• সোমবার ২০ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৬ ১৪৩১

  • || ১১ জ্বিলকদ ১৪৪৫

‘মেয়ে খুব শিগগিরই ইতালিয়ান জামাইয়ের কাছে যাবে’

প্রকাশিত: ৭ সেপ্টেম্বর ২০২২  

সনাতন ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ইতালিয়ান যুবক আলী সান্দ্রে চিয়ারোমিন্তে ও বাংলাদেশি মেয়ে রত্না রানী দাস। প্রেমকে প্রণয়ের রূপ দিয়ে রত্নার নিজ বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের বালীয়াডাঙ্গীতে জাঁকজমকপূর্ণ বিয়ে সম্পন্ন হয় তাদের। বিয়ের এক মাস পর রত্নাকে রেখে ইতালিয়ান যুবকের চলে যাওয়াকে কেন্দ্র করে অনেকে অনেকভাবে কথা ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে রত্নার পরিবার।

কেউ বলছেন রত্মাকে রেখে উধাও ইতালিয়ান যুবক, আর কেউ বলছেন অর্থের লোভে তার পরিবার এ বিয়ে দিয়েছেন। তবে গণমাধ্যমের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে নারাজ রত্মা ও তার পরিবার।

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের খোকোপাড়া গ্রামের দিনমজুর মারকুস দাসের মেয়ে রত্না রানী দাস (১৯)। পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ২৪ জুলাই ভালোবাসার টানে ইতালি থেকে বাংলাদেশে এসে সনাতন ধর্ম রীতি অনুযায়ী তাকে বিয়ে করেন আলী সান্দ্রে চিয়ারো। বিয়ের এক মাস পর নিজ দেশে ফিরে গেছেন তিনি। তার এই চলে যাওয়াকে কেন্দ্র করে স্থানীয় লোকজন থেকে শুরু করে গণমাধ্যম কর্মীরা পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের ভুল তথ্য প্রচার করছেন বলে জানিয়েছেন তার পরিবারের লোকজন।

রত্নার বাবা মারকুস দাস জানান, আমার জামাই পালিয়ে যায়নি এবং আমরা অর্থের লোভে মেয়েকে বিয়ে দিইনি। ভালবাসার টানে আলী সান্দ্রে চিয়ারোমিন্তে ইতালি থেকে এসে আমার মেয়েকে বিয়ে করেছেন। বিয়ের পর এক মাস জামাই আমাদের বাড়িতে ছিল। তারপর নিজ দেশে ফিরে গেছে।

তিনি আরও বলেন, আমার মেয়েকে তো বাংলাদেশে বিয়ে দেওয়া হয়নি যে, যখন তখন জামাইয়ের সঙ্গে পাঠিয়ে দেওয়া যাবে। এটা বিদেশের ব্যাপার, সেখানে পাঠাতে হলে ভিসা, পাসপোর্টসহ বিভিন্ন ধরনের বিষয় আছে। যাওয়ার সময় জামাই আমাদের কাগজপত্র সব তৈরি করে দিয়ে দিয়েছেন। কিছু প্রয়োজনীয় কাজ আছে, সেগুলো শেষ হলে আমার মেয়ে খুব শিগগিরই জামাইয়ের কাছে যাবে। এর বেশি কিছু বলতে পারব না আপনাদের কাছে, দয়া করে আপনারা আর ভুল তথ্য প্রচার করবেন না। তবে আমার মেয়ে আজ হোক, কাল হোক, এক মাস পরে হোক বা এক বছর পরে হোক ইতালিতে যাবে এবং জামাই তাকে নিয়ে যাবেই।

রত্নার মা জানান, আমার মেয়ের জামাই একটা মাটির মানুষ, তার ব্যবহার খুব ভালো। সে ইতালি থেকে এসে আমার মেয়েকে বিয়ে করেছে এবং আমার ভাঙা ঘরে এক মাস ছিল। কোনদিন বলেনি যে খারাপ লাগছে। জামাই সব সময় হাসিখুশি থাকে, এতে মোক (আমার) খুব ভালো লাগে। জামাই চলে যাওয়ার পর প্রতিদিন মেয়ের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে, কথা বলে শ্বশুর-শাশুড়ির খোঁজ খবর নেয়। মোবাইলে খুব হাসি-ঠাট্টা ও গল্প করে। ইতালির ভাষায় কথা বলে মাঝে মাঝে বাংলা ভাষায় কথা বলে দুই একটা শব্দ বাংলা ভাষা বলতে পারে। বলে ‘মা, মা-বাবা ভালো ভালো’।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আরিফুল ইসলাম বলেন, আমরাও সেই ইতালিয়ান যুবকের নামে নানা ধরনের কথা শুনেছি। সেই ছেলের বউ ও বাচ্চা আছে। এখান থেকে সে পালিয়ে গেছে। এ বিষয়গুলো শোনার পর আমি মেয়ের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা জানিয়েছে, জামাইয়ের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। তাদের মধ্যে কোনো ধরনের সমস্যা নেই। তারা চেষ্টা করছেন খুব দ্রুত মেয়েকে জামাইয়ের কাছে পাঠিয়ে দেওয়ার। যেহেতু আমরা এখানে আছি, আর ছেলে ইতালিতে তাই কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না। আর মেয়েটির চাচা জোসেফ সেই যুবকের সঙ্গে ইতালিতে একসঙ্গে কাজ করেন। তিনি নিজে দেশে এসে তাদের বিয়ে দিয়েছেন। একজন চাচা তার আপন ভাতিজিকে কখনো বিপদে ফেলবে না বলে আমরা মনে করছি। আরও কিছুদিন গেলে আসল বিষয়টি পরিষ্কার হবে।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান দিলীপ কুমার চ্যাটার্জি বলেন, আমরা লোকমুখে শুনেছি সেই ইতালিয়ান যুবক চলে গেছেন। আপনারা না জেনে অনেকে অনেক মন্তব্য করে থাকেন আসলে এটা করা ঠিক না। তারপরও আমি মেয়েটির বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি৷ তিনি বলেছেন- মেয়ের যাওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। আর জামাইয়ের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ রয়েছে।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –