• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী গরমে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশ-ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ

সুইপার থেকে সচিব ফজলুল হক এখন অর্ধশত কোটি টাকার মালিক

প্রকাশিত: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯  

ফজলুল হক, রংপুর মেডিকেল কলেজের ক্লিনার থেকে সবাইকে তাক লাগিয়ে সচিব (মেডিকেল কলেজের) হয়েছিলেন। সেই ফজলুল হক এখন অর্ধশত কোটি টাকার মালিক।

তার বর্তমানে উল্লেখ যোগ্য সম্পদের মধ্যে রয়েছে- বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও কারমাইকেল কলেজ সংলগ্ন এলাকা কলেজ পাড়ায় মেয়ের নামে (‘ফারজানা ছাত্রী হোস্টেল’) ৬ তলা ছাত্রীনিবাস, তিন একর জায়গাজুড়ে বিশাল একটি দেড়শ শয্যার হোস্টেলসহ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, গরুর খামার, আইটি সেন্টার, শতাধিক বিঘা জমি, ঢাকায় বহুতল অ্যাপার্টমেন্টসহ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন তিনি।

তার কাছে জিম্মি কলেজ প্রশাসন। ক্ষমতার দাপটে তিনি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে টেন্ডার, নিয়োগসহ সব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালসহ বিভিন্ন এলাকায় মাসব্যাপী অনুসন্ধান চালিয়ে উদঘাটন করা হয়েছে ফজলুল হকের অবৈধ সম্পদের উৎস। 

তিনি তার এই অর্থ সম্পদের কথা স্বীকার করে এবং এ নিয়ে প্রতিবেদন না লেখার অনুরোধ জানান।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রংপুর নগরীর কলেজ পাড়ায় বিশাল এলাকাজুড়ে তার মেয়ের নামে গড়ে তুলেছেন ৬ তলা বিশিষ্ট ‘ফারজানা ছাত্রী হোস্টেল’। এখানে ৪শ’ বেড রয়েছে। রংপুর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও কারমাইকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা এই হোস্টেলে থাকে। এছাড়াও নগরীর ডেওডোবা বানিয়া এলাকায় কয়েক একর জায়গাজুড়ে ফজলুল হকের ছোট ছেলের নামে গড়ে তোলা হয়েছে ‘ফাইয়াজ স্কুল অ্যান্ড কলেজ’। বিশাল অট্টালিকা, শিক্ষার্থীদের আনা নেয়ার জন্য রয়েছে বাসসহ যানবাহন। স্কুলের ভেতরে প্রবেশ করে দেখা যায় ফজলুল হকের স্ত্রী খাদিজা বেগম কাজকর্ম তদারক করছেন। শিক্ষার্থীদের জন্য ফজলুল হকের ছবিসহ একটি বাণী দেয়ালে সাঁটানো হয়েছে। তার স্ত্রী খাদিজা বেগম জানালেন স্কুলটিতে রংপুর ছাড়াও অন্যান্য জেলার শিক্ষার্থীরা আছেন। তাদের জন্য থাকার ব্যবস্থা আছে। আপাতত কলেজ চালু হয়নি তবে প্রয়োজনীয় অনুমোদন করিয়ে নেয়া হয়েছে। তিনি স্বীকার করেন ফজলুল হক তার স্বামী, স্কুলটি মূলত তিনিই দেখভাল করেন। তিনি জানান একটি সর্বাধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বলতে যা বোঝায় সবই আছে এখানে।

অন্যদিকে ফজলুল হকের দুই ছেলেমেয়ে বেসরকারি প্রাইম মেডিকেল কলেজে লেখাপড়া করে। সেখানে ভর্তি হতে একেকজন শিক্ষার্থীর ২৫ লাখ টাকা খরচ হয়। ফজলুল হক ও তার পরিবারের যাতায়াত করার জন্য রয়েছে দুটি কার। তার ছেলের নামে ওই এলাকায় আছে একটি আইটি সেন্টার। সেখানে ১০টির বেশি কম্পিউটারসহ অন্যান্য আধুনিক যন্ত্রপাতি আছে। এছাড়াও চাঁদের বাজার এলাকায় ফজলুল হকের একটি বিদেশি গরুর খামারের সন্ধান পাওয়া যায়। সেখানে গিয়ে জানা যায়, দুশ’র বেশি বিদেশি গরু রয়েছে সেখানে। আরও গরু আনার কাজ চলছে বলে জানালেন খামারের লোকজন। অন্যদিকে ভুরারঘাট এলাকায় ২৫ একর জমি রয়েছে ফজলুল হকের। এ ছাড়াও বিভিন্ন ব্যাংকে নামে বেনামে রয়েছে কয়েক কোটি টাকা। এত বিপুল পরিমাণ সম্পদ হলো কিভাবে এ যেন আলউদ্দিনের আশ্চর্য প্রদীপের মতো বলে জানালেন মেডিকেল কলেজের কর্মকর্তা কর্মচারীসহ অনেকে।

এসব বিষয়ে জানতে ফজলুল হকের সাথে তার অফিসে গিয়ে কথা বললে (পুরো বক্তব্য বাণীবদ্ধ করা আছে) তিনি জানান; ছাত্রী নিবাসটি তার মেয়ে ফারজানার নামে ঠিক তবে জায়গাটি এক ব্যবসায়ী তাকে দিয়েছেন এবং ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ছাত্রী নিবাসটি নির্মাণ করেছেন। তবে কোন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন তা জানাতে পারেননি। ছেলের নামে ফাইয়াজ স্কুল অ্যান্ড কলেজের কথা স্বীকার করে বলেন, তার অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল আন্তর্জাতিক মানের বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার। তিনি বলেন, আপাতত একশ জন শিক্ষার্থী থাকার সর্বাধুনিক ব্যবস্থা করা হয়েছে, প্রয়োজনে বেড সংখ্যা বাড়ানো হবে। তবে বিদ্যালয়টি পরিচালনা করেন তার স্ত্রী এবং ছেলে। স্ত্রী স্কুলটির সভাপতি এবং ছেলে সদস্য সচিব বলে জানালেন তিনি। এছাড়াও বড় ছেলের নাহিদের নামে আইটি সেন্টার এবং একটির গরুর খামার থাকার কথাও স্বীকার করেন তিনি। তার দুই ছেলে মেয়ে প্রাইম মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করার কথাও স্বীকার করেন তিনি। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন আসলে কারো ভালো কেউ দেখতে পারেন না। শেষে এসব তথ্য নিয়ে প্রতিবেদন না লেখার অনুরোধ করেন তিনি।

অনুসন্ধানের ভিত্তিতে জানা যায়, ফজলুল হক ১৯৯৬ সালে রংপুর মেডিকেল কলেজে ক্লিনার পদে চাকরিতে যোগদান করেন। আইন অনুযায়ী এ পদের পদোন্নতি নেই। তারপরও তিনি অফিস সহকারী, স্টোরকিপার, হেডক্লার্ক পদে ছিলেন। পর পর এতগুলো পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়টি রহস্যজনক বলে জানান কলেজের কর্মচারীরা। এরপর কলেজের সচিব পদে কর্মরত কর্মকর্তা অবসরে গেলে ফজলুল এক প্রভাবশালী ব্যক্তির সহায়তায় তৎকালিন মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষকে ম্যানেজ করে ভারপ্রাপ্ত সচিবের পদ লাভ করেন। ওই সময়ে সচিব পদে আরও অন্তত দুই কর্মকর্তা যোগ্যতাসম্পন্ন হলেও তাদের টপকিয়ে তিনি সচিব পদ লাভ করেন। এরপর তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে টেন্ডারের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মালামাল সরবরাহ, বিভিন্ন পদে নিয়োগসহ সব বিষয় তিনি নিয়ন্ত্রণ করে এখন অর্ধশত কোটি টাকার মালিক। 

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –