• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাস, আজ ৭৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। বন্যায় দুবাই এবং ওমানে বাংলাদেশীসহ ২১ জনের মৃত্যু। আন্তর্জাতিক বাজারে আবারও বাড়ল জ্বালানি তেল ও স্বর্ণের দাম। ইসরায়েলের হামলার পর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানে।

পঞ্চগড়ের দুই আসনে বিএনপির বিভেদ

প্রকাশিত: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮  

পঞ্চগড়ের দুটি আসনেই চূড়ান্ত প্রার্থী দিয়েছে বিএনপি। পঞ্চগড়-১ আসনে সাবেক স্পিকার ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দির সরকারের ছেলে নওশাদ জমিরকে এবং পঞ্চগড়-২ আসনে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফরহাদ হোসেন আজাদকে ধানের শীষের চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
 

এর আগে দুটি আসনেই বিএনপি দুইজন করে প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়। চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণার পর দুটি আসনেই বিএনপির বিভেদ আরও জটিল রূপ নিয়েছে। দলের জ্যেষ্ঠ, ত্যাগী ও পরিশ্রমী নেতাদের বাদ দিয়ে উড়ে এসে জুড়ে বসা নেতাদের প্রার্থী করায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে তৃণমূলে। এমনকি বিএনপি নেতারা গণপদত্যাগেরও হুমকি দিয়েছেন।
 

পঞ্চগড়-১ আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পান পৌর বিএনপির সভাপতি ও পঞ্চগড় পৌরসভার পাঁচবারের মেয়র তৌহিদুল ইসলাম এবং সাবেক স্পিকার জমির উদ্দির সরকারের ছেলে ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার নওশাদ জমির। তৃণমূল বিএনপির অভিযোগ, মাঠ পর্যায়ে ব্যারিস্টার জমির উদ্দির সরকারের জনপ্রিয়তা থাকলেও তার ছেলে নওশাদ জমিরের জনপ্রিয়তা শূন্যের কোঠায়। তার তুলনায় পৌর মেয়র তৌহিদুল ইসলামের সমর্থন অনেক বেশি। কিন্তু, পৌর মেয়রের পদ থেকে পদত্যাগ না করে মনোনয়ন দাখিল করায় তার মনোনয়নটি যাচাই বাছাই কমিটি বাতিল করে। পরে মনোনয়নের বৈধতা চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট করেন তৌহিদুল ইসলাম। এদিকে, বিএনপি থেকে ব্যারিস্টার নওশাদ জমিরকে ধানের শীষের চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। দুই গ্রুপই এখন সক্রিয়। ধানের শীষের প্রার্থী চূড়ান্ত হলেও সমঝোতার কোন আলামত দেখা যাচ্ছে না তাদের মাঝে।
 

জানা যায়, ২০১৪ সালের পর থেকে জেলা কমিটি ছাড়াই চলছে পঞ্চগড় বিএনপি। যে যেভাবে পারছে সেভাবেই নেতৃত্ব দিয়ে চলেছে। বিএনপির জেলা কার্যালয় এখন পৌর মেয়র তৌহিদুল ইসলাম ও তার সমর্থকদের দখলে। অপরদিকে ব্যারিস্টার নওশাদ জমির তার নির্বাচনী অফিস করেছেন জেলা শহরের কায়েতপাড়া এলাকায়। এই বিভেদ চলতে থাকলে এবারও আসনটি হাতছাড়া হবে বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতারা।
 

পঞ্চগড়-২ আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পান কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাবেক ছাত্রনেতা ফরহাদ হোসেন আজাদ ও সাবেক সংসদ সদস্য মোজাহার হোসেনের স্ত্রী নাদিরা আক্তার। এদিকে, ওই আসনটি দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে বিএনপির শরীক দল জাগপা। জাগপার কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তাসমিয়া প্রধান এই আসনে নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন দাখিল করেন। এই আসনে তিন জনের মধ্যে ফরহাদ হোসেন আজাদের মনোনয়নপত্রের হলফনামায় স্বাক্ষর না থাকায় তার মনোনয়নটি যাচাই বাছাই কমিটি বাতিল করে দেয়। পরে নির্বাচন কমিশনে আপিল করে মনোনয়নের বৈধতা পান আজাদ। এর মধ্যে বিএনপি চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে ফরহাদ হোসেন আজাদের নামও ঘোষণা করে। এর পরই ক্ষোভের সৃষ্টি হয় পঞ্চগড়-২ আসনের বোদা ও দেবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে। দেবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি ফরহাদ হোসেন আজাদকে বাদ দিয়ে অপর দুইজনকে মনোনয়ন দেয়ার দাবিতে গত শনিবার রাতে সংবাদ সম্মেলন করে। সংবাদ সম্মেলনে তারা ফরহাদ হোসেন আজাদের প্রার্থীতা বহাল রাখা হলে গণপদত্যাগের হুমকি দেন। দেবীগঞ্জ শহরের পিলখানা মার্কেটে তারা সংবাদ সম্মেলনের পর প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও ফরহাদ হোসেন আজাদের কুশপুত্তলিকা দাহ করে।
 

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি প্রার্থীরা অভিযোগ করেন, পঞ্চগড়-২ আসনের বোদা ও দেবীগঞ্জ উপজেলায় বিএনপির চূড়ান্ত প্রার্থী ফরহাদ হোসেন আজাদের তেমন কোন জনপ্রিয়তা নেই। দলের নেতাকর্মীদের সাথেও তেমন যোগাযোগ নেই তার। এছাড়া তার ভুল সিদ্ধান্তের কারণে এর আগে ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়েছে। তাই তারা পঞ্চগড়-২ আসনে তার পরিবর্তে সাবেক সংসদ সদস্য মোজাহার হোসেনের স্ত্রী নাদিরা আকতার কিংবা জাগপার প্রার্থী ব্যারিষ্টার তাসমিয়া প্রধানকে চূড়ান্ত প্রার্থী করার দাবি জানান।  
 

দেবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবু তোরাব সরকার বলেন, পঞ্চগড়-২ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী ফরহাদ হোসেন আজাদকে বহাল রাখা হলে আমরা সবাই গণপদত্যাগ করবো এবং নির্বাচনে ওই প্রার্থীর বিপরীতে অবস্থান নেবো। আমরা এই আসনে একাধিকবার বিজয়ী হয়েছি। এবারের নির্বাচন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করে কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড অযোগ্য ফরহাদ হোসেন আজাদকে মনোনয়ন দিয়েছে। তার দ্বারা এই আসন কোনভাবেই উদ্ধার করা সম্ভব নয়। ফরহাদ হোসেনকে বাদ দিয়ে ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান বা নাদিরা আকতারকে মনোনয়ন দিলে এই আসনটি আমরা উদ্ধার করতে পারতাম।
 

পঞ্চগড় পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন রণিক বলেন, পঞ্চগড়-১ আসন উদ্ধার করতে হলে আমাদের প্রয়োজন শক্তিশালী প্রার্থী। কিন্তু কেন্দ্র থেকে নওশাদ জমিরকে ধানের শীষের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। যার তৃণমূলে সামন্যতম জনপ্রিয়তা নেই। তিনি তার বাবার পরিচয়ে পরিচিত। তার চেয়ে অনেক গুণে বেশি জনপ্রিয় পৌর মেয়র তৌহিদুল ইসলাম। তবে দলের স্বার্থে ধানের শীষকে জয়ী করতে আমাদের কাজ করতে হবে। পৌর মেয়র তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আমি আমার মনোনয়নের বৈধতা পেতে উচ্চ আদালতে রিট করেছি। আশা করি আমার মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হবে। আমি মনে করি দল সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে পঞ্চগড়-১ আসনে আমাকেই ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেবে।
 

জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এমএ মজিদ বলেন, আমাদের মধ্যে যে নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব ছিলো তা শীঘ্রই সমাধান হয়ে যাবে। উভয় পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বাসার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আলোচনায় আর কোন মতানৈক্য থাকবে না বলে আশা করছি। দলীয় কার্যালয়েই আমাদের প্রার্থীর নির্বাচনী অফিস করা হবে। আমরা ধানের শীষের প্রার্থীকে জয়ী করতে সবাই একসাথে কাজ করবো।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –