• রোববার ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • ভাদ্র ৩১ ১৪৩১

  • || ১০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

আশুরার রোজাসহ যে আমল করা জরুরি 

প্রকাশিত: ৩০ জুলাই ২০২৩  

আশুরার রোজাসহ যে আমল করা জরুরি                                                
আরবি হিজরি সনের প্রথম মাস মহররম। ইসলামের দৃষ্টিতে মহররম একটি বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ মাস। অনেক ইতিহাস-ঐতিহ্য ও রহস্যময় তাৎপর্য নিহিত আছে এ মাসকে ঘিরে। মহররম মাসের ১০ তারিখ মুসলিম বিশ্বের তাৎপর্যপূর্ণ সেই আশুরার দিন।

কেননা নবীজির কাছে এই দিনটি ছিল বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ। অত্যাচারী শাসক ফেরাউনের হাত থেকে পূর্ববর্তী নবী মুসা (আ.) মুক্তিলাভ করেছিলেন আশুরার দিনে। এর শুকরিয়াস্বরূপ ইহুদিরা এই দিনে রোজা রাখত। ইহুদিদের সঙ্গে সাদৃশ্যতার দূরত্ব বজায় রেখে মহানবী (সা.) আশুরার আগে বা পরে মিলিয়ে মোট দুই দিন রোজা রাখতে সাহাবায়ে কেরামকে আদেশ করেন।

রোজার পাশাপাশি মুসলিম উম্মাহর জন্য বিশেষ আরেকটি আমল রয়েছে। সেটি হলো- তাওবা করা। এদিন তাওবা কবুলের মোক্ষম সময়। এক হাদিসে নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘...মহররম হচ্ছে আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন এক দিন (আশুরা) আছে, যেদিন আল্লাহ তাআলা (অতীতে) অনেকের তাওবা কবুল করেছেন। ভবিষ্যতেও অনেকের তাওবা কবুল করবেন’। (জামে তিরমিজি: ৭৪১)

তাই আমাদের উচিত হবে আশুরার দিনে আন্তরিক তাওবা করা। তাওবার দোয়াগুলো যথাযথভাবে পাঠ করা। তাওবার বিভিন্ন দোয়ার উল্লেখ রয়েছে হাদিসে। নিচে তাওবা কবুলের গুরুত্বপূর্ণ দোয়াগুলো তুলে ধরা হলো-

(১) أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الْعَظِيمَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىَّ الْقَيُّومَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ উচ্চারণ: ‘আসতাগফিরুল্লাহাল আজিমাল্লাজি লা-ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলাইহি।’ অর্থ: ‘মহান আল্লাহর কাছে আমি ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, যিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং আমি তাঁর কাছে তাওবা করি।’ হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি এই দোয়া পড়ে, তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়, যদিও সে রণক্ষেত্র থেকে পলায়ন করে থাকে। (তিরমিজি: ৩৫৭৭)

(২) ﺭَﺏِّ ﺍﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻲْ ﻭَﺗُﺐْ ﻋَﻠَﻲَّ ﺇِﻧَّﻚَ ﺃﻧْﺖَ ﺍﻟﺘَّﻮَّﺍﺏُ ﺍﻟﺮَّﺣِﻴْﻢُ উচ্চারণ: ‘রাব্বিগফিরলি ওয়া তুব ‘আলাইয়া, ইন্নাকা আনতাত তাওয়াবুর রাহীম’ অর্থ: ‘(হে আমার) রব! আমাকে মাফ করুন; আমার তাওবা কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি তাওবা কবুলকারী পরম দয়াময়।’ ইবনু উমার (রা.) বলেন, আমরা গুণে দেখতাম যে, নবী কারিম (স.) একই মজলিসে দোয়াটি ১০০ বার পর্যন্ত পাঠ করছেন।’ (তিরমিজি: ৩৪৩৪, আবু দাউদ: ১৫১৬) উল্লেখ্য, শুধু বৈঠকেই নয়, যেকোনো সময় এই ইস্তেগফার পড়া যাবে।

(৩) سُبْحَانَ اللّٰهِ وَبِحَمْدِهِ أَسْتَغْفِرُ اللّٰهَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ উচ্চারণ: ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি, আসতাগফিরুল্লাহা ওয়া আতূবু ইলাইহি।’ অর্থ: ‘আমি আল্লাহর প্রশংসাসহ পবিত্রতা ঘোষণা করছি। আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁর নিকট তাওবা করছি।’ আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (স.) মৃত্যুর আগে এই ইস্তেগফারটি অধিক মাত্রায় পড়তেন। (মুসলিম, রিয়াদুস সালেহিন: ১৮৮৬) 

(৪) أَسْتَغْفِرُ اللّٰهَ وَأَتوبُ إِلَيْهِ উচ্চারণ: ‘আসতাগফিরুল্লাহা ওয়া আতূবু ইলাইহি।’ অর্থ: ‘আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাচ্ছি এবং তার নিকট তাওবা করছি।’ আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি রাসুল (স.)-এর চেয়ে আর কাউকে এটি অধিক পরিমাণে পড়তে দেখিনি।’  সহিহ ইবনু হিব্বান: ৯২৮)

(৫) সাইয়িদুল ইস্তেগফার তথা ‘ইস্তেগফারের নেতা’। দোয়াটি হলো— ﺍَﻟﻠّٰﻬُﻢَّ ﺃَﻧْﺖَ ﺭَﺑِّﻲْ ﻟَﺎ ﺇِﻟٰﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻧْﺖَ ﺧَﻠَﻘْﺘَﻨِﻲْ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﻋَﺒْﺪُﻙَ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﻋَﻬْﺪِﻙَ ﻭَﻭَﻋْﺪِﻙَ ﻣَﺎ ﺍﺳْﺘَﻄَﻌْﺖُ ﺃَﻋُﻮْﺫُ ﺑِﻚَ ﻣِﻦْ ﺷَﺮِّ ﻣَﺎ ﺻَﻨَﻌْﺖُ ﺃَﺑُﻮْﺀُ ﻟَﻚَ ﺑِﻨِﻌْﻤَﺘِﻚَ ﻋَﻠَﻲَّ ﻭَﺃَﺑُﻮْﺀُ ﺑِﺬَﻧْﺒِﻲ ﻓَﺎﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻲ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻟَﺎ ﻳَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﺬُّﻧُﻮﺏَ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻧْﺖَ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বী লা-ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্বতানী ওয়া আনা ‘আবদুকা, ওয়া আনা ‘আলা ‘আহ্দিকা ওয়া ওয়া’দিকা মাসতা ত’তু আ‘উযুবিকা মিন শাররি মা সনা’তু আবূ-উ লাকা বিনি’মাতিকা ‘আলাইয়া ওয়া আবূ-উ বিযানবী, ফাগফিরলি ফা ইন্নাহু লা-ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তুমিই আমার রব। তুমি ছাড়া কোনো সার্বভৌম সত্তা নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছো আর আমি তোমারই গোলাম। তুমি আমার কাছ থেকে যে অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি নিয়েছ, সাধ্যানুযায়ী আমি তার ওপর চলবো। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নিয়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি এবং আমার গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। অতএব, তুমি আমাকে মাফ করে দাও। কারণ তুমি ছাড়া কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারে না।’ 

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দিনের বেলায় এ দোয়াটি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে পড়বে, অতঃপর সেদিন সন্ধ্যা হওয়ার আগেই মারা যাবে, সে জান্নাতিদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে এটি পড়বে, অতঃপর সকাল হওয়ার আগেই মারা যাবে, সে জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (সহিহ বুখারি: ৬৩০৬)

(৬) سُبْحَانَكَ اَللّٰهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِيْ  উচ্চারণ: ‘সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়া বিহামদিকা, আল্লাহুম্মাগফিরলি।’ অর্থ: ‘হে আমাদের রব—আল্লাহ! আপনি মহান; প্রশংসা কেবল আপনারই। হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন।’ আয়েশা (রা.) বলেন, কোরআনের নির্দেশ (সুরা আন-নাসরের অনুবাদ দেখুন) অনুযায়ী রাসুলুল্লাহ (স.) রুকু ও সেজদায় গিয়ে এই ইস্তেগফারটি পড়তেন।’ (বুখারি: ৭৯৪)
এই দোয়াটি যেকোনো সময় পড়তে পারেন।

(৭) رَبِّ اغْفِرْ لِيْ رَبِّ اغْفِرْ لِيْ উচ্চারণ: ‘রাব্বিগফিরলি, রাব্বিগফিরলি।’ অর্থ: ‘হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করুন। হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করুন।’ নবী কারিম (স.) দুই সেজদার মাঝে বসা অবস্থায় পড়তেন। (সহিহ মুসলিম: ৭৭২)

(৮) اَللّٰهمَّ إِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ ظُلْمًا كثِيرًا، وَلَا يَغْفِرُ الذُّنوْبَ إِلاَّ أَنْتَ، فَاغْفِرْ لِيْ مَغْفِرَةً مِّنْ عِنْدِكَ، وَارْحَمْنِيْ، إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْم উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী জলামতুন নাফসী জুলমান কাছীরা, ওয়ালা ইয়াগফিরুজ জুনূবা ইল্লা আংতা, ফা-গফিরলী মাগফিরাতান মিন ইনদিকা ওয়ারহামনী, ইন্নাকা আংতাল গাফূরুর রাহীম।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি (গুনাহ করার মাধ্যমে) নিজের উপর অনেক জুলুম করেছি; তুমি ছাড়া অন্য কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারে না। অতএব, তোমার পক্ষ থেকে আমাকে পরিপূর্ণভাবে ক্ষমা করো এবং আমার উপর দয়া করো। তুমি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ আবু বকর (রা.) রাসুল (স.)-কে বলেছিলেন একটি দোয়া শিখিয়ে দিতে, যা তিনি নামাজে পড়বেন। তখন নবী কারিম (স.) এটি শিখিয়ে দেন, যা দোয়া মাসুরা নামে পরিচিত। (সহিহ বুখারি: ৮৩৪) এটি কেবল নামাজের মধ্যেই নয়, যেকোনো সময় পড়বেন। অর্থটা হৃদয়গ্রাহী।

(৯) اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِيْ مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ وَمَا أَسْرَفْتُ وَمَا أَنْتَ أَعْلَمُ بِهِ مِنِّيْ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মাগফিরলি মা ক্বাদ্দামতু ওয়া-মা আখখারতু, ওয়া-মা আসরারতু ওয়া-মা আ’লানতু, ওয়া-মা আসরাফতু, ওয়া-মা আনতা আ’লামু বিহি মিন্নী।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমি আগে-পরে যত গুনাহ করেছি, তা মাফ করে দাও। যেসব গুনাহ গোপনে করেছি এবং যেগুলো প্রকাশ্যে করেছি (সব) মাফ করে দাও। যত বাড়াবাড়ি করেছি, সেগুলো ক্ষমা করে দাও এবং যেগুলো তুমি আমার চেয়ে ভালো জানো, সেগুলোও মাফ করে দাও।’ এটি নবী কারিম (স.) নামাজে সালাম ফেরানোর আগে পড়তেন। (সহিহ বুখারি: ৬৩৯৮)

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –