• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

তারেকের ছকে খালেদা আউট

প্রকাশিত: ২৭ নভেম্বর ২০২০  

তারেক রহমানই বিএনপির মূল নেতা। ব্যর্থ নেতৃত্ব দিয়ে খালেদা জিয়া আউট। এখন শুধু ঘোষণা বাকি। লন্ডন থেকেই বিএনপির নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারেক। সরকারের করুণা নিয়ে আপসহীন নেত্রী মুক্তি পাওয়ার পর বয়স, অসুস্থতা ও শারীরিক অবস্থা সব মিলিয়ে আগের জায়গায় নেই খালেদা জিয়া।

স্বাভাবিক অবস্থায় তিনি এখন হাঁটতে ও দাঁড়াতেও পারছেন না। সুস্থ হয়ে রাজনীতিতে ফিরে আসার সক্ষমতা অনেকটাই হারিয়েছেন। সঙ্গে আছে জেল ও মামলা আছে বহু। নিজ দলেই খালেদা জিয়ার অনুগত ও সম্মানের জায়গা কমে গেছে।

এখন নানা চাপে পড়ে সম্মান বাঁচাতে অঘোষিতভাবেই দলের হাল ছেলের হাতেই ছেড়ে দিয়েছেন। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর থেকেই কার্যত দল চলছে তারেক রহমানের নেতৃত্বে। এখন খালেদা জিয়া শুধু চেয়ারপারসন পদে আছেন।

দলটির হাইকমান্ডের ভাষ্যমতে, নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়া বন্দি হওয়ার পর নির্দেশনা ও অঙ্কিত ছকে আন্দোলন না হওয়া, শতভাগ ব্যর্থতার ইঙ্গিত পেয়েও নির্বাচনে যাওয়া, নির্বাচিত পাঁচ-ছয় সংসদ সদস্যকে সংসদে পাঠানো, খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে স্থায়ী কমিটিতে লোক বাড়ানো এগুলোর মাধ্যমেই দলে খালেদা জিয়ার অবস্থানকে নিম্নস্তরে নামিয়ে দেয়া হয়েছে।

এছাড়া খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে নতুনভাবে আনা হয়েছে অতীতে খালেদা জিয়ার ব্যর্থতাগুলো। বারবার আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েও ব্যর্থ হওয়া, আলোচনা-সমালোচনার পরও খালেদা জিয়ার একক অবস্থানের কারণে জামায়াতকে সঙ্গে রাখা, যার ফলে আন্তর্জাতিকভাবে বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এবং ৬৪ জেলাসহ সাংগঠনিক ইউনিটিতে কমিটি গঠনে ব্যর্থতাগুলো দলের তরুণদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে।

এসব অবস্থানের কারণে দলে যারা খালেদা জিয়ার অনুসারী রয়েছেন তারাও চুপ হয়ে গেছেন। বয়স্করা শেষ সময়ে সম্মান রক্ষায় কেউ আর খালেদা জিয়ার পক্ষ নিয়ে কথা বলতে পারছেন না। তারেক রহমান যে নির্দেশনা দেন তাই মেনে চলছেন।

খালেদা জিয়ার পরিবার সূত্রে জানা গেছে, তিনি এখন রাজনীতিতে আর হস্তক্ষেপ করতে চাচ্ছেন না। নেতৃত্ব নিয়ে প্রকাশ্যে আসার সম্ভাবনা অনেকটাই কম। সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক থাকাই তার এখন প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দল এখন যেভাবে চলছে এভাবেই তারেক রহমানের নেতৃত্বে চলবে। প্রেক্ষাপট তৈরি হলে খালেদা জিয়ার একক ইচ্ছেতেই ঘোষণা আসবে। তিনি দলে থাকবেন কি থাকবেন না...।

দলের নীতিনির্ধারণী সূত্রমতে, খালেদা জিয়ার অবর্তমানে স্থায়ী কমিটিকে? নিজের মতো করে তৈরি করতে চাইছেন তারেক রহমান। সে লক্ষ্যে মাকে কারাগারে রেখেই, মায়ের বুদ্ধি পরামর্শ আনুগত্যকে উপেক্ষা করে সেলিমা রহমানকে নারী কোঠায়, ইকবাল হাসান মাহমুদকে নিজের পছন্দে কমিটিতে আনেন। সামনে যারা এ পদ পাবেন, তারাও এ বিবেচনাতেই আসবেন বলে জানা গেছে। এখন পর্যন্ত বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্ষদ স্থায়ী কমিটির ১৯টি পদের চারটি শূন্য আছে। মুক্ত নন খালেদা জিয়া, তিন শর্তে জামিনে মুক্ত হয়েছেন তিনি।

প্রথমত খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন না, বিদেশে যেতে পারবেন না এবং বাসায় থেকে চিকিৎ?সা নেবেন। এই পদে আর স্থায়ী থাকার সম্ভাবনা খুবই কম।
এছাড়া তারেক রহমান দেশে নেই। রফিকুল ইসলাম মিয়া গুরুতর অসুস্থ। ভারতে অনুপ্রবেশের মামলায় সে দেশে রয়েছেন সালাহউদ্দিন আহমেদ।

স্থায়ী কমিটি থেকে অব্যাহতি চেয়ে চিঠি দিয়েছেন সাবেক সেনাপ্রধান মাহবুবুর রহমান। এটি গৃহীত হওয়া না হওয়ার ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ফলে ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটিতে এখন সর্বোচ্চ ১১ জনের উপস্থিতিতে সভা হয়। দলে এখন যে পদগুলো শূন্য রয়েছে সেগুলো লন্ডন নেতার পছন্দেই আসবে।

এছাড়া দলে তারেক রহমানের সমালোচনাকারীর কিছু পদও খুব শিগগিরই শূন্য হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, হাফিজউদ্দিন আহমেদ ও শাহজাহান ওমর, সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এহছানুল হক মিলনসহ দলের শীর্ষ বেশ কয়েকজন নেতা।

দলীয় সূত্রগুলো বলছে, খালেদা জিয়ার সঙ্গে তারেক রহমানের বর্তমানে কিছুটা দূরত্ব চলছে। ঢাকা-৫ আসনে উপনির্বাচনে প্রার্থী নিয়ে তা স্পষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া বর্তমান সংসদে বিএনপির সাংসদদের যোগদানের প্রশ্নেও খালেদা জিয়ার সঙ্গে মতের ভিন্নতা ছিলো তারেক রহমানের, এমনই বলছেন দলের অনেকে।

৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করার পর নাটকীয়ভাবে সংসদে যোগ দেয় দলটি। নির্বাচনের পর খালেদা জিয়ার আন্দোলনের নির্দেশনা থাকলেও কেউ মাঠে নামেনি। খালেদা জিয়াকে আদালতে আত্মসমর্পণের দিন কয়েক লাখ নেতাকর্মীকে রাস্তায় নামানোর নির্দেশনা থাকলেও সেটিও অদৃশ্য ইশারায় বাস্তবায়ন হয়নি।

আইনি এবং রাজপথে উভয়ভাবে চাপের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে মুক্তি দিতে সরকারকে বাধ্য করতে নির্দেশনা থাকলেও এগুলো বাস্তবায়ন হয়নি। বন্দি জীবন থেকে এখন সরকারের দয়ায় আপসহীন অবস্থা নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর থেকে অনেকটাই তিনি কৌশলে দূরত্ব বজায় রেখে চলছেন। দলীয় কোনো রাজনৈতিক আলাপচারিতায় আর তিনি নেই।

পারিবারিক পরিমণ্ডলে দিন কাটছে তার। শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। করোনার কারণে কোনো চিকিৎসাও হচ্ছে না। মুক্তির পর ৯ মাস কেটে গেলেও উন্নত চিকিৎসা শুরু হয়নি। বর্তমানে তিনি উঠে দাঁড়াতে পারছেন না। হাঁটাচলা করতে পারেছেন না।

গৃহকর্মী ফাতেমাসহ পরিবারের সদস্যরা খালেদা জিয়ার দেখভাল করেন। এছাড়া দুজন নার্স রয়েছেন তারাও সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করে থাকেন। লন্ডনে অবস্থানরত পুত্রবধূ ডা. জোবায়দা রহমানের পরামর্শেই মূলত চিকিৎসা চলছে। এছাড়া খালেদা জিয়ার চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও ডা.  মামুন নিয়মিত খোঁজখবর রাখছেন।

খালেদা জিয়ার সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে জানতে চাইলে ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। আগের মতো আছে। ডা. জোবায়দা রহমানের পরামর্শে চিকিৎসা চলছে। রুটিন অনুযায়ী ওষুধগুলো চালানো হচ্ছে। প্রোপার ট্রিটমেন্টের জন্য তাকে একটা সেন্টারে (হাসপাতাল) নেয়া প্রয়োজন। কিন্তু করোনা ভাইরাস সংকটের মধ্যে তাকে হাসপাতালে নেয়া যাচ্ছে না।

খালেদা জিয়ার ভবিষ্যৎ রাজনীতি নিয়ে জানতে চাইলে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আমার সংবাদকে বলেন, মানুষ এখন খালেদা জিয়াকেই ভুলে যাচ্ছে। তিনি এখন অসুস্থ। তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা দরকার। তাহলে দেশের মানুষ জানবে অন্তত তার চিকিৎসা হচ্ছে। এছাড়া মানুষ বিএনপিকেও ভুলে যাচ্ছে, কারণ বিএনপি মানুষের চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। বিএনপি যদি মানুষের ভাষা বুঝে তাহলে তাদের রাস্তায় নামতে হবে, আন্দোলন করতে হবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে যতটুকু জেনেছি, তাতে রাজনীতি বলেন, দলের নেতৃত্ব বলেন- তার ফেরার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, এখন দলের কোনো ব্যাপারে খালেদা জিয়া হস্তক্ষেপ করেন না। তিনি সব দায়িত্ব ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে দিয়ে দিয়েছেন। তাছাড়া তিনি (খালেদা জিয়া) মুক্ত নন। শি ইজ নট ফ্রি। 

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –