• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা ইতিহাসে অনন্য: রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা হস্ত‌ক্ষেপ করবে না: ওবায়দুল কাদের লালমনিরহাটে যুবলীগ কর্মীর পায়ের রগ কাটলেন যুবদল নেতা বাসার ছাদ থেকে পড়ে যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু ঠাকুরগাঁওয়ে ঈদ-নববর্ষে ১০ জন নিহত, আহত ২ শতাধিক

তালগাছ ঠেকাবে বজ্রপাত

প্রকাশিত: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

লম্বা এই বৃক্ষগুলোর আদি নিবাস সুদূর আফ্রিকায়। মহাকালের পথ ধরে এসেছে এই বঙ্গ দেশে। এতকাল বেশ তাল মিলিয়েই চলেছে। একবিংশ শতকে এসে যুদ্ধে নামার প্রস্তুতি নিয়েছে আকাশের বজ্র মেঘের সঙ্গে। অনেক আগে থেকেই বজ্রপাতে হতাহতের ক্ষতি কমিয়ে আনতে এই বৃক্ষ রোপণ করা হচ্ছে।

শুধু বজ্রপাত নয় বেড়িবাঁধ রক্ষার্থে একদিনে খুলনার দুই উপজেলায় পাঁচ হাজার তাল গাছের বীজ রোপণ করা হয়েছে। মাটি-মা সোনামুখ পরিবারের পক্ষ থেকে দিঘলিয়া উপজেলার দুটি ফার্মে রোববার ১১০০ তালের বীজ রোপণ করা হয়েছে।

অপরদিকে একই দিনে বাঁধের দুই পাশে খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার কায়েমখোলা গ্রামের কৃষকরা চার হাজার তাল গাছের বীজ রোপণ করেছেন। এ কাজে অংশ নেন প্রায় একশ কৃষক। এর আগে ধান ক্ষেতে পাখি বসার জন্য গাছের ডাল স্থাপন করেন তারা।

মাটি-মা সোনামুখ পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলা ও বজ্রপাত ঠেকাতে একটি টেকসই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে কিছু উদ্যমী তরুণদের নিয়ে দুইটি ফার্মে ১১০০ তাল গাছের বীজ রোপণ করা হয়েছে। 

কৃষকরা জানান, ধান ক্ষেতের পোকা দমনে আগে সবাই কীটনাশক ব্যবহার করতেন। এতে উৎপাদন ব্যয় বাড়তো। তারা নিজেরাও নানা রোগে আক্রান্ত হতেন। এখন কীটনাশকের বদলে ফসলের ক্ষেতে পাখি বসার জায়গা তৈরি করে দেন তারা। পাখি পোকা খেয়ে ফসলকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।

এছাড়াও বর্তমানে বজ্রপাতে কৃষকের মৃত্যু দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। আগে উঁচু গাছে বজ্রপাত হতো। কিন্তু গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় সরাসরি মানুষের ওপর বজ্রপাত হচ্ছে। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তারা বাঁধের উঁচু জমিতে তালের বীজ বপন করছেন।

কায়েমখোলা গ্রামের কৃষকদের এই কাজে উদ্ধুদ্ধ করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের বটিয়াঘাটার কর্মকর্তারা। ঢেউয়াতলা ব্লুগোল্ড কৃষক স্কুলের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হন কৃষকরা।

কায়েমখোলা গ্রামের বটতলা এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, গাছের ছায়ায় জড়ো হয়ে ফসল উৎপাদনের বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা নিচ্ছেন কৃষকরা। শিক্ষক হিসেবে রয়েছেন উপজেলার সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিষাদ সিন্ধু মণ্ডল। ফসলের পোকা দমনে গাছের ডালের ব্যবহার শুনে কৃষকরা নিজেরাই বাড়ির আশপাশ থেকে গাছের ডাল সংগ্রহ করেন। একপর্যায়ের নিজেরাই ফসলের ক্ষেতে ডাল লাগানো শুরু করেন। আর আগে থেকেই তালের বীজ সংগ্রহ করেছিলেন তারা।

ধান ক্ষেতের কাজ শেষে পানখালী থেকে কায়েমখোলা বেড়িবাঁধের চার কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে তালের বীজ লাগানো শুরু হয়। তীব্র রোদের মধ্যে প্রায় ১০০ জন কৃষক দুই ঘণ্টা ধরে এই কাজ করেন।

ছবি: ডেইলি বাংলাদেশ

ঢেউয়াতলা গ্রামের কৃষক আবদুর রহমান বলেন, অনেকেই এই কাজ নিয়ে হাসাহাসি করে। অনেকে বলে তাল গাছ বড় হতে ১০-১৫ বছর সময় লাগবে। তার আগে বজ্রপাত থেকে রক্ষা পাবি কী করে?

তিনি বলেন, এখন আমরা হয়তো তাল গাছের সুবিধা ভোগ করতে পারবো না, তাই বলে আমাদের ছেলে-মেয়েদের জন্য কিছু করবো না। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই এখন তালের চারা রোপণ করছি।

কৃষকদের এই উদ্যোগ দেখতে সেখানে উপস্থিত ছিলেন- কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শামীম আরা নিপা ও ইনসাদ ইবনে আমিন, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিষাদ সিন্ধু মণ্ডল, জীবনানন্দ দাশ, কমলেশ বালা, দীপংকর মণ্ডল, মোস্তাফিজুর রহমান ও রাজিব বিশ্বাস, প্রবীণ কৃষক মো. সিদ্দিকুর রহমান, মোজাহিদুল ইসলাম, ভবতোষ নিহার রঞ্জন মণ্ডল প্রমুখ।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –