• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

পঞ্চগড়ে টি ট্যুরিজমের অপার সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ২৭ নভেম্বর ২০২০  

উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে কয়েক দশ ধরেই শুরু হয়ে চা চাষ। সমতলের এইসব চা বাগান এক দিকে যেমন এই অঞ্চলের অর্থনীতিতে এনেছে নতুন গতি তেমনি এর অপার সৌন্দর্য সম্ভাবনা জাগিয়েছে পর্যটন শিল্পেও। জেলার বিভিন্ন এলাকায় চোখ যে দিকে যায় দেখা মেলে শুধু সবুজ চায়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্য। এই দৃশ্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছেন পর্যটকরা।

বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেটের পর দেশের তৃতীয় চা অঞ্চল হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে উত্তরবঙ্গের সীমান্তবর্তী জেলা হিমালয় কন্যা পঞ্চগড়। এক সময়ের পতিত গো-চারণ ভূমি এখন ভরে গেছে চায়ের সবুজ পাতায়। চা চাষে অর্থনৈতিক উন্নয়নে তৈরি করেছে নতুন দিগন্তের সূচনা।

চা বোর্ডের আঞ্চলিক কার্যালয়ের তথ্য মতে, বর্তমানে পঞ্চগড়ে ২ হাজার ২৫৫ দশমিক ৫৫ একর জমিতে সম্প্রসারিত হয়েছে চা চাষ। অনেকে আবার চা বাগানে আম, আমলকি, মেহগনি ও সুপারি গাছ লাগিয়েছে দেখা যায়। গাছগুলো বাগানের অন্য মাত্রার সৌন্দর্য যোগ করেছে। রওশনপুরের জেমকন গ্রুপের কাজী এন্ড কাজীর টি এস্টেটে আনন্দধারা রিসোর্ট। পর্যটন শিল্পের এ দর্শনীয় স্থানটি পর্যটকদের টানছে বারবার।

জেলার চাকলায় আমেরিকান প্রবাসী মিজানুর রহমান সিদ্দিকী রঞ্জু ৬০ বিঘা জমিতে চা বাগানের সাথে লাগিয়েছেন বিভিন্ন দেশী-বিদেশী ফুল, ফলের বাগান। পর্যটক আকর্ষণে চা বাগানে বাংলো গড়ার পরিকল্পনা নিয়েছেন। তিনি টি ট্যুরিজমের পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করতে চান।

এই উদ্যোক্তা বলেন, পর্যটন শিল্পের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান হয়ে উঠছে আমাদের হিমালয়কন্যা পঞ্চগড়। প্রতি বছর প্রচুর পর্যটক সমাগম হচ্ছে এখানে। পর্যটকদের আকর্ষণে যাদের বড় বড় বাগান রয়েছে, তারা যদি বিশেষ বাংলো, বিনোদন আড্ডা ও টি স্টল গড়ে তুলতে পারি, তাহলে এসব পর্যটকদের সমাগম বাড়ছে।

তেঁতুলিয়া উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, ডাহুক টি এস্টেট, টিটিসিএল, সদর ইউনিয়নের মাগুড়ায় কাজী টি এস্টেট, দর্জিপাড়ার রহমান টি এস্টেট, শারিয়ালজোত টি গার্ডেনগুলো টি ট্যুরিজমের গুরুত্ববহন করছে। বিশেষ করে সীমান্ত ও নদীর কিনার সংলগ্ন স্থানগুলোতে যেসব চা বাগান রয়েছে, এসব চা বাগানগুলো পর্যটকদের বেশ দৃষ্টি কাড়ছে।

সম্প্রতি চা বাগান ঘুরে ইমরান খান নামের এক পর্যটক জানান, এ অঞ্চলে টি ট্যুরিজমের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। সমতল ভূমিতেও যে চা বাগান হতে পারে তা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় না আসলে বুঝতে পারতাম না। সিলেট বা শ্রীমঙ্গলের মতো টি ট্যুরিজমের যথেষ্ঠ সম্ভাবনা রয়েছে।

উপমহাদেশের অন্যতম পর্যটনবিদ ও প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির পর্যটন বিভাগের প্রধান ড.এ আর খান বলেন, উত্তরবঙ্গে পঞ্চগড় চা শিল্পে তৃতীয় অঞ্চল হয়ে উঠায় টি ট্যুরিজমের প্রচুর সম্ভাবনা তৈরি করেছে। এখানকার চা-বাগানগুলো পর্যটকদের জন্য অত্যন্ত মনোরম ও উপভোগ্য। বাগানগুলোতে যদি পর্যটকদের জন্য বিশেষ রিসোর্ট, হোটেল ও বাংলো গড়ে তোলা যায়, তাহলে পর্যটন শিল্পে যুক্ত হবে নতুনমাত্রা।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, পর্যটনের অপার সম্ভাবনার দ্বার এখন উত্তরের সীমান্তজেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া। এখানকার সবুজ চা বাগান সিলেট-চট্টগ্রামের মতো পর্যটকদের দৃষ্টি কাড়ছে। এখানে বাগানগুলোতে চা পাতা কাটা, ফ্যাক্টরিগুলোতে চা প্রক্রিয়াকরণ আর স্থানীয়ভাবে চা পাওয়া যাচ্ছে তা পর্যটন শিল্পের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা প্রশাসনিকভাবে চেষ্টা করবো এখানকার বড় বড় চা বাগানের মালিকদের সাথে টি ট্যুরিজমের বিষয়টি জানিয়ে উদ্যোগী করে তুলতে।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –