• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

মুজিববর্ষের উপহার: ৯ লাখ পরিবারকে ঘর দেবে সরকার

প্রকাশিত: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০  

সারাদেশে ৮ লাখ ৮২ হাজার ৩৩টি গৃহহীন পরিবারকে ঘর করে দেবে সরকার। এ জন্য একটি প্রকল্প চূড়ান্ত করেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। নিজস্ব জমি নেই এবং জমি থাকলেও ঘর নেই এমন মানুষের জন্য এটি সরকারের পক্ষ থেকে মুজিববর্ষের উপহার। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এ বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান সমকালকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী চান দেশে কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবে না। সবার মাথা গোঁজার ঠাঁই হবে। সে লক্ষ্যেই এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি চূড়ান্ত। এখন অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় তোলা হবে।

এ বছরের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছিলেন, মুজিববর্ষে দেশে কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবে না। সরকার সব ভূমিহীন, গৃহহীন মানুষকে ঘর করে দেবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে চলতি বছরের ১৭ মার্চ থেকে আগামী বছরের ১৭ মার্চ পর্যন্ত সময়কে সরকার মুজিববর্ষ ঘোষণা করে। এই সময়ের মধ্যেই এসব ঘর নির্মাণ কাজ শেষ করতে চায় সরকার।

সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের দুর্যোগ সহনীয় বাড়ি প্রকল্প, ভূমি মন্ত্রণালয়ের গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ যৌথভাবে গৃহহীনদের জন্য নেওয়া এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। মাঠপর্যায়ে প্রকল্পের তদারকিতে থাকবেন জেলা প্রশাসকরা। অনেক আগে থেকেই এই তিনটি প্রকল্পের মাধ্যমে নদীভাঙনসহ বিভিন্ন কারণে যারা ভূমিহীন ও গৃহহীন তাদের ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রকল্পগুলোর ঘরের নকশা আলাদা। এখন যে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে তা আলাদাভাবে বাস্তবায়ন করা হলেও ঘরের নকশা একই হবে।

সারাদেশের কোথায় কে এই ঘর পাবেন তার তালিকাও ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে এই তালিকা করা হয়েছে। সারাদেশে ২ লাখ ৯২ হাজার ২৮৩টি ভূমিহীন পরিবার এই ঘর পাবে। আর ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৭৫০ পরিবার, যাদের জমি আছে ঘর নেই তারা এই ঘর পাবেন। তবে বিভাগীয় ও জেলা শহরের স্থায়ী ভূমিহীন বাসিন্দাদের বাড়ি করে দেওয়া হবে না। শহরে বা শহরের কাছাকাছি সুবিধা মতো জায়গায় বহুতল ভবন করে সেখানে ফ্ল্যাট দেওয়া হবে। আর শহরের বাইরে যারা আছেন তাদের বাড়ি করে দেওয়া হবে। ভূমিহীনদের পরিবারকে ২ শতাংশ জায়গার ওপর দুটি শোবার ঘর, একটি বারান্দা, একটি রান্নাঘর ও একটি বাথরুম সংবলিত ঘর করে দেওয়া হবে। আর যাদের জায়গা আছে, ঘর নেই তাদেরও একই ধরনের ঘর করে দেওয়া হবে। উপরে রঙিন টিন এবং নিচে পাকা অর্থাৎ সেমিপাকা প্রত্যেকটি ঘরের জন্য এক লাখ ৭১ হাজার টাকা বরাদ্দ করেছে সরকার। সরকারের খাসজমিতে ভূমিহীনদের জন্য বাড়ি করা হবে। কোনো এলাকায় খাসজমি পাওয়া না গেলে সেখানে প্রয়োজনে জমি অধিগ্রহণ করবেন জেলা প্রশাসক।

সংশ্নিষ্টরা বলছেন, সরকার দ্রুত এই প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করবে। সারাদেশে একসঙ্গে বাস্তবায়ন করা হবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে নির্মাণ খাতের পণ্যের বাজারে চাহিদা বাড়বে। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের অনেক মানুষের কাজেরও সুযোগ তৈরি হবে। করোনাকালীন এই সময়ে প্রকল্পটি বাজারে অর্থের সরবরাহ বাড়াবে। ফলে সামগ্রিক অর্থনীতিও চাঙ্গা হবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের পরও যারা গৃহহীন থাকবেন তাদের জন্যও সরকারের প্রকল্প নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

সরকার ২০১৬ সালে জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে কোন জেলায় কতজন ভূমিহীন, গৃহহীন ও জমি আছে ঘর নেই- এমন মানুষের তালিকা তৈরি করে। ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসকদের পাঠানো তথ্য মতে ওই সময় পর্যন্ত দেশে ১৬ লাখ ৬৩ হাজার মানুষ ছিলেন যারা ভূমিহীন, গৃহহীন এবং জমি আছে কিন্তু ঘর নেই। ওই তালিকা থেকেই এখন সুবিধাভোগী চিহ্নিত করা হয়েছে। এদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো সর্বশেষ যে কৃষিশুমারি করেছে সেখানে বলা হয়েছে, দেশে ৩ কোটি ৫৫ লাখ খানা রয়েছে। এদের মধ্যে কোনো ধরনের জমি নেই বা ভূমিহীন খানার সংখ্যা ৪০ লাখ ৩০ হাজার। ২০১৯ সালের ৯ জুন থেকে ২০ জুন পর্যন্ত সারাদেশে এই জরিপ পরিচালনা করে বিবিএস।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –