• মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৩ ১৪৩১

  • || ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

তেঁতুলিয়ায় তাঁবু টানিয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখছেন পর্যটকরা

প্রকাশিত: ৩০ অক্টোবর ২০২২  

তেঁতুলিয়ায় তাঁবু টানিয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখছেন পর্যটকরা                         
কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে অক্টোবরের শুরু থেকেই পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ভিড় করেন পর্যটকরা। ছুটির দিন ঘিরে বাড়ে পর্যটকদের ভিড়। তবে এখানে পর্যটকদের অনেকেই হোটেলে কক্ষ পান না। আর এই হতাশা নিয়ে তারা রাত্রিযাপন করেন তাঁবু টানিয়ে।

শুক্রবার রাতে তেঁতুলিয়ায় উপজেলার তিরনইহাট ইউনিয়নের ব্রহ্মতোল গ্রামে স্থানীয় মকসেদুল ইসলামের আম-লিচু বাগানে চাঁদপুর থেকে আসা বেশ কয়েকজন পর্যটক তাঁবু টানিয়ে রাত্রিযাপন করেছেন। শনিবার সকালে কথা হয় তাদের সঙ্গে। তারা জানান, হোটেলে কক্ষ না পাওয়ায় এভাবে তাদের রাত কাটাতে হয়েছে। 

চাঁদপুর থেকে আসা বিসিএস (শিক্ষা) কর্মকর্তা ছানোয়ার হোসেন সাগর, ব্যাংকার সুমন বিশ্বাস, সহকারী শিক্ষক কাদের খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাংলাদেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়— এমন খবরে আমরা গতকাল ছুটে এসেছি। এসে আবাসিক হোটেলগুলোতে কোনো কক্ষ পাইনি।

তারা বলেন, দেশের উত্তরে এমন সুন্দর জেলা থাকতে পারে, না এলে হয়তো বুঝতেই পারতাম না। এখানে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট চা বাগান মালিকরা যদি এখানে চা বাগানেই পর্যটকদের থাকা থাকার পরিবেশ তৈরি করতে পারেন, এ অঞ্চল আরও পর্যটনে সমৃদ্ধ হবে। হোটেল সংকট নিরসনে দৃষ্টি দিতে হবে।

ঢাকা থেকে আসা পর্যটক সেলিনা পারভীন, নারগিস জাহান ও ইমরুল কাওসারসহ কয়েকজন পর্যটক বলেন, খুব কাছ থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়— ফেসবুকে খবর শুনে তেঁতুলিয়ায় ছুটে এসেছি। এসে ভালো লাগছে। আনন্দ পেয়েছি। কিন্তু এখানে থাকার জায়গার খুবই সংকট। হোটেল কক্ষের ভাড়াও খুব বেশি। আবাসিক হোটেল বাড়ালে ভালো হতো। আগামীতে এ অঞ্চল পর্যটনে আরও সমৃদ্ধ হবে।

পর্যটক সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো জানায়, প্রচুর পরিমাণে পর্যটক আসছে। যদিও আমাদের এখানে এখনো আবাসন সংকট রয়েছে। তবে করোনার দুই বছরে মধ্যে বেশ কয়েকটি উন্নতমানের আবাসিক হোটেল গড়ে উঠেছে। তবে পর্যটকের তুলনায় অপ্রতুল। পর্যটকরা যোগাযোগ করছেন, আমরা চেষ্টা করছি তাদের সেবা দিতে।

পর্যটকরা কাঞ্চনজঙ্ঘার পাশাপাশি সমতলের চা বাগান, বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট, স্থলবন্দর-ইমিগ্রেশন, দুদেশের সীমান্ত প্রবাহিত মহানন্দা নদী, পড়ন্ত বিকেলে সূর্যাস্ত, পাহাড়ের ঢালে ঘর-বাড়ি, সাপের মতো আঁকাবাঁকা সড়কসহ নানা দর্শনীয় স্থান উপভোগ করতে তেঁতুলিয়ায় আসেন।

তেঁতুলিয়ায় বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেল রয়েছে। এর মধ্যে ইএসডিওর মহানন্দা কটেজ, দোয়েল আবাসিক, কাজী ব্রাদার্স, কাঞ্চনজঙ্ঘা, হোটেল সীমান্তের পাড়, স্বপ্ন গেস্ট হাউজসহ উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়াও জেলা পরিষদ ডাকবাংলোর বেরং কমপ্লেক্স, আরডিআরএস, জনস্বাস্থ্য ও অফিসার্স ক্লাবে পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে মৌসুমে এসব আবাসন অপ্রতুল হয়ে পড়ে। আবাসিক হোটেলে কক্ষ না পেয়ে আশপাশের বাসা বাড়িতে রাত্রিযাপন করতে হয় আগত ভ্রমণ-পিপাসুদের।

আবাসিক হোটেল মালিকদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, ট্যুরিস্টরা হোটেল বুকিং দিয়ে রাখছেন। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে প্রচুর সমাগম হয়ে থাকে। যার কারণে কেউ কেউ বুকিং দিতে পারছেন না। তাদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে। যারা হোটেল বুকিং ছাড়া আসছেন, তাদেরকে রাত্রিযাপনে অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে।

পঞ্চগড় ট্যুরিস্ট পুলিশ জোনের অফিসার ইনচার্জ সিরাজুল ইসলাম জানান, এ সময়টা পঞ্চগড়ে পর্যটনের সময়। হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে প্রচুর পর্যটকের সমাগম ঘটছে। আমরা পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছি। পর্যটন স্পটগুলোতে আমাদের টহল জোরদার করেছি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, হেমন্ত ঋতুতে কাছ থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার মনোমুগ্ধকর রূপ উপভোগ করতে আসছেন পর্যটকরা। তাদের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠেছে তেঁতুলিয়া। পর্যটকদের কথা চিন্তা করে আমরা ডাকবাংলোয় থাকার ব্যবস্থা করেছি। ওয়াচ টাওয়ার, ওয়াকওয়েসহ বিভিন্ন দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা নির্মাণ করেছি।

তিনি বলেন, আবাসন সংকট রয়েছে সত্য। তবে দিন দিন আবাসন ব্যবস্থা গড়ে উঠছে। ইতোমধ্যে জেলা পরিষদ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ কর্তৃক নতুন দুইটি রেস্টহাউজ নির্মাণ করা হয়েছে। বেসরকারি উদ্যোগেও নতুন হোটেল ও রেস্ট হাউজ নির্মাণের কাজ চলমান আছে। আমরা পর্যটন শিল্প নিয়ে কাজ করছি। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশাসন তৎপর রয়েছে।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –