• রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

  • || ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

মান্নান ভূঁইয়ার পথেই কি হাঁটছেন ফখরুল?

প্রকাশিত: ২৮ অক্টোবর ২০২২  

মান্নান ভূঁইয়ার পথেই কি হাঁটছেন ফখরুল?                       
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোটের আমলে আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া ছিলেন প্রচণ্ড ক্ষমতাবান ব্যক্তি। তিনি তৎকালীন বিএনপির মহাসচিব ছিলেন। খালেদা জিয়া ও তারেকের পরই নেতাকর্মীরা তাকে বিএনপির তৃতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত করতেন। সে সময় দলের মহাসচিব হিসেবে অত্যন্ত সফল এবং কার্যকর বিবেচিত হয়েছিলেন তিনি।

কিন্তু সেই আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া যিনি রাজনীতিতে বাম ঘরানা থেকে এসেছিলেন, ওয়ান-ইলেভেনের সময় খালেদা জিয়ার সঙ্গে তিনি বিশ্বাসঘাতকতা করলেন। সেই বিশ্বাসঘাতকতার ধরণ এমন ছিল যে, প্রথমে বিএনপি নেতারা বুঝতেই পারেননি। তারা মনে করেছিলেন, খালেদা জিয়া এবং বিএনপির উপকার করতেই বোধ হয় মাঠে নেমেছেন আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া।

২০০৬-২০০৭ সালে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে রাজনৈতিক অচলাবস্থা তৈরি হয়। এ অচলাবস্থা দূর করার জন্য আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া এবং আব্দুল জলিল সংসদে গোপন বৈঠকে মিলিত হন। এ বৈঠকে অন্য কোনো তৃতীয় ব্যক্তি ছিল না। ঐ বৈঠকে কি হয়েছিল, এখনো অজানা। কারণ দুই নেতাই মারা গেছেন। তবে ঐ গোপন বৈঠকেই ওয়ান-ইলেভেনের ব্যাপারে আব্দুল জলিলকে মান্নান ভূঁইয়া জানিয়েছিলেন বলে জানা যায় এবং খালেদা জিয়ার নেতৃত্বের ব্যাপারে তার গোপন অনাস্থার কথাও তিনি প্রকাশ করেছিলেন।

ওয়ান-ইলেভেন সরকার আসার পর মান্নান ভূঁইয়া আসল চেহারা বের করেন। তখন তিনি খালেদা জিয়া বিরোধী হন এবং বিএনপিতে সংস্কারের ডাক দেন। খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব, বিশেষ করে তারেক রহমানের নেতৃত্বের বিরোধিতা করে তিনি প্রকাশ্য অবস্থান নেন এবং সেসময় অনেকেই মনে করেন, বিএনপির আজকের এ পরিণতির জন্য মান্নান ভূঁইয়াই সবচেয়ে বেশি দায়ী। 

ঠিক একইভাবে ২০১৮ সালে খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার হন এবং পরবর্তীতে আরো একটি দুর্নীতির মামলা নিয়ে মোট দুটি দুর্নীতি মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন।

বর্তমানে মির্জা ফখরুলকে বিএনপি এবং খালেদা জিয়ার শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। কিন্তু তিনি গোপনে কী করছেন, তা নিয়ে বিএনপির মধ্যেই উঠেছে প্রশ্ন। 

বিশেষ করে খালেদা জিয়ার পরিবার যেখানে তার বিদেশ যাওয়ার বিষয়টি দেখছে, সেখানে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নাক গলালেন কেন, এ প্রশ্ন নিয়েই বিএনপিতে এখন তোলপাড়। কারণ এর আগে যখন খালেদা জিয়ার জামিন হলো, সেই সময় খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা মির্জা ফখরুলকে অন্ধকারে রেখেছিলেন। 

শুধু মির্জা ফখরুল ইসলাম নয়, দলের কোনো সদস্যকেই কোনো কিছু জানতে দেননি। যখন সরকারি সিদ্ধান্ত ঘোষণা হয়, তখন ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপির অন্যান্য নেতারা জানতে পেরেছিলেন। এছাড়া কোনো প্রকার আন্দোলনে সায় না দেওয়া, সব সময় বাসায় বসে থাকার কারণে অনেকেই মির্জা ফখরুলকে সন্দেহ করেন।

দলীয় গোপন সূত্র জানায়, বর্তমানে খালেদা জিয়াকে নিয়ে তার পরিবার শঙ্কিত। কিন্তু সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর খালেদা জিয়াকে কোনো কথাই বলেন না। মাঝে মাঝে তিনি এমন একটা ভাব নেন, যেন মনে হয় তিনিই দলের প্রধান এবং খালেদা জিয়া কিছুই না। আর এ কারণেই এখন বিএনপিতে গুঞ্জন উঠেছে ফখরুল কি মান্নান ভূঁইয়া হবেন? তিনি কি মান্নান ভূঁইয়ার দেখানো পথেই হাঁটছেন?

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –