• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

দিনাজপুরের চিকিৎসকরা ‘দুদক’ আতংকে রয়েছেন

প্রকাশিত: ২৩ জানুয়ারি ২০১৯  

দিনাজপুরের সরকারি হাসপাতাল, স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রের চিকিৎসকরা দুদক আতংকে রয়েছেন। তারা এখন কৌশল অবলম্বন করছেন দায়িত্ব পালনে। 

২৫০ শয্যা বিশিষ্ট দিনাজপুর জেলারেল হাসপাতালে সোমবার হঠাৎ দুদক এর অভিযানে সৃষ্টি হয়েছে এ পরিস্থিতি। দুদক বলছে, চিকিৎসকদের ৪০ ভাগই ছিলো না হাসপাতালে। আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, চিকিৎসকরা হাসপাতালে উপস্থিত হয়েও হেয়ালিপনায় উপস্থিতি খাতায় সই-স্বাক্ষর না করায় দুদকের কাছে অনুপস্থিতি ধোরা পড়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ছুঁটিতে থাকা ৪ জন বাদে সব চিকিৎসকরা উপস্থিত রয়েছে বলে দাবী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।

২৫০ শয্যা বিশিষ্ট দিনাজপুর জেলারেল হাসপাতালে সোমবার হঠাৎ দুদক এর অভিযানের কথা স্বীকার করেছেন,দিনাজপুর দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের উপ-পরিচালক বেনজির আমহমেদ। মুঠোফোনে তিনি জানান, মামলার স্বাক্ষী দেয়ার কাজে আমি রাজধানী ঢাকায় অবস্থান করছি। ঘটনা সঠিক। আমার অফিসের সহকারী পরিচালক আহসানুল কবীর পলাশের নেতৃত্বে এ অভিযান চলে। চিকিৎসকদের ৪০ ভাগই ছিলো না হাসপাতালে। স্বাস্থ্য সেবা মান নিশ্চিত করতে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।

এদিকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট দিনাজপুর জেলারেল হাসপাতালে তত্ত্বাবধায় ডা. আহাদ আলী বলছেন, চিকিৎসকরা হাসপাতালে উপস্থিত হয়েও হেয়ালিপনায় উপস্থিতি খাতায় সই-স্বাক্ষর না করায় দুদকের কাছে অনুপস্থিতি ধরা পড়ে। মঙ্গলবারো ছুঁটিতে থাকা ৪ জন বাদে সব চিকিৎসকরা উপস্থিত রয়েছে বলে তিনি দাবী করেন।

তিনি জানান, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট দিনাজপুর জেলারেল হাসপাতালে ৫৮ জন চিকিৎসক প্রয়োজন। তারমধ্যে ৩৩ জন চিকিৎসকের পদেই শূণ্য রয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালে ২৫ জন কিচিৎসক কর্মরত রয়েছেন। শহরের প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত হওয়ায় জেনারেল হাসপাতালে রোগির আগমন বেশি। এই স্বল্প সংখ্যক চিকিৎসক দিয়ে প্রতিদিন গড়ে আউটডোরে ৫০০ থেকে ৬৫০জন রোগি এবং ইনডোরে ২০০ থেকে ২৫০জন রোগির চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও জরুরী বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৭৫ থেকে ৮৫জন চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করছে। গতমাসে এ হাসপাতালে ৭২জন প্রসূতি স্বাভাবিক প্রসব এবং ৪২ জন প্রসূতি’র সিজার প্রসব করানো হয়েছে। ৩৩ জন শূণ্য চিকিৎসকের মধ্যে হৃদরোগ,নাক-কান-গলা ও যৌন-চর্ম’র মতো গুরুত্বপূর্ণ ৩ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ শূণ্য রয়েছে এ হাসপাতালে। তার পরও চিকিৎসা সেবা স্বাভাবিক ভাবেই পরিচালিত হচ্ছে এ হাসপাতালে। এমনটাই দাবী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।

মঙ্গলবার দুপুরে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট দিনাজপুর জেলারেল হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় কয়েকজন রোগি ও তাদের সাথে আসা স্বজনদের সাথে। পেটের পীড়ায় আক্রান্ত রোগি মমিনুল ইসলাম জানালেন, চিকিৎসক থাকলেও ওষুধ নেই হাসপাতালে। যে সব ওষুধ লিখে দিয়েছে,তার ৮০ভাগেই হাসপাতালে পায়নি। তাই বাইরের ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনবেন বলে জানালেন তিনি। একই কথা কথা জানালেন, জরুরী বিভাগে সেবা নিতে আসা মোয়াজ্জেম হোসেনের স্বজন। চিকিৎসক যে সব ওষুধ লিখে দিয়েছেন তার শতভাগই তাকে বাইরের ফার্মাসি থেকে হচ্ছে। কারণ ওষুধ থাকলেও হাসপাতালের ওষুধ প্রদানের ফার্মাসি বন্ধ রয়েছে। তার সাথে আসা আরেকজন স্বজন লিয়াকত আলী জানালেন,দিনাজপুর এম.আব্দুর রহিম মেডিকেল হাসপাতালের অবস্থা আরো করুণ। সেখানে জরুরী বিভাগ ও ইনডোরে চিকিৎসা করেন,হাসপাতালের বয়,ঝারুদারেরা। কর্মরত চিকিৎসকদের পাওয়া যায়না খুঁজে। ইন্টার্নি চিকিৎসকেরা যা ওষুধ বা ইনজেকশন লিখে দেয়,তার শতভাগ ক্রয় করতে হয় বাইরে থেকে। এমনকি ইনজেকশন পুশ করার জন্য চিকিৎসক বা নার্স পাওয়া যায়না। তা পুশ করে হাসপাতালের বয় ঝারুদারেরা। দিনাজপুর এম.আব্দুর রহিম মেডিকেল হাসপাতালেরর এমনি আরো অসংখ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে।

দিনাজপুরে অগণিত বে-সরকারি হাসপাতাল,ক্লিনিক আর ডায়গনষ্টিক সেন্টারের রাহুগ্রাসে এখন ও রোগীরা। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা না দিয়ে নিজস্ব অথবা পছন্দ মতো বে-সরকারি হাসপাতাল,ক্লিনিক আর ডায়গনষ্টিক সেন্টারে রোগিদের যেতে বাধ্য করাচ্ছেন চিকিৎকেরা। সেখানে এক প্রকার রোগিদের সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয়া হচ্ছে। এমন অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।

তবে দুদকের অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজনরা এবং স্থানীয় জনগন।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –