• বুধবার ০৯ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ২৪ ১৪৩১

  • || ০৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

গুনাহ ঝরে যেসব আমলে, বিনিময়ে মেলে বাড়তি সওয়াব

প্রকাশিত: ২৮ আগস্ট ২০২৪  

মানুষ ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় কিংবা শয়তানের প্ররোচনায় প্রতিনিয়ত গুনাহ করে। এর মধ্যে কিছু বড় গুনাহ থাকে, যা তওবাহ ছাড়া মাফ হয় না। খাঁটি তওবাহ সব গুনাহ মুছে দেয়। (সুরা জুমার: ৫৩; সুরা ফুরকান: ৭০; সুরা তাহরিম: ; সুরা হুদ: ; সুনানে ইবনে মাজাহ: ৪২৫০)

আর কিছু গুনাহ এমন, যা আল্লাহ তাআলা তওবাহ-ইস্তেগফার ছাড়া নেক আমলের বিনিময়ে মাফ করে দেন। সেরকম কিছু নেক আমল তুলে ধরা হলো-

> ওয়াক্ত নামাজে গুনাহ মাফ হয়। (সহিহ মুসলিম: ৬৬৭, ২৩৩; সহিহ বুখারি: ৫২৮)

> জুমার নামাজে সপ্তাহের গুনাহ মাফ হয়। (সহিহ মুসলিম: ৮৫৭)

> জামাতে নামাজের জন্য মসজিদে গেলে কদমে কদমে সওয়াব হয় গুনাহ মাফ হয়। (সহিহ বুখারি: ৬৪৭)

> অজুতে গুনাহ মাফ হয়। (সহিহ মুসলিম: ২৪৪) অজু করতে ঠাণ্ডা বা অন্য কারণে কষ্ট হলে তা গুনাহের কাফফারা হয়। (জামে তিরমিজি: ৩২৩৩)

> নামাজে সুরা ফাতেহা শেষে আমিন বললে এবং তা ফেরেশতার আমিনের সঙ্গে মিলে গেলে গুনাহ মাফ হয়। (মুসনাদে আহমদ: ৭১৮৭)

> রুকু থেকে উঠেরব্বানা লাকাল হামদবললে এবং তা ফেরেশতাদের সঙ্গে মিলে গেলে গুনাহ মাফ হয়। (সহিহ বুখারি: ৭৯৬)

> রমজানের রোজায় গুনাহ মাফ হয়। হাদিসের ভাষায়, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজান মাসের রোজা রাখবে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হবে। (সহিহ বুখারি: ৩৮)

> কিয়ামুল লাইলে গুনাহ মাফ হয়। হাদিসের ভাষায়, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানের রাতে নামাজে দাঁড়ায়, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয়। (সহিহ বুখারি: ৩৭, ১৯০১)

> আরাফার দিনের রোজায় দুই বছরের গুনাহ মাফ হয়। (জামে তিরমিজি: ৭৪৯; সহিহ মুসলিম: ১১৬২)

> আশুরার রোজায় বিগত বছরের গুনাহ মাফ হয়। (সহিহ মুসলিম: ১১৬২)

> হজ এমনভাবে গুনাহ মুছে দেয় যেন সদ্য জন্মগ্রহণ করেছে (তবে তাতে গুনাহের মিশ্রণ থাকতে পারবে না) (সহিহ বুখারি: ১৫২১)

> কাবাঘরের তাওয়াফে প্রতি কদমে কদমে গুনাহ মাফ হয়। (জামে তিরমিজি: ৯৫৯)

> হাজরে আসওয়াদ গুনাহগুলো যেন শুষে নেয়। অন্য বর্ণনামতে রুকনে ইয়ামানি হাজরে আসওয়াদের স্পর্শ গুনাহ মিটিয়ে দেয়। (জামে তিরমিজি: ৮৭৭; ৯৫৯)

> আরাফার দিনে দৃষ্টি, কান জবানের নিয়ন্ত্রণ করলে আল্লাহ তাকে মাফ করে দেন। (মুসনাদে আহমদ: ৩০৪১; সহিহ ইবনে খুজায়মা: ২৮৩২; শুয়াবুল ঈমান, বায়হাকি: ৩৭৭৭; মুসনাদে আবি ইয়ালা: ২৪৪১)

> ওমরাহ করলে দুই ওমরাহর মধ্যবর্তী গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (সহিহ বুখারি: ১৭৭৩; সহিহ মুসলিম: ১৩৪৯)

> বিপদে ধৈর্যধারণ করলে গুনাহ মাফ হয়। (মুসনাদে আহমদ: ১৬৫৬০; সহিহ মুসলিম: ২৫৭২, ৫৬৪৭) এক বর্ণনায় এসেছে, নানারকম বিপদে ধৈর্য ধরার কারণে একপর্যায়ে সে গুনাহমুক্ত হয়ে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। (মুসনাদে আহমদ: ৭৮৫৯)

> মুসাফাহায় গুনাহ মাফ হয়। হাদিসের বর্ণনামতে, সাক্ষাতে মুসাফাহাকারী দুই মুসলিম পৃথক হওয়ার আগেই ক্ষমা পেয়ে যায়। (জামে তিরমিজি: ২৭২৭; আবু দাউদ: ৫২১২)

> খাবার খেয়ে শুকরিয়া আদায় করলে গুনাহ মাফ হয়। হাদিসের ভাষায়, যে ব্যক্তি কোনো খাবার খাওয়ার পর বলে-  الحَمْدُ لِلّهِ الّذِي أَطْعَمَنِي هَذَا وَرَزَقَنِيهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِنِّي وَلاَ قُوّةٍ অর্থ: ‘সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি কোনো প্রকার কষ্ট-মেহনত ছাড়া আমাকে খাবার খাওয়ালেন, রিজিক দান করলেন।আল্লাহ তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। (জামে তিরমিজি: ৩৪৫৮; আবু দাউদ: ৪০২৩)

> প্রতিদিন ১০০ বার সুবহানাল্লাহ পড়লে হাজার সওয়াব হয় এবং হাজার গুনাহ মাফ হয়। (মুসলিম: ২৬৯৮)

> নবীজির ওপর দরুদ পড়লে গুনাহ মাফ হয়। হাদিসের বর্ণনামতে, একবার দরুদ পড়লে ১০টি রহমত নাজিল, ১০টি গুনাহ মাফ   ১০টি মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। (নাসায়ি: ১২৯৭)

> ফজর মাগরিব নামাজের পর এই দোয়াটি পড়লে গুনাহ মাফ হয়- ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শায়ইন কাদির দোয়াটি ১০ বার পড়লে চারজন গোলাম আজাদ করার সওয়াব, ১০টি মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয় এবং তা শয়তান থেকে হেফাজতের কারণ হয়। (মুসনাদে আহমদ: ২৩৫১৮)

> বাজারে গিয়ে এই দোয়াটি পড়লে ১০ লাখ গুনাহ মাফ করা হয়-  ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ইউহয়ী ওয়া ইউমিতু, ওয়াহুয়া হাইয়্যু লা ইয়ামূতু, বিয়াদিহিল খাইরু, ওয়া হুওয়া আলা কুল্লি শাই-ইং কাদির একইসঙ্গে ১০ লাখ গুণ সম্মান বৃদ্ধি করা হয়। (তিরমিজি: ৩৪২৮; ইবনে মাজাহ: /২৯১, হাদিস: ৩৮৬০; হাকেম: /৫৩৮)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে উল্লেখিত আমলগুলো করার তাওফিক দান করুন। জীবনের জানা-অজানা, ইচ্ছাকৃত-অনিচ্ছাকৃত সব গুনাহ মাফ করুন। আমিন।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –