• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

সরকারি কর্মীদেরও বছরে একবার ডোপ টেস্ট

প্রকাশিত: ১৮ আগস্ট ২০২১  

মাদক নিয়ন্ত্রণে শুধু কঠোর অভিযান চালানো নয়; এর সঙ্গে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্রচেষ্টাকেও যুক্ত করতে হবে; যাতে ব্যক্তি, দল, গোষ্ঠী তথা পুরো সমাজের মানুষের সম্পৃক্ততার মাধ্যমে একটি ঐক্যবদ্ধ সামাজিক আন্দোলন তৈরি করা যায়। আগে দেশে মাদকের চাহিদা কমাতে হবে। সেই সঙ্গে যারা জোগান দেয় ও মাদকের চাহিদা তৈরির পরিবেশ সৃষ্টি করে, তাদের বিরুদ্ধে গোড়া থেকে পদক্ষেপ নিতে হবে। তাহলেই মাদক ব্যবহার কমানোর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে। এমন চিন্তাই কাজ করছে সরকারের মধ্যে।

গতকাল মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উচ্চ পর্যায়ের বিশেষ বৈঠকে এ রকম পরিকল্পনার রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো প্রস্তাব আকারে তৈরি করে আরো পর্যালোচনার পর বাস্তবায়নে যাবে সরকার। এ কাজের সমন্বয়ের মূল দায়িত্ব পালন করবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।

বৈঠকে মন্ত্রিপরিষদসচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ৯ জন সচিব উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া পুলিশ, র‌্যাব, কোস্ট গার্ড, বিজিবির প্রধান; বেবিচক, বিটিআরসি, স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানরাসহ ১৪টি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর-সংস্থার প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র জানায়, মাদক নিয়ে জটিল সমস্যার মুখে পড়েছে সরকার। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে কঠোর পদক্ষেপ নিতে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর আগে একাধিকবার বিশেষ অভিযান চালিয়েও মাদক সমস্যার নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। এবার সমন্বিত প্রচেষ্টার ‘ক্রাশ প্রগ্রাম’-এর  মাধ্যমে এগোনোর পরিকল্পনায় জোর দিচ্ছে সরকার। মাদক নিয়ন্ত্রণে কঠোর অভিযান, চিরুনি অভিযান ইত্যাদি বিভিন্ন প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। এসব অভিযানকে কেন্দ্র করে ‘ক্রসফায়ারের’ সমালোচনার মধ্যেও পড়তে হয়েছে। কিন্তু মাদক নিয়ন্ত্রণে বড় ধরনের অগ্রগতি হয়নি।

গতকালের বৈঠকে উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত পাঁচজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়েছে কালের কণ্ঠ’র প্রতিবেদকের। তাঁদের বেশির ভাগ জানিয়েছেন, মাদক সমস্যা অনেক বড় পর্যায়ে চলে গেছে। সম্প্রতি কয়েকজন মডেল ও অভিনেত্রীকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে সামান্য চিত্র বেরিয়ে এসেছে। আড়ালে সরকার বড় চিত্র পেয়েছে। এ কারণে খুব সংক্ষিপ্ত নোটিশে গতকালের বৈঠক ডাকা হয়েছে।

গতকাল মাদক সমস্যা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে দাবি করে একটি সূত্র জানায়, বৈঠকে পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অনেক পুলিশ মাদকে আসক্ত এবং এ কারবারে জড়িত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে সম্প্রতি কয়েক শ পুলিশকে চাকরি থেকে বিদায় করা হয়েছে বলে জানান। মাদকের সর্বগ্রাসী পরিস্থিতির কথা বর্ণনা করে বৈঠকে ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘সামান্য একটি ইয়াবার পোঁটলার চালান দিলে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা আয় করা যায়—এমন লোভে কিছু লোভী পুলিশ সেটা করে। আমরা এ বিষয়ে কঠোর অবস্থানে আছি, আরো কঠোর হব।’

দেশের বাইরে থেকে মাদক দেশে ঢোকা বন্ধে বড় দায়িত্ব বিজিবির। কিন্তু বিশাল সীমান্তের পুরো এলাকায় বিজিবির সার্বক্ষণিক টহল নেই। তাই এই দুর্বলতা কাটাতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে মারাত্মক মাদক দেশে আসছে। এই বিষয়টিতে ডাক অধিদপ্তর ও বেবিচককে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ক্রয়ের মাধ্যমে কঠোর পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।

অন্যদিকে দেশের মধ্যে মাদক পরিবহনে শিশুদের ব্যবহারের বিষয়টি সরকারের দুশ্চিন্তার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাতিসংঘের দেওয়া সংজ্ঞা অনুযায়ী, ১৮ বছরের নিচের সবাই শিশু। মাদক কারবারের সঙ্গে যুক্ত শিশুদের বিরুদ্ধে বড় পদক্ষেপ নেওয়া যায় না। তাদের সংশোধন কেন্দ্রে রাখা হলে সেখানে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে। অনেক শিশু ছাড়া পেয়ে বা বেরিয়ে গিয়ে আবারও মাদক কারবারে জড়ায়। এ নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।

মাদকের চাহিদা কমাতে নানা ভাবনা

মাদকের চাহিদা কমানোর বিষয়টিতে অনেক গুরুত্ব দিয়েছেন আলোচকরা। বর্তমানে সরকারি চাকরিতে ঢুকতে গেলে ডোপ টেস্ট দেওয়া বাধ্যতামূলক। ডোপ টেস্ট করার সীমা আরো বাড়ানোর চিন্তা করছে সরকার। বিশেষ করে সরকারি চাকরিতে থাকা সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক হতে পারে। যাঁরা পজিটিভ হবে, তাঁদের চাকরি চলে যাবে। অন্যদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রেও ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা যায় কি না, সেই চিন্তাও করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। গতকাল বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বছরে একবার সরকারি কর্মচারীদের ডোপ টেস্টের প্রস্তাব এসেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রেও এটা করা যায় কি না, আমরা সেই দিকটি বিবেচনা করে দেখছি।’ দেশে মাদক রোগীদের পুনর্বাসনের সঙ্গে যুক্ত সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবা উন্নত করা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী আরো বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে, যাতে তাদের সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনা যায়। বৈঠকে উপস্থিত একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এত উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এমন প্রাণখোলা আলোচনা কমই হয়। এখন এটা কতটা কার্যকর হবে, তার ওপর নির্ভর করবে আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ তরুণ প্রজন্ম।’

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –