• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
যুদ্ধের অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয় হলে বিশ্ব রক্ষা পেত- প্রধানমন্ত্রী দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড মেডিকেল কলেজের ক্লাস অনলাইনে নেয়ার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘গণতান্ত্রিক রীতিনীতি না মানলে জনগণই বিএনপিকে প্রতিহত করবে’ লালমনিরহাটে হত্যা মামলায় বিএনপির দুই নেতা কারাগারে

দিল্লি জামে মসজিদের ইতিকথা

প্রকাশিত: ৩০ ডিসেম্বর ২০২০  

মোগল বাদশাহ শাহজাহানের অমর কীর্তি দিল্লি জামে মসজিদ। ভারতবর্ষ পেরিয়ে বিশ্বের বুকে এ মসজিদ প্রসিদ্ধ। আমাদের দেশ থেকে প্রতিবছর লাখ লাখ নর-নারী দিল্লি সফর করে থাকে। দিল্লিতে কয়েকটি ধর্মীয় ও দর্শনীয় স্থানের মধ্যে দিল্লি জামে মসজিদ অন্যতম। দিল্লিতে বাদশাহ শাহজাহানের আরেকটি বড় অবদান হলো লাল কেল্লা। ভ্রমণপিপাসুরা দিল্লি গমন করলে লাল কেল্লা দেখতে যেতে ভুল করে না। এই লাল কেল্লা দুর্গের প্রায় এক কিমি পশ্চিমে বাদশাহ শাহজাহানের অনুরাগের এ অমর কীর্তি দিল্লি জামে মসজিদ।

যে এলাকায় জামে মসজিদটি দাঁড়িয়ে রয়েছে, সেখানে ছোট পাহাড় তথা টিলা ছিল, যা দিল্লি চাঁদনী চকের কাছে। বাদশাহ শাহজাহান এ মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু করেন ১৬৫০ খ্রিস্টাব্দে। এ বিশাল ধর্মীয় স্থাপত্যশৈলী নির্মাণ সম্পন্ন হয় ১৬৫৬ খ্রিস্টাব্দে। এটি ভারতবর্ষের অত্যন্ত মনোরম বিশাল জামে মসজিদ, যাকে নিয়ে মুসলমানরা গর্ব করে থাকে। ভারতবর্ষে মোগল কীর্তির বিখ্যাত তিনটি জামে মসজিদ রয়েছে। এর দ্বিতীয়টি হলো আগ্রা জামে মসজিদ, যা আকারে দিল্লি জামে মসজিদ থেকে কিছুটা বড়। এ মসজিদ বাদশাহ শাহজাহানের কন্যা জাহানারার অবদানে নির্মিত। অন্য মসজিদ লাহোর বাদশাহি মসজিদ। এটি বাদশাহ আওরঙ্গজেব কর্তৃক নির্মিত।

বাদশাহ শাহজাহান কর্তৃক ১০৬০ হিজরি ১০ শাওয়াল শুক্রবার এ দিল্লি জামে মসজিদের নির্মাণকাজের সূচনা করা হয়। ওই দিন ভারতের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, ধর্মীয় বুজুর্গরা ছাড়াও দিল্লির সর্বস্তরের লোকজনের সমাগম ঘটে এ মসজিদের নির্মাণকাজ সূচনা উপলক্ষে। বাদশাহ শাহজাহানের প্রধানমন্ত্রী শাহদ্দৌলা খান এবং সে সময়কার স্থপতি ফাজিল মীর এই নির্মাণকাজের তত্ত্বাবধায়ক। এখানে দৈনিক পাঁচ হাজার জনবল কাজ করত।

বাদশাহ শাহজাহান ভারতের রাজধানী আগ্রা থেকে দিল্লি স্থানান্তর করেন ১৬৩৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে। তিনি দিল্লিকে সাজাতে কার্পণ্য করেননি। এ মসজিদের আজানখানা এমনভাবে নির্মাণ করা হয়, যাতে আজানের শব্দ লাল কেল্লায় বসে বাদশাহ শাহজাহান শুনতে পান।

লাল বালু ও পাথর দ্বারা এ মসজিদ নির্মিত হয়। দক্ষিণ পার্শ্বে ৩৩টি ধাপে ওঠে সাধারণ জনগণ, পূর্ব পার্শ্বে ৩৫টি ধাপে উঠবে তখনকার আমলে রাজকীয় ব্যক্তিবর্গ। এমনকি ব্রিটিশ শাসন আমলেও এটা খোলা হতো শুধু রাজকীয় মেহমানদের জন্য। উত্তর পার্শ্বে ৩৯টি ধাপের গেট নবাবেরা ব্যবহার করত। পূর্ব দিকের প্রবেশ পথ তথা রাজকীয় গেটটি প্রায় তিনতলা বিশিষ্ট অষ্টভুজ নকশায়।

দিল্লির জামে মসজিদ বিশাল বিশাল তিন গম্বুজ বিশিষ্ট, মধ্যখানে মিহরাব ও মোগল স্টাইলে মিম্বার। পূর্ব দিক উন্মুক্ত। মসজিদের বিশাল উঠান মূল মসজিদ থেকে তিন-চার ফুট নিচে। মসজিদের এ বিশাল চত্বরের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ সমান, তথা উত্তর-দক্ষিণ ১০৯ মিটার এবং পূর্ব-পশ্চিম ১০৯ মিটার। ঠিক মধ্যখানে একটি পানির হাউস, যা নামাজিদের অজু করার কাজে ব্যবহার করা হয়। এখানে পানি পার্শ্ববর্তী একটি কূপের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। মসজিদে প্রবেশের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে মোকাব্বেরের স্থান, যিনি নামাজে ইমামের অনুকরণে সহযোগী হিসেবে কাজ করে, যাতে নামাজিরা শুনতে পায়। এ মোকাব্বেরর স্থান ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত হয় মির্জা সেলিম কর্তৃক। মসজিদের উত্তর দিকে কোনায় ধর্মীয় পবিত্র জিনিস সংরক্ষণ করা আছে, তন্মধ্যে পবিত্র কোরআনের ২৮ পরিচ্ছেদ, যা আলী (রা.) কর্তৃক লিখিত এবং ১৫ পরিচ্ছেদ লিখেছেন ইমাম হোসাইন (রা.)। আরো রক্ষিত আছে নবী পাক (সা.)-এর তবরুকাত।

মসজিদের উত্তর-দক্ষিণে দাগ দেওয়া আছে, যাতে সূর্যের মাধ্যমে নামাজের ওয়াক্ত নির্ণয় করা সম্ভব হয়। এ মসজিদের চার কোনায় রয়েছে চারটি সুউচ্চ মিনার। পরবর্তী সময়ে এই জামে মসজিদ ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে বাদশাহ দ্বিতীয় আকবর কর্তৃক মেরামত করা হয়।

পরবর্তীকালে রামপুরের নবাব তখন এক লাখ ১৮ হাজার রুপি খরচ করে এ মসজিদ সংস্কার করে দেন। ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে ভাওয়ালপুরের নবাবও এ মসজিদ সংস্কার করেন। এ মসজিদ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব একটি মুসলিম সংস্থার ওপর। কিন্তু তাদের আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় শাহি ইমাম ভারত সরকারের কাছে বড় ধরনের ভার নেওয়ার জন্য সুপারিশ করেন। ফলে তখনকার প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওয়াহেরলাল নেহরুর নির্দেশনা অনুযায়ী ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি এ বিশাল মসজিদকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রিপোর্ট পেশ করে। ফলে ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে এ মসজিদ সংস্কারে ভারত সরকার অবদান রাখে এবং তা ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময় নেয়।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –