• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী গরমে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশ-ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ

মুসলিম নারীর বহুমুখী সামাজিক ভূমিকা

প্রকাশিত: ২৪ ডিসেম্বর ২০২০  

ইসলাম নারীকে মানবসভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং মৌলিক অধিকার ও সামাজিক মর্যাদায় পুরুষের সমান অংশীদার মনে করে। মানবসভ্যতার বিকাশে নারীর ভূমিকা সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মানবজাতি! আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি। পরে তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা পরস্পরের সঙ্গে পরিচিত হতে পারো।’ (সুরা : হুজরাত, আয়াত : ১৩)

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘পুরুষ ও নারীদের মধ্যে যে ঈমানের সঙ্গে ভালো কাজ করবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি অণু পরিমাণ অবিচার করা হবে না।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১২৪)

পবিত্র কোরআনে এমন একাধিক নারীর উল্লেখ রয়েছে, যারা মানব ইতিহাসের নানা অধ্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তাদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘(বহু) পুরুষ নারীর সমতুল্য নয়।’ (সুরা : আলে-ইমরান, আয়াত : ৩৬)

মুসলিম নারীর সামাজিক ভূমিকা

ইসলামের ইতিহাসে নারীকে মুসলিম সমাজের বহুমুখী ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে। কোরআন ও হাদিস তাদের বহুমুখী ভূমিকা পালনের অবকাশ দিয়েছে।

রাজনৈতিক অধিকার : ইসলামী সমাজে নারীরা রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক বিষয়ে নানা সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। পুরুষের মতো রাজনৈতিক অধিকারও ভোগ করেছে তারা। মক্কা বিজয়ের পর রাসুলুল্লাহ (সা.) জঘন্যতম অপরাধের শাস্তি হিসেবে কতিপয় ব্যক্তির শাস্তি ঘোষণা করেন। ইবনু হুবায়রা তাদের অন্যতম। মহানবী (সা.)-এর চাচাতো বোন উম্মে হানি (রা.) তাকে নিরাপত্তা দিলে মহানবী (সা.) বলেন, ‘হে উম্মে হানি! তুমি যাকে নিরাপত্তা দিয়েছ আমরাও তাকে নিরাপত্তা দিলাম।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩১৭১)

মতপ্রকাশ ও অধিকার দাবি : আসমা বিনতে ইয়াজিদ (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমি নারীদের পক্ষ থেকে আপনার কাছে এসেছি। নিশ্চয়ই আল্লাহ আপনাকে নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য পাঠিয়েছেন এবং আমরা আপনার প্রতি ও আপনার ইলাহের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছি। নিশ্চয়ই আমরা নারীরা বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার মধ্যে থাকি, ঘরে থাকি, পুরুষের জৈবিক চাহিদা পূরণ করি, তাদের সন্তান গর্ভে ধারণ করি; অন্যদিকে পুরুষকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে জুমা ও জামাতে, রোগীর শুশ্রূষা ও জানাজায় অংশগ্রহণে, হজ আদায়ে এবং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে। কিন্তু পুরুষ যখন হজ, ওমরাহ ও জিহাদে বের হয়, তখন আমরা তাদের সম্পদ রক্ষা করি, তাদের পোশাক পরিচ্ছন্ন করি, তাদের সন্তান প্রতিপালন করি, আমরা কি তাদের সওয়াবে অংশীদার হব? মহানবী (সা.) সাহাবিদের দিকে ফিরে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কি দ্বিনের ব্যাপারে এ নারীর চেয়ে উত্তম কোনো প্রশ্ন শুনেছ? সাহাবিরা উত্তর দিলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমরা ধারণা করি নারীরা তাঁর অনুসরণ করতে পারে।

অতঃপর মহানবী (সা.) আসমা বিনতে ইয়াজিদ (রা.)-এর দিকে ফিরে বলেন, হে নারী! তুমি ভালোভাবে বুঝে নাও এবং তোমার পেছনে থাকা নারীদের বুঝিয়ে দাও যে, স্বামীকে সুন্দরভাবে সঙ্গ দেওয়া, তার সন্তুষ্টি কামনা করা এবং তার অনুকূলে কাজ করার ফলে স্ত্রী উল্লিখিত সব বিষয়ে সমান সওয়াবের অংশীদার হবে। উত্তর শুনে নারী খুশি প্রকাশ করতে করতে ফিরে যায়। (উসদুল গাবাহ : ৫/৩৯৮)

দ্বিন প্রচার : দ্বিন প্রচার ও দ্বিনি শিক্ষা প্রসারে নারী পুরুষের মতোই অবদান রাখতে পারে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী পরস্পরের অভিভাবক। তারা ভালো কাজের আদেশ দেয়, মন্দ কাজ থেকে বারণ করে, তারা নামাজ কায়েম, জাকাত প্রদান করে, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করে। অতি শিগরির আল্লাহ তাদের প্রতি অনুগ্রহ করবেন। আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৭১)

রাসুলের যুগেও নারীরা জ্ঞানচর্চার মজলিসে অংশগ্রহণ করতেন এবং রাসুলের ইন্তেকালের পর তাঁর পুণ্যাত্মা স্ত্রীরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মহান শিক্ষা প্রচার ও প্রসারে অসামান্য ভূমিকা রাখেন।

উৎসব আনন্দে অংশগ্রহণ : শরিয়ত অনুমোদিত সব সামাজিক উৎসব ও আনন্দে নারীর অংশগ্রহণের সুযোগ আছে। শরিয়তের সীমার মধ্যে থেকে তারা এসব অনুষ্ঠান আয়োজনেও ভূমিকা রাখতে পারে। হাফসা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘বয়ঃপ্রাপ্তির নিকটবর্তী বালিকা, ঘরে অবস্থানকারিণী ও ঋতুমতী নারীরা নেক কাজে এবং মুসলিমদের দোয়ার মজলিসে উপস্থিত হতে পারবে, তবে ঋতুমতীরা নামাজের স্থান থেকে দূরে থাকবে।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৩৯০)

উম্মু আতিয়্যা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘নবী (সা.) ঈদের দিনে ঋতুমতী ও পর্দানশিন নারীদের বের করে আনার নির্দেশ দিলেন, যাতে তারা মুসলিমদের জামাত ও দোয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারে। অবশ্য ঋতুমতী নারীরা সালাতের জায়গা হতে দূরে অবস্থান করবে। এক নারী বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের কারো কারো ওড়না নেই। তিনি বললেন, তার সাথির উচিত তাকে নিজের ওড়না পরিয়ে দেওয়া।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৫১)

উপার্জন ও পরিবারের জন্য খরচ : আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-এর স্ত্রী রায়িতা বিনতে আবদুল্লাহ সাকাফিয়্যা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বলেন, নিশ্চয়ই আমি শিল্পকর্মে পারদর্শী একজন নারী। আমি তা থেকে বিক্রি করি, আমার স্বামী ও সন্তানদের কোনো সম্পদ নেই। ফলে তারা আমাকে সদকা করা থেকে বিরত রেখেছে। আমি তাদের জন্য যা খরচ করি তার বিনিময়ে কি সওয়াব পাব? রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে বললেন, তুমি তাদের জন্য যা খরচ করো তার বিনিময় পাবে। সুতরাং তুমি তাদের জন্য ব্যয় কোরো। (সুনানে কুবরা লিল-বায়হাকি, হাদিস : ৭৭৬০)

যুদ্ধে স্বেচ্ছাসেবী : রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে একাধিক মুসলিম নারী যুদ্ধে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে অংশ নিয়েছেন এবং যুদ্ধাহতদের তারা সেবা প্রদান করেছেন। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, উম্মে সুলাইম (রা.) ও তাঁর সঙ্গের আনসার নারীদের নিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতেন। যুদ্ধক্ষেত্রে তাঁরা পানি পান করাতেন এবং আহতদের জখমে ওষুধ লাগিয়ে দিতেন। (সুনানে আবি দাউদ,  হাদিস : ১৫৭৫)

আল্লাহ সবাইকে দ্বিনের সঠিক বুঝ দান করুন। আমিন।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –