• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

‘সংগ্রামের তরে’ প্রস্তুত হও ঘরে ঘরে

প্রকাশিত: ২৪ অক্টোবর ২০২১  

আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী   

গত কয়েক দিনে বাংলাদেশে যা ঘটেছে তা আকস্মিক নয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ধর্মান্ধদের উত্থান আকস্মিক ছিল না, অপ্রত্যাশিতও ছিল না। কারণ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার সময় দেখা গেছে যে দেশের এক বিরাটসংখ্যক মানুষকে জামায়াত এবং অন্যান্য ধর্মান্ধ দল প্রভাবিত করে রেখেছিল। পাকিস্তান ও আমাদের স্বাধীনতাবিরোধী দেশগুলোর সহায়তায় বাংলাদেশের যে মূলস্তম্ভ ধর্মনিরপেক্ষতা, তাকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছিল কখনো গোপনে, কখনো প্রকাশ্যে।

বঙ্গবন্ধু এই সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন। দেশকে একটি অসাম্প্রদায়িক ব্যবস্থায় পরিচালনা করার জন্য তিনি যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন তা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাঁর নির্মম রক্তস্নাত প্রস্থানের মধ্য দিয়ে ধ্বংস করা হয়। দীর্ঘ ২১ বছর পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রব্যবস্থায় ফিরে যেতে পারেনি। এখানেই আমাদের পরাজয় হয়েছে।

আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতায় আসার পরে দেশের অনেক অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে; কিন্তু যে মূল ব্যবস্থাটা বঙ্গবন্ধু চালু করেছিলেন তা শক্তিশালী করা যায়নি। আজকে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক শক্তির বারবার যে উত্থান ঘটেছে তা রোধ না করা গেলে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ রক্ষা করা যাবে না।

অতি সম্প্রতি কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, গাইবান্ধা ও রংপুরের পীরগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যে রক্তপাত ঘটেছে তা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ধ্বংস করার চেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়। বারবারই এই ধর্মান্ধ শক্তি নানা ছদ্মবেশে মাথা তুলেছে এবং দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোকে নির্মমভাবে অত্যাচার করেছে। আমরা যদি দেশে সংখ্যালঘুদের রক্ষা করতে না পারি, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তুলতে না পারি, তাহলে বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্রই শেষ পর্যন্ত সফল হবে এবং আফগানিস্তান থেকে তালেবানদের বাংলাদেশে আসার পথ করে দেওয়া হবে।

আমি বাংলাদেশ থেকে বহু দূরে লন্ডনে একটি হাসপাতালে রোগশয্যায় শুয়ে গভীর হতাশা বোধ করেছি দেশের অবস্থা শুনে। এই দেশের জন্য আমরা যুদ্ধ করিনি। আমাদের সব স্বপ্নকে ধ্বংস করে দিয়ে একটি ধর্মান্ধ বাংলাদেশ তৈরি হবে কখনো তা চিন্তা করিনি। তাই রোগশয্যায় শুয়ে আমি তরুণসমাজের কাছে আহবান জানাই দানবের বিরুদ্ধে আবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়ানোর জন্য। বিদায়ের আগে ডাক দিয়ে যাই, ‘দানবের সাথে আজ সংগ্রামের তরে’ প্রস্তুত হও ঘরে ঘরে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমার সনির্বন্ধ অনুরোধ, সময় থাকতে সঠিক সঙ্গীদের বেছে নিন। সামনে যে ভয়াবহ সংগ্রাম আসছে তাতে পরীক্ষিত সঙ্গী দরকার। যারা সুবিধাবাদী এসে জুটেছে তাদের হাত থেকে আওয়ামী লীগকে মুক্ত করুন। দেশের তরুণ প্রজন্মকে পথ দেখান। দেশকে রক্ষা করুন। বঙ্গবন্ধু নির্দেশিত পথে চলুন, অন্য পথে গেলে দেশকে রক্ষা করা যাবে না।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –