বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর বামপন্থী সংগঠনগুলো ও আন্দোলনকারীরা মিলে উপাচার্যকে স্মারকলিপি দেন। এর মধ্যে ওই বছরের ২৫ নভেম্বর ওয়ালিদ আশরাফ নামের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্ধ্যকোর্সের এক শিক্ষার্থী একক অনশন শুরুর পর থেকে ডাকসু নির্বাচনের দাবি জোরালো হয়ে ওঠে।

এদিকে, ২০১২ সালে শিক্ষার্থীদের রিট আবেদনে সাড়া দিয়ে গত বছরের ১৭ জানুয়ারি হাইকোর্ট পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচনের আদেশ দেন।

গঠনতন্ত্রে ১৯৯১ সালে আনা সংশোধনী অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত নিয়মিত শিক্ষার্থীরা ভোটার ও প্রার্থী হতে পারবেন। যারা এমফিল ও পিএইচডি করছেন, তারা ভোটাধিকার পেলেও প্রার্থী হতে পারবেন না। আর বিভিন্ন বিভাগে সান্ধ্যকালীন কোর্স বা অন্য কোনোভাবে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখা শিক্ষার্থীরা ভোটার বা প্রার্থী হতে পারবেন না।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –