• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

বেরোবিতে আবাসন সংকট, ১০ হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে আসন সংখ্যা ৯৩৭

প্রকাশিত: ৩০ নভেম্বর ২০১৯  

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে আবাসিক হলগুলোতে আসন সংখ্যা মাত্র ৯৩৭টি। ফলে সিংহভাগ শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার মেসগুলোর ওপর নির্ভরশীল হতে হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি আবাসিক হল মিলে আসন সংখ্যা মাত্র ৯৩৭টি। এর মধ্যে ছেলেদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে সর্বাধিক আসন ৩৫৫টি ও শহীদ মুখতার ইলাহী হলে ২৪০টি। আর মেয়েদের জন্য একমাত্র শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ৩৪২টি আসন রয়েছে। মোট শিক্ষার্থীর তুলনায় এ আসন সংখ্যা অতি নগণ্য।

হলগুলোতে প্রতিরুমে চারজন থাকার কথা থাকলেও দেখা গেছে রুমগুলোতে ৬-৮ জন করে থাকছেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, চরম আবাসন সংকট নিরসনে তেমন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বছরের পর বছর অতিবাহিত হলেও ছেলেদের জন্য নতুন হল নির্মাণ করার তেমন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ অনুদানে মেয়েদের জন্য নির্মাণাধীন 'শেখ হাসিনা' হলের নির্মাণ কাজও চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। 

হলে অবস্থান করা এক শিক্ষার্থী জানান, রুমে শিক্ষার্থী থাকার ধারণ ক্ষমতা চারজন হলেও আমরা সাতজন একই রুমে থাকছি। এতে করে পড়াশোনার জন্য মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। পরিবার থেকে তেমন আর্থিক সাপোর্ট না থাকায় কষ্ট করেই এভাবে হলে গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে। কিন্তু এটা আমাদের জীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।

এদিকে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে নতুন শিক্ষার্থী আসছে প্রায় ১৩৫০ জন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আবাসন ব্যবস্থা পর্যাপ্ত না থাকায় সকলকে উঠতে হবে ক্যাম্পাসের বাইরের মেসগুলোতে। বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থীর আবাসন সুবিধা না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন এলাকায় শতাধিক আবাসিক মেস গড়ে উঠেছে। যেখানে মেস মালিকেরা তাদের ইচ্ছেমতো বাড়তি টাকা আদায় করছেন। এ মেসগুলোতে গাদাগাদি করে থাকছে শিক্ষার্থীরা। এতে প্রতিনিয়ত নানান বিপত্তির শিকার হতে হচ্ছে তাদের। 

অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, অপরিচ্ছন্ন সেমিপাকা ঘর, পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহের অভাব, নিরাপত্তাসহ বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার অভাবে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে মেসে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের। ফলে তাদের পড়ালেখায় ব্যাঘাত ঘটছে। এর মধ্যেও মেসের চড়া মূল্য ও খাবার বিল দিতে অতি কষ্টে দিন অতিবাহিত করছেন গরিব শিক্ষার্থীরা। 

দ্বিতীয় সেমিস্টারের এক শিক্ষার্থী জানান, বিশ্ববিদ্যালয় হলগুলোতে পর্যাপ্ত আবাসন ব্যবস্থা না থাকায় বাইরের মেসে থাকছি। যেখানে প্রতিমাসে বিপুল পরিমাণ অর্থ ভাড়া দেওয়া লাগছে। আবার নতুন করে মেসে ওঠার সময় জামানত এবং উন্নয়ন ফি এর নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে মেস মালিকেরা। নিরুপায় হয়ে সেই টাকা দিয়েই মেসে ওঠা লাগছে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. গাজী মাজহারুল আনোয়ার বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য যে আবাসন ব্যবস্থা আছে তা খুবই নগণ্য। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত আরো হল নির্মাণ করে শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা সমাধান করা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী কমলেশ চন্দ্র সরকার জানান, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ অনুদানে মেয়েদের জন্য 'শেখ হাসিনা' হল নির্মাণ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ছেলেদের জন্য নতুন কোনো হল নির্মাণের ব্যপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপনা নির্মাণের দ্বিতীয় ফেজের কাজে নতুন হল নির্মাণ করা হবে।

উপাচার্য প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ৭৫ একর জায়গা আছে এখানে নতুন করে কোনো দালান তোলার সুযোগ কম। আমরা যদি আরো ৭৫ একর জায়গা নিতে পারি তাহলে হয়তো আরো আবাসিক হল নির্মাণ করা যাবে। আমরা এ লক্ষ্যে কাজ করছি। আমরা একটা মাস্টার প্লান তৈরি করেছি। সেখানে এটাও আছে। আর মেসগুলো যদিও বেসরকারিভাবে পরিচালিত এবং সরাসরি আমাদের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তবে আমরা ছাত্র পরামর্শ দপ্তর এবং প্রক্টরিয়াল দপ্তরকে অ্যাক্টিভেট করার মাধ্যমে মেস মালিকদের সাথে অনানুষ্ঠানিকভাবে বসতে পারি। যেহেতু আমরা শিক্ষার্থীবান্ধব দাবি করি সে ক্ষেত্রে অবশ্যই সহানুভূতির সাথে বিষয়টা নিয়ে ভাবব।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –