• বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা ইতিহাসে অনন্য: রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা হস্ত‌ক্ষেপ করবে না: ওবায়দুল কাদের লালমনিরহাটে যুবলীগ কর্মীর পায়ের রগ কাটলেন যুবদল নেতা বাসার ছাদ থেকে পড়ে যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু ঠাকুরগাঁওয়ে ঈদ-নববর্ষে ১০ জন নিহত, আহত ২ শতাধিক

রাডার কি, কিভাবে কাজ করে?

প্রকাশিত: ১৬ নভেম্বর ২০১৮  

রাডার এমন একটি পদ্ধতি যা রেডিও তরঙ্গের ব্যবহার করে চলমান বা স্থির বস্তুর অবস্থান, দূরত্ব, উচ্চতা এবং দিক নির্ণয় করতে পারে। দূরের কোন বস্তুর অস্তিত্বের সম্পর্কে জানার জন্য যে যন্ত্রের ব্যবহার করা হয় তাকে রাডার বলা হয়ে থাকে। রাডার একটি সংক্ষিপ্ত শব্দ যেটার পূর্ণ রুপ হচ্ছে রেডিও ডিটেকশন অ্যান্ড রেঞ্জিং। এই রাডারের সাহায্যে ঘন অন্ধকার রাতেও দূরের বস্তুকে লক্ষ্য করা যায়। এর ফলে রাডার উড়োজাহাজের পাইলট কিংবা সামুদ্রিক জাহাজের ক্যাপ্টেনের তৃতীয় নয়ন হিসেবে কাজ করে।

আমরা পৃথিবীতে থাকা যেকোনো বস্তুকে দেখতে পাই আলোর কারণে, যা সূর্য থেকে আসে এবং বস্তুর প্রতিফলন হয়েই আমাদের চোখে এসে পরে। আলোর প্রতিফলনের সময় এবং আলোর প্রতিফলনের মাত্রা থেকে আপনার ব্রেইন সহজেই বুঝতে পারে আপনি কোনো বস্তু থেকে ঠিক কতটা দূরে আছেন এবং সেই অনুসারে আপনি যে কোনো বস্তুকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে পারেন। রাডারও অনেকটা এই বিষয়ের উপর ভিত্তি করে কাজ করে। ধরুন ঘন কুয়াশার মধ্যে একটি প্লেনের পাইলট প্লেন নিয়ে এগোচ্ছে কিন্তু সে কিছুই দেখতে পারছে না যে সে কোথায় যাচ্ছে। এই অবস্থায় রাডার তাদেরকে সাহায্য করে। ছোটবেলাতে অনেকেই হয়তো কুয়ার সামনে মুখ রেখে জোরে আওয়াজ করে দেখেছেন এবং সেই আওয়াজ করার পরিবর্তে আপনি হয়ত প্রতিধ্বনি শুনতে পেয়েছেন। বিমান থেকেও ঠিক এই কাজটি করা হয়ে থাকে।

বিমান থেকে সব সময় একটি রেডিও তরঙ্গ সামনের দিকে ছুড়ে মারা হয়। তরঙ্গ ছুড়ে মারার পর দেরি করা হয় সামনে থেকে কোনো বস্তু থেকে তার প্রতিফলন এর জন্য। যদি প্রতিফলন পাওয়া যায় তবে সহজেই ডিটেক্ট করা যায় সামনে কোন বস্তু আছে। আপনি এক কথায় বলতে পারেন রাডার বাদুড়ের মতো কাজ করে। যারা প্রতিধ্বনির ব্যবহার করে রাতে চলাফেরা করে এবং সামনের বস্তু সম্পর্কে অবগত হয়। রাডারে রেডিও তরঙ্গ তৈরি হওয়ার পর একটি অ্যানটেনা রয়েছে, যা ট্রান্সমিটার হিসেবে কাজ করে এবং তরঙ্গকে সামনের স্পেসের দিকে ছুঁড়ে দেয় এবং রাডারটি সর্বদা ঘুরতে থাকে যাতে একটি বড় এরিয়া থেকে আসা প্রতিফলনকে সে ক্যাচ করতে পারে।

রাডার থেকে ছড়িয়ে পড়া রেডিও তরঙ্গ আলোর গতিতে ছুটতে থাকে, যতক্ষণ না পর্যন্ত সে কারো সাথে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। কোনো বস্তুর সাথে বাধা পাওয়ার পরে প্রতিফলন হওয়া রেডিও তরঙ্গ আলোর গতিতে আবার ফিরে আসে এবং এই ফিরে আসা তরঙ্গকে ক্যাচ করে এটা বোঝা যায় যে বস্তু থেকে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে রেডিও তরঙ্গটি ফিরে এসেছে সেটা কতটা দূরে আছে। ধরুন শত্রুপক্ষের বিমান তিন হাজার কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায় গতিতে ছুটে আসছে। তাহলে এটিকে ধরতে গেলে এর থেকেও দ্রুত ব্যবস্থা অবশ্যই থাকতে হবে। কিন্তু এখানে কোনো সমস্যা নেই। কেননা আলোর গতির সামনে বিমানের গতি কিছুই না। অর্থাৎ যদি কোন শত্রু বিমান ১৬০ কিলোমিটার দূরে থাকে তবে তাকে রাডার দ্বারা ডিটেক্ট করতে এক সেকেন্ড ও সময় লাগবে না। এবং এই সময়ের মধ্যে শত্রু মোকাবেলা করার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

রাডারের পর্দাটি আসলে একটি টেলিভিশনপর্দার মতো। এই পর্দার মূল কেন্দ্রবিন্দুতে আছে একটি অপেক্ষাকৃত বড় আলোর বিন্দু। বড় আলোর বিন্দুটি হচ্ছে তার নিজের অবস্থান। এর চারপাশে যদি কোন আলোর বিন্দু ফুটে ওঠে তাহলে ধরা হয়ে থাকে ওখানে কোন অব্জেক্ট আছে। রাডারের পর্দার নম্বর এবং অক্ষরই বলে দিতে পারে বস্তুটির অবস্থান কোথায়। সেটা কোন দিকে আছে এবং কতটা দূরে আছে। রাডারে যন্ত্র আকাশে উড়ো জাহাজ সামুদ্রিক জাহাজ এবং স্থল ভাগের যেকোনো জায়গায় ব্যবহার করা যায়। স্থল ভাগের বসানো রাডার বলে দিতে পারে আকাশের কথাও শত্রু বিমানের আগমন ঘটছে কিনা এবং যদি ঘটে থাকে তাহলে সেটা কতটা দূরে আছে। রাডার স্টেশন হল একটি ছোট মাপের বেতার কেন্দ্র। এই কেন্দ্র থেকে আকাশে রেডিও তরঙ্গ নিক্ষেপ করা হয়। যখন এই রেডিও তরঙ্গ আকাশ থেকে কোন কঠিন বস্তুকে আঘাত করে তখনই সেটা প্রতিফলন হয়ে ফিরে আসে। এই প্রতিফলিত হওয়া তরঙ্গই ধরা পরে রাডারের ঘ্রাহক যন্ত্রে।

এই রাডারের সাহায্যে শত্রুর একটি স্পষ্ট অবস্থান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এছাড়াও রাডারকে আরো বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেমন পুলিশ অবৈধ স্পীডে চালান বাইক বা গাড়িকে ডিটেক্ট করতে এটি ব্যবহার করে থাকে। এমনকি পৃথিবী বা অন্য গ্রহ উপগ্রহের মানচিত্র পেতে, স্যাটেলাইট এর অবস্থান জানতে নাসাও এর ব্যবহার করে থাকে। আধুনিক রাডার থেকে বাঁচতে পারা খুবই কঠিন একটি কাজ কিন্তু আমেরিকান এয়ার ফোর্সের কাছে এমন একটি অশুভ চেহারা বিমান রয়েছে যার নাম হচ্ছে বি টু বম্বার। এই বিমানের গঠন এমন যা রাডার থেকে আসা বিমকে চুষে নিতে পারে। যার ফলে রাডার আর কিছু ডিটেক্ট করতে পারে না।

রাডার বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির সমন্বয়ে গঠিত একটি অসাধারণ যন্ত্র। আর আশা করছি রাডারের সম্পর্কে আপনারা বিস্তারিত জানতে পেরে অবশ্যই খুশি হয়েছেন। এর পূর্বে অনেকেই হয়ত রাডার কি তা জানতেন না এবং এর কাজ সম্পর্কেও হয়ত অনেকেই আজ প্রথম জানলেন।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –