• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

তেলাপোকার প্রাণ!

প্রকাশিত: ১০ নভেম্বর ২০১৮  

একদম সাধারন জ্ঞান বিষয়ক একটা প্রশ্ন যদি করা হয়, কয় রকমের তেলাপোকা রয়েছে এই বিশ্বে? নিশ্চিতভাবেই বলা যায় অধিকাংশ মানুষই এর ভুল উত্তর দেবেন। কারণ অনেকে হয়তো কল্পনাও করতে চাইবেন না যে পৃথিবীতে প্রায় ৪ হাজার ৬০০ প্রজাতির তেলাপোকা বসবাস করে! তবে স্বস্তির খবর হচ্ছে মাত্র তিরিশ প্রজাতির তেলাপোকা মনুষ্য পরিবেশের মধ্যে চলাফেরা করে। প্রায় চারটি প্রজাতিকে ক্ষতিকর হিসেবে ধরা হয়।

সচরাচর যে তেলাপোকা দেখা যায় তার বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে ‘প্যারিপ্লানেটা আমেরিকানা’। তেলাপোকা বহু পুরানো দলভুক্ত পোকা, এদের প্রায় ৩২ কোটি বছর পুরনো কার্বোনিফেরাস যুগেও পাওয়া গেছে। সারা বিশ্বেই এদের খুঁজে পাওয়া যায় এবং তারা সকল পরিবেশেই বেঁচে থাকে বিশেষ করে উষ্ণ পরিবেশে। বলা হয় তেলাপোকার প্রাণ খুব শক্ত! এমনও বলা হয়, পৃথিবীতে যদি পারমাণবিক যুদ্ধও লেগে যায় এবং তাতে সবকিছু ধ্বংস হয়ে যায় তবু এই প্রজাতি বেঁচে থাকবে।

অবশ্য তারা অমর নয়, তাদেরও মৃত্যু আছে, তবে এরা অত্যন্ত প্রতিকূল পরিবেশেও বেঁচে থাকতে পারে! সচরাচর যে কোনো প্রাণীর মাথা কাটা গেল মানে প্রাণ গেল, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তেলাপোকার ক্ষেত্রে সেটা ভিন্ন! মাথা কাটা গেলেও কয়েক সপ্তাহ বেঁচে থাকতে পারে এই পতঙ্গটি। কিন্তু এটা কীভাবে সম্ভব?

মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাস থেকে খাদ্যগ্রহণ এবং রক্তচাপ সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ মাথা দিয়ে হয়। কিন্তু তেলাপোকার ক্ষেত্রে তার রক্তচাপ বা খাদ্যাভ্যাস শুধু মাথার সঙ্গে সংযুক্ত নয়। এমনকি মাথা দিয়ে তেলাপোকার হৃদযন্ত্র পর্যন্ত নিয়ন্ত্রিত হয় না। তেলাপোকার রক্ত ঠাণ্ডা। পাশাপাশি, তেলাপোকাকে কিছুক্ষণ পরপরই খাবার খাওয়ার প্রয়োজন হয় না। একবার খাবার খেয়ে এক সপ্তাহ কাটিয়ে দিতে পারে এই পতঙ্গটি।

এছাড়া তেলাপোকার মাথার সঙ্গে শরীরের রক্ত সরবরাহকারী কোষগুলোর সংযোগ একদম নেই। ফলে তেলাপেকার মাথা কাটা গেলে তার গলার কাছে খুব সহজেই রক্ত জমাট বেঁধে যায়। ফলে গরম রক্ত যে প্রাণীদের বা মানুষের মতো তৎক্ষণাৎ প্রাণ সংশয়ের আশঙ্কা তার নেই। পরবর্তীতে যতক্ষণ না অন্য কোনো তেলাপোকা তাকে খেয়ে ফেলছে কিংবা পিঁপড়ার দল চেপে বসছে ততক্ষণ পর্যন্ত মাথা কাটা তেলাপোকার দেহ থেকে প্রাণ যায় না। মাথা কাটা যাওয়ার বিশ দিনের মধ্যে তেলাপোকার শরীরে ব্যাক্টেরিয়া অথবা ভাইরাস সংক্রমিত হয়। আর এভাবেই আস্তে আস্তে মৃত্যুর পথযাত্রী হয় মাথা কাটা যাওয়া তেলাপোকা।

তাছাড়া এরা মসৃণ তলে কোনোভাবে চিৎ হয়ে আবার সোজা না হতে পারলে মারা যেতে পারে। বনে-জঙ্গলে অবশ্য চলাফেরা করা তেলাপোকার জন্য বেশ সহজ। সেখানে কোনোভাবে উল্টে গেলেও ঘাস, গাছের লতাপাতা, ছোট ছোট ডাল, ময়লা-আবর্জনা যেকোনো কিছুকে আঁকড়ে ধরে এরা সহজেই নিজেদেরকে সোজা করে নিতে পারে। কিন্তু মানুষের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বাড়ির মসৃণ মেঝেতে একবার কোনোভাবে উল্টে গেলে এরা আঁকড়ে ধরার মতো কিছু খুঁজে পায় না।

তাই শুধু বৃদ্ধ বা অসুস্থ তেলাপোকা না, বরং সুস্থ-সবল তেলাপোকাও একবার চিৎ হয়ে গেলে যদি কেউ তাকে সাহায্য না করে, তবে ধীরে ধীরে সেটি মৃত্যুবরণ করে। এক্ষেত্রে তেলাপোকা অনেক সময় চমৎকার কৌশলের আশ্রয় নেয়। তেলাপোকা তখন ভান ধরে মৃতের মতো পড়ে থাকে আর যখনই কেউ ঝাড়ু দিতে আসে কিংবা সে অন্য কোনো প্রাণীর সংস্পর্শে আসে ঐসময় সেসবে আঁকড়ে ধরে সোজা হয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –