• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাস, আজ ৭৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। বন্যায় দুবাই এবং ওমানে বাংলাদেশীসহ ২১ জনের মৃত্যু। আন্তর্জাতিক বাজারে আবারও বাড়ল জ্বালানি তেল ও স্বর্ণের দাম। ইসরায়েলের হামলার পর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানে।

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কেরও সুবর্ণ জয়ন্তী

প্রকাশিত: ২৮ মার্চ ২০২১  

মো. জাকির হোসেন 

বাংলাদেশ জাতির জনকের জন্মশতবর্ষে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করছে। অন্যদিকে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের যে বীজ রোপিত হয়েছিল তারও ৫০ বছর পূর্তি এ বছরেই। আনুষ্ঠানিক হিসাবে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক পাঁচ দশকের। কিন্তু অনানুষ্ঠানিক হিসাবে বয়স আরো বেশি। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় ভারতের সমর্থন চেয়ে ১৯৬২ সালের ২৪ ডিসেম্বর গভীর রাতে তৎকালীন ভারতীয় উপ-হাইকমিশনের পলিটিক্যাল অফিসার শশাঙ্ক এস ব্যানার্জির কাছে প্রধানমন্ত্রী জওয়াহেরলাল নেহরুকে লেখা চিঠি হস্তান্তর করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। চিঠির ভাষ্যমতে, বঙ্গবন্ধু পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কেন্দ্রভূমি ঢাকা থেকে লন্ডন স্থানান্তর করতে চান এবং সেখান থেকেই তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রাম পরিচালনা করবেন। তিনি চিঠিটি শেষ করেছিলেন একটি রোডম্যাপ ও সময়সূচি দিয়ে। যত দ্রুত সম্ভব তিনি তাঁর বেস ঢাকা থেকে লন্ডনে স্থানান্তর করতে চাইছিলেন। ১৯৬৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বা খুব বেশি হলে ১ মার্চ লন্ডন থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করবেন। চিঠির জবাবে নয়াদিল্লির সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা দীর্ঘ হচ্ছিল। এই দীর্ঘ অপেক্ষা শেখ মুজিবকে অধৈর্য করে তুলেছিল। তিনি গোপনে সীমান্তবর্তী ভারতের আগরতলায় পাসপোর্ট ছাড়া হাজির হলেন। সেখানে বঙ্গবন্ধু ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী শচীন্দ্রলাল সিংহের সঙ্গে মিটিং করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে ভারতের রাজনৈতিক সমর্থন আদায়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নেহরুর কাছে বার্তা পাঠাতে মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন। তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে এটাও জানালেন, ঢাকাস্থ ভারতীয় কূটনৈতিক মিশনের সঙ্গে যোগাযোগ হলেও তারা সাড়া দিতে অনেক বেশি দেরি করছেন; কিন্তু তার হাতে খুব বেশি সময় নেই। আগরতলা থেকে ফিরেই বঙ্গবন্ধু দিল্লি থেকে সাড়া পেলেন, তাকে বলা হলো—সাড়া দিতে দেরি হওয়ায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী দুঃখিত। আগরতলা থেকে ফিরে আসার পথেই পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা তাঁর গোপন সফরের খবর পেয়ে যায় এবং দেশে ফেরার পর তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তী সময়ে ছয় দফা নিয়ে তীব্র জনমত গড়ে উঠলে বঙ্গবন্ধুকে আবার গ্রেপ্তার করে আগরতলায় গমন ও ভারতের সহায়তার পাকিস্তান ভাঙার ষড়যন্ত্রের মামলা দেওয়া হয়, যা ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য তথা ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ নামে পরিচিত।

১৯৬২ সালের চিঠির মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে যে সম্পর্কের সূচনা হয়েছিল সে হিসাবে সম্পর্কের বয়স ছয় দশক। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের যে বন্ধন তা পৃথিবীর অন্যান্য দেশের প্রতিবেশীর সঙ্গে যে বন্ধুত্বের বন্ধন তার চেয়ে ভিন্ন। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যে সম্পর্ক তা শুধু ভূখণ্ডগত নয়; সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক ও রক্তের বন্ধনে আবদ্ধ। দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে সৃষ্ট পাকিস্তানি রাষ্ট্রকাঠামোতে সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি জনগোষ্ঠী নিপীড়িত হতে থাকে। মুক্তির দূত হয়ে এগিয়ে আসেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সংঘটিত হয় ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ। ইতিহাসের অন্যতম নৃশংস বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহযোগিতা ছিল ইতিহাসের আশীর্বাদ। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী ঢাকায় গণহত্যা চালানোর পর ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মাধ্যমে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। কয়েক মাসের মধ্যেই বাংলাদেশ থেকে প্রায় এক কোটি শরণার্থী সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে অবস্থান নেয়। বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার ভারতের মাটিতে বসেই পরিচালিত হতো। এতে ভারত সরকারের সর্বাত্মক সহায়তা ছিল। এ ছাডা মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা ভারতের মাটিতেই প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং ভারত তাঁদের অস্ত্র সরবরাহ করেছে। পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে বোঝানোর জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী জুন মাস থেকে বিভিন্ন দেশে সফর শুরু করেন। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ভারতের পার্লামেন্টে দেওয়া এক বিবৃতির মাধ্যমে ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেন। অন্যদিকে রক্তাক্ত যুদ্ধের শেষ পর্বে ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ সামরিক কমান্ড গঠন করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তি ও মিত্রবাহিনীর যৌথ অভিযান শুরু হয়। ৮ ডিসেম্বর ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এক রেডিও ভাষণে বলেন, ‘আমাদের যোদ্ধারা এখন ভারতীয় সেনাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করছে এবং তাদের রক্ত আমাদের রক্তের ধারার সঙ্গে মিশে গিয়ে আমাদের মাটিতে বইছে।’ ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১-এ পাকিস্তানি বাহিনীর নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ দুই দেশের গণমানুষের সৌহার্দের ভিত্তিকে আরো সুদৃঢ় করে। মুক্তি ও মিত্রবাহিনীর যৌথ রক্তে রঞ্জিত হয়ে সৃষ্টি হয় বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের এক অমোচনীয় ইতিহাস। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক প্রতিবেশী রাষ্ট্রে গতানুগতিক সম্পর্কের বাইরে রক্তের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যায়। ভৌগোলিক নৈকট্য অতিক্রম করে দুই দেশের সম্পর্ক মুক্তিযুদ্ধ তথা স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টির অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ ও তার জনগণের সঙ্গে ভারতীয় সরকার ও জনগণের যে মেলবন্ধন গড়ে ওঠে তাতে দুই দেশের সরকার ও জনগণের মধ্যে চিন্তা ও কর্মের গভীর সাযুজ্য তৈরি হয়। উভয় দেশের সরকার ও জনগণের মধ্যে অপূর্ব সমন্বয়, সমঝোতার পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট আবেগের বিষয় দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। বঙ্গবন্ধু যখন স্বাধীন বাংলাদেশের দায়িত্ব গ্রহণ করেন তখন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ ছিল এক ধ্বংসস্তূপ। বন্দরে ছিল মাইন পোঁতা। বাণিজ্য ও শিল্পে বাঙালির হিস্যা ছিল খুবই সামান্য। অন্যদিকে যাঁরা পূর্ব বাংলায় ব্যাংক ও শিল্প পরিচালনা করতেন তাঁরা চলে যান পাকিস্তানে। পাকিস্তানি হায়েনারা নিশ্চিত পরাজয় জেনে ব্যাংকের নোটগুলো পর্যন্ত জ্বালিয়ে দিয়েছিল। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরই ১৯৭২-৭৩ সালে বহির্বিশ্বের পরিস্থিতিও ছিল চরম প্রতিকূল। বাংলাদেশের স্বাধীনতার মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই মার্কিন প্রশাসন ‘স্মিথসোনিয়ান অ্যাগ্রিমেন্ট’ গ্রহণ করে, যার ফলে গোল্ড থেকে ডলারকে পরিবর্তন করার যে পরিমিত সমীকরণ (ইকুয়েশন) ছিল, সেটাকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। ফলে তিন ডলারের তেলের ব্যারেল হয়ে গেল ১১ ডলার। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন গমের মূল্য ৮০ ডলার থেকে বেড়ে হয়ে গেল ২৪০ ডলার। ৮০ ডলারের প্রতি টন সারের মূল্য বেড়ে হলো ২০০ ডলার। পুরো বিশ্বে এবং উন্নত অর্থনীতিগুলোর অনেক নজিরবিহীন মূল্যস্ফীতি দেখা দিল। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারত ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ছাড়া দৃঢ়ভাবে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াবার মতো বন্ধুর বড়ই অভাব ছিল। যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে দেশ পুনর্গঠনে তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারকে নানাভাবে সহায়তা দেয় ভারত। তবে এ সাহায্যের ভিত্তি ছিল পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও দুটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে সমতার নীতিতে। বঙ্গবন্ধু ইন্দিরা গান্ধীকে বাংলাদেশ ভ্রমণের আমন্ত্রণের পাশাপাশি ১৩ মার্চ ১৯৭২-এর মধ্যে ভারতীয় সেনা প্রত্যাহারের অনুরোধ করেন। ইন্দিরা গান্ধী বঙ্গবন্ধুকে জানিয়ে দেন, বাংলাদেশে একজন ভারতীয় সিপাই থাকতে আমি ঢাকায় যাব না। আমি নিক্সন-ভুট্টোদের বলতে দেব না, ভারতীয় সেনাদের পাহারায় আমি ঢাকায় গেছি।

১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বিশ্বাস ও বোঝাপড়ার ওপর দাঁড়িয়ে থাকা বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক অবিশ্বাস ও সন্দেহে রূপান্তরিত হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধুকে প্রায় সপরিবারে হত্যার পর ইউরোপে অবস্থানরত তাঁর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার জীবন যখন ভয়ংকর ঝুঁকিপূর্ণ, সেই সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী অভিভাবকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। তাঁদের ভারতে নিয়ে এসে নিরাপত্তা ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেন। আজকে বঙ্গবন্ধুকন্যার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ যে বিশ্বদরবারে মর্যাদার সঙ্গে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে তার সঙ্গে শ্বাপদসংকুল সেই সময়ে বঙ্গবন্ধুকন্যাদের নিরাপত্তা ও আশ্রয়দানে ভারতের ভূমিকা অবিস্মরণীয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তৎকালীন বাংলাদেশের শাসকদের আশকারা ও মদদে পাকিস্তান অক্টোপাসের মতো তার সব কয়টি কর্শিকা দিয়ে বাংলাদেশকে চেপে ধরেছিল। অবিশ্বাস ও সন্দেহের ঘেরাটোপে বন্দি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক কিছু ক্ষেত্রে বৈরিতায় রূপ নিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক মেরামতের উদ্যোগ নেন। বহুল কাঙ্ক্ষিত গঙ্গা পানি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এ সময়ে। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর আবার বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে ছন্দঃপতন হয়। ‘উলফা’র সদস্যদের বাংলাদেশের মাটিতে প্রশিক্ষণের সুযোগদান ও বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ‘উলফা’র জন্য আসামে অস্ত্রপাচারে খোদ সরকার ও বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব জড়িত থাকার বিষয়ে ভারতের বিশ্বাস থেকে জন্ম নেয় আস্থাহীনতা। দ্বিপক্ষীয় বন্ধুত্ব অতীতের মতো উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায় ২০০৯ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা ক্ষমতায় আসার পর। এই সময়গুলোতে স্থলসীমান্ত চুক্তিসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক আদালতে সমুদ্রসীমা বিষয়ে বিজয় লাভ করে বাংলাদেশ। ফলে ১৯.৪৬৭ বর্গকিলোমিটার এলাকা বাংলাদেশের হাতে তুলে দেয় ভারত। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা বাংলাদেশের ভেতরে যে আস্তানা গড়ে তুলেছিল শেখ হাসিনা সরকার তা নির্মূল করে ভারতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। এ ছাড়া ট্রানজিট, ট্রান্সশিপমেন্টসহ নানা সহযোগিতা দিয়েছে বাংলাদেশ। এতৎসত্ত্বেও বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ক্ষেত্রে নতুন কিছু চ্যালেঞ্জও তৈরি হয়েছে। এগুলো হচ্ছে—পানিবণ্টন, সীমান্ত হত্যা, বাণিজ্য ইস্যু, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, অস্ত্র ও মাদক চোরাচালান ইত্যাদি।

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ অবকাঠামো ইত্যাদি ক্ষেত্রে অংশীদারি প্রাধান্য পেলেও শিক্ষা ও গবেষণার মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে অশীদারি প্রায় অবহেলিতই রয়ে গেছে। এখন অবধি বৃত্তিসহ কিংবা নিজ খরচে অধ্যয়ন ও গবেষণার মধ্যেই দ্বিপক্ষীয় শিক্ষা-গবেষণার বিষয়টি সীমিত রয়েছে। জ্ঞাননির্ভর অর্থনীতির এই যুগে যৌথ গবেষণার বিকল্প নেই। তদুপরি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে টেকসই নীতি প্রণয়ন ও কিছু ক্ষেত্রে সংশয় দূর করতে যৌথ গবেষণার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। উদাহরণস্বরূপ : এক. এ অঞ্চল কখনো বন্যায় প্লাবিত হয়ে জীবন ও সম্পদের মারাত্মক ক্ষতির শিকার হয়, আবার কখনো ভয়াবহ পানি সংকটে পড়ে। পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় আঞ্চলিক গবেষণা অত্যাবশ্যক। দুই. সুনীল অর্থনীতির কার্যক্রমকে যৌথভাবে এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে গবেষণায় আরো বেশি মনোযোগী হতে হবে। তিন. ধেয়ে আসছে অস্তিত্ববিনাশী জলবায়ু সংকট। এর মোকাবেলায় যৌথ শিক্ষা-গবেষণা কার্যক্রমের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। চার. পাকিস্তান, চীন, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক বেসামরিক মানুষ হত্যা প্রায় শূন্যের ঘরে। অন্যদিকে বিএসএফের সম্পূর্ণ বিপরীত আচরণ দেখা যায় বাংলাদেশ সীমান্তে। কিন্তু কেন, এ প্রশ্ন জানা দরকার। পাঁচ. ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অশুল্ক বাধা কেন দূর করা যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক সামনের দিনগুলোতে অন্যান্যের পাশাপাশি শিক্ষা ও গবেষণাকেও অন্তর্ভুক্ত করে আরো নতুন নতুন মাইলফলক স্থাপন করে এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কেরও সুবর্ণ জয়ন্তীতে এটাই প্রত্যাশা।

লেখক : অধ্যাপক, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –