• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাস, আজ ৭৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। বন্যায় দুবাই এবং ওমানে বাংলাদেশীসহ ২১ জনের মৃত্যু। আন্তর্জাতিক বাজারে আবারও বাড়ল জ্বালানি তেল ও স্বর্ণের দাম। ইসরায়েলের হামলার পর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানে।

হবে দারিদ্র্য মুক্ত উন্নত দেশ: টার্গেট ২০৪১

প্রকাশিত: ২৮ জুন ২০২০  

বাংলাদেশ উন্নয়নের সোপানে এগিয়ে চলেছে। নিম্ন আয়ের সারি থেকে দেশ এখন নিম্ন-মধ্যবিত্তের কাতারে। এই সীমা অতিক্রমও অনতিদূর। এ দেশ এগিয়ে যাবে আরো অনেক দূর। ২০২১ সালে পূর্ণ ডিজিটাল হবে বাংলাদেশ। আর সরকারের টার্গেট- ২০৪১ সালে দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত দেশ গড়ার। সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছে সরকার।

এই এগিয়ে চলার পাথেয় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা। অর্থাৎ তার দেশ গড়ার সংগ্রাম, রাজনৈতিক দর্শন এবং অর্থনৈতিক পরিকল্পনা-যা বাস্তবায়ন করে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশ গড়ার এই অঙ্গীকার ও অগ্রযাত্রা পিতা-কন্যার সম্পর্ককে ব্যক্তিগত পরিধি ছাড়িয়ে বাঙালি এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে যুক্ত করেছে এক অনন্যমাত্রা।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও পথ ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই এই সরকার বাস্তবায়ন করে চলেছে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচি। লক্ষ্যে পৌঁছানোর কৌশল কী হবে তা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে। টার্গেট করা হয়েছে ২০৪১ সালে মাথাপিছু আয় (পিপিপি) হবে ১২ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার, যেখানে বর্তমানে দেশের মাথাপিছু আয় (পিপিপি-২০১৭) ৪০৪০ মার্কিন ডলার। পাশাপাশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৯ দশমিক ৯ শতাংশ। চরম দারিদ্র্য নেমে আসবে ০.৬৮ শতাংশে এবং দারিদ্র্য হার হবে ৩ শতাংশের নিচে।

২০৩১ সাল নাগাদ জিডিপি প্রবৃদ্ধি বেড়ে হবে ৯ শতাংশ, দারিদ্র্যহার ২০২০ সালের ১৮ দশমিক ৮২ শতাংশ থেকে কমে ৭ শতাংশ এবং চরম দারিদ্র্য ৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ হবে। এছাড়া মানুষের গড় আয়ু হবে ৮০ বছর। 

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের তৈরি পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১-এর সারসংক্ষেপ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

ওই সারসংক্ষেপে বলা হয়, উচ্চ প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান এবং দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়ে উঠে টেকসই সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর। এ জন্য প্রয়োজন ফলপ্রসূ করব্যবস্থা ও ব্যয় সংকোচন নীতিমালা। তার সঙ্গে যোগ হয় সঞ্চয়, প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা, পরিবহন, বাণিজ্য, জ্বালানি ও গুণগত বিনিয়োগ। এর সঙ্গে আরো অনেক কিছুর মেলবন্ধন ঘটিয়ে গড়ে উঠে একটি উন্নত দেশের ভিত্তি। এ লক্ষ্যে চারটি প্রধান প্রাতিষ্ঠানিক স্তম্ভের কথা বলা হয়েছে। এগুলো হলো সুশাসন, গণতন্ত্রায়ণ, বিকেন্দ্রীকরণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি।

বলা হয়, এসবে ভর করেই এগোবে উন্নত বাংলাদেশ। আর তখন বর্তমানের কর-জিডিপি অনুপাত ৯ শতাংশ থেকে তা পৌঁছে যাবে ১৭ শতাংশে। এ লক্ষ্যে বাড়বে করের পরিধি, পরোক্ষ করের ওপর নির্ভরতা কমে প্রত্যক্ষ কর বিশেষ করে আয়কর ও ভ্যাট আদায় বাড়ানো হবে। মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষকে বেশি আক্রান্ত করে। তাই ২০৪১ সালে মূল্যস্ফীতির হার কমিয়ে ৪ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে রাখা হবে।

বাণিজ্য কাঠামোও ব্যাপকভাবে পরিবর্তন আনা হবে। পোশাক খাতে যেভাবে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে, একইভাবে অন্য খাতে প্রণোদনা দিয়ে রফতানি বহুমুখীকরণ শক্তিশালী করা হবে। উৎপাদন, বণ্টন থেকে শুরু করে জাহাজীকরণ পর্যন্ত সর্বস্তরে একটি সহজ, সুন্দর প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তোলা হবে। বর্তমানে যেভাবে একটি শক্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গড়ে তোলা হয়েছে এ ধারা আরো শক্তিশালী করা হবে।

বিনিয়োগকে ওই রূপকল্পেও বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তা গড়ে ৩৫ শতাংশে নিয়ে যাওয়া হবে। অভ্যন্তরীণ সঞ্চয়, উচ্চ রেমিট্যান্স প্রবাহ ও প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগের মাধ্যমে এটা করার ওপর জোর দেয়া হয়েছে।

কৃষি খাতে যে প্রবৃদ্ধির ধারা বিশেষ করে চালের যে উচ্চ উৎপাদন প্রবৃদ্ধি তা আরো বেগবান করা, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের উন্নয়নেও বহুমুখী কার্যক্রমের কথা বলা হয়েছে সারসংক্ষেপে।

পোশাক, পাদুকা, ইলেকট্রনিকস শিল্পে তাদের আরো বেশি কর্মসংস্থান করা হবে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে এমন ব্যবস্থা নেয়া হবে যাতে ২০৪১ সাল নাগাদ ৯২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে এবং বছরে গড়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি হবে ৪৬০০ মেগাওয়াট।

ডিজিটাল সুবিধার ব্যাপক প্রসার ঘটানো হবে। প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে ওই সময়ে বেসরকারি খাত ও বাজারব্যবস্থা অধিকতর উৎপাদনশীল ও প্রতিযোগিতামূলক হবে। কৃষি, ম্যানুফ্যাকচারিং থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য পরিচর্যা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবটিক্স ও থ্রি ডি মেটাল প্রিন্টিং প্রযুক্তি ছড়িয়ে দেয়া হবে। এতে ব্যাপকভাবে কর্মসংস্থান বাড়বে। ওই সময়ে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে সম্ভাব্য ক্ষতির চেয়ে বরং উপকার বাড়বে ৫০ শতাংশ। একইভাবে উৎপাদন উপকরণ থেকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অবদান ০.৩ শতাংশে উন্নীত করা হবে ৪.৫ শতাংশে।

নগরায়ণে ব্যাপক কর্মসূচি ও পরিকল্পনা করা হয়েছে রূপকল্প ২০৪১-এর জন্য। বলা হয়েছে, এ খাতে বিনিয়োগ কর্মসূচি জিডিপির ২.৪ শতাংশ থেকে ২০৩১ সালে ৫ শতাংশ এবং ২০৪১ সালে তা ৭ শতাংশে নিয়ে যাওয়া হবে।

একই সময়ে জনসংখ্যার গুণগত মানোন্নয়ন করা হবে যাতে তা অর্থনৈতিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। তখন সাক্ষরতা হবে শতভাগ, ১২ বছর বয়সীদের জন্য সর্বজনীন অবৈতনিক শিক্ষা, সর্বজনীন সাশ্রয়ী স্বাস্থ্যবীমা ও সবার জন্য পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যাপক কার্যক্রমও নেয়া হবে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, সুশাসন, গণতন্ত্র, বিকেন্দ্রীকরণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি এ চারটি প্রাতিষ্ঠানিক স্তম্ভ ভিত্তি করে উন্নত দেশ হবে বাংলাদেশ। শিল্পায়ন ও এর অবকাঠামোগত রূপান্তর নিশ্চিত করা এবং কৃষি খাতে অনুকরণীয় পরিবর্তন আনা ও রফতানিমুখী অর্থনীতি গড়ে তোলা হবে অন্যতম লক্ষ্য। এ প্রকল্পের অনুমোদনের ফলে দেশে শিল্প প্রতিষ্ঠান বাড়বে। পাশাপাশি কৃষি খাতেও আসবে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন।

এতে করে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের পাশাপাশি দেখা যাবে জিডিপির প্রবৃদ্ধি। দেশের ক্রমবর্ধমান জিডিপির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও আমাদের দেশে বিনিয়োগে উৎসাহিত হবে। উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাড়তি গুরুত্ব পাবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও আইসিটি খাত।

তথ্যপ্রযুক্তির যুগে বাংলাদেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় খাত হচ্ছে আইসিটি। এ খাতকে উন্নত করা হলে প্রতিবছর কয়েক হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। আশার কথা, বর্তমানে বাংলাদেশের ১২টি জেলায় হাইটেক পার্কের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। ফলে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর এক নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খোলা শুধু সময়ের ব্যাপার।

আওয়ামী লীগের ৭১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গত ২২ জুন দেয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাঙালি জাতির প্রতিটি মহৎ, শুভ ও কল্যাণকর অর্জনে আওয়ামী লীগের ভূমিকা রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে আমরা আজ আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছি। সংকট উত্তরণে তার সরকার সব ধরনের সহযোগিতা করে যাবে এবং আওয়ামী লীগ দল হিসেবেও মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতা করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, ভবিষ্যতেও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, সুখী-সমৃদ্ধ, উন্নত ও আধুনিক সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করবে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে প্রিয় বাংলাদেশ।আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে আমরা আজ আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছি।

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা এখন আর স্বপ্ন নয়। এখন তা অনেকাংশে দৃশ্যমান বাস্তবতা। আমাদের প্রত্যয় হোক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের অনুসরণ ও বাস্তবায়ন। দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য বঙ্গবন্ধু যা করতে চেয়েছিলেন সেইসব বাস্তবায়ন করলে বিনির্মাণ হবে তার স্বপ্নের সোনার বাংলা।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –