• শনিবার ১৮ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ০৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

মাংসের মান নিয়ন্ত্রণে স্লটার হাউজ নির্মাণ করছে সরকার

প্রকাশিত: ১৮ জুন ২০২২  

পশু জবাই, প্রক্রিয়াজাত ও মাংসের মান নিয়ন্ত্রণে জনবহুল এলাকায় ২৩টি স্লটার হাউজ (আধুনিক কসাইখানা) নির্মাণ করছে সরকার। এতে ব্যয় হবে ৭৩৩ কোটি টাকা।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের মন্ত্রণালয়ের প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের (এলডিডিপি) মাধ্যমে এ অর্থ ব্যয় করা হবে।
এই প্রকল্পের আওতায় দেশের তিনটি মেট্রোপলিটন এলাকায় সেমি অটো স্লটার হাউজ (২০টি জেলা শহরে ২০টি সাধারণ স্লটার হাউজ এবং ১৯২টি উপজেলায় স্লাব) নির্মাণ করা হবে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনা জেলায় সেমি অটো স্লটার হাউজ, (প্রতিটি ৮৩ কোটি টাকা), জনবহুল ২০টি জেলায় স্লটার হাউজ (প্রতিটি ৫ কোটি টাকা) হচ্ছে। ইতিমধ্যে দেশের ২০টি জেলার মধ্যে ১৭টি জেলায় স্লটার হাউজ করার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে জমি পাওয়া গেছে। এছাড়াও দেশের ১৯২টি উপজেলায় বাজার সংস্কার বা পুনর্নির্মাণসহ স্লাব (প্রতিটি ২ কোটি টাকা) নির্মাণ করা হবে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, আধুনিক পদ্ধতিতে পশু জবাই ও প্রযুক্তির সহায়তায় মাংস প্রক্রিয়াকরণের বিষয়টি বর্তমান সরকার গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে। পাশাপাশি জনগণের জন্য নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত প্রাণিজ আমিষ সরবরাহ করাও সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। এ বিষয়গুলো মাথায় রেখে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রাণিসম্পদ অধিদফতর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২৩টি স্লটার হাউজ তৈরি করা হচ্ছে। এর মধ্যে ২০ জেলায় ২০টি এবং চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনা সিটি করপোরেশনে ৩টি আধুনিক স্লটার হাউজ নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়াও একই প্রকল্পের আওতায় উপজেলা পর্যায়ে ১৭০টি স্লটার স্লাব ও কাঁচাবাজার সংস্কার করার বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, পশু জবাই ও মাংসের মান নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এ স্লটার হাউজগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এসব স্লটার হাউজ তৈরি হলে খোলা বাজারে বা যত্রতত্র পশু জবাই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় যা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। আধুনিক এসব স্লটার হাউজ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের (এলডিডিপি) চিফ টেকনিক্যাল কো-অর্ডিনেটর ড. মো. গোলাম রাব্বানী জানান, কোনো খাবার গ্রহণের পূর্বশর্ত হলো এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। স্লটার হাউজে একটি গবাদি পশু জবাইয়ের পর থেকে প্রতিটি পদক্ষেপ নেওয়া হবে সতর্কতার সঙ্গে। পশু জবাই করা হবে হাতে। এরপর থেকে সকল প্রকৃিয়া সম্পন্ন হবে মেশিনের সাহায্যে। ফলে দূষিত কোনো তরল বা ময়লা আবর্জনা সংস্পর্শ আসার কোনো সুযোগ থাকবে না। এ জন্য তিনটি মেট্রোপলিটন শহরে সেমি অটো স্লটার হাউজ করা হবে। ২০টি জেলা শহরে স্লটার হাউজ এবং ১৯২টি উপজেলায় স্লাব নির্মাণের প্রস্তুতি রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ডিজাইনের খসড়া শেষ পর্যায়ে রয়েছে। পরিবেশ অধিদফতরের প্রয়োজনীয় অর্থ জমা দিয়ে পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্র চাওয়া হয়েছে। এসব স্লটার হাউজ নির্মাণ সম্পন্ন হলে গাইড লাইন তৈরি করে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে ছেড়ে দেওয়া হবে পরিচালনার ভার।

সহকারী প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী পার্থ প্রদীপ সরকার জানান, মেট্রোপলিটন এলাকার প্রতিটি আটো স্লটার হাউজের জন্য এক একর জমি, জেলা পর্যায়ে স্লটার হাউজের জন্য ৫০ শতক এবং উপজেলায় বাজার সংস্কার বা পুনঃনির্মাণের জন্য ৩০ শতক জমি বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে জমি পেতে সমস্যা হচ্ছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পরিবেশ অধিদফতরের কিছুটা সময়ক্ষেপণ। নতুন অবকাঠামো বলে কিছুটা সময়ক্ষেপণ হচ্ছে বলেন জানান এই প্রকৌশলী।

প্রাথমিকভাবে ২০টি জেলার মধ্য থেকে ১৭টি জেলায় স্লটার হাউজ স্থাপনের অনুমতি পাওয়া গেছে- সিলেট, গোপালগঞ্জ, নোয়াখালী, রাজবাড়ী, পটুয়াখালী, রংপুর, কুমিল্লা, মুন্সীগঞ্জ, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, বগুড়া, পাবনা, জয়পুরহাট ও কুড়িগ্রামে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পটি ১টি বৃহৎ প্রকল্প, যার বিনিয়োগ মোট ৪২৮০ কোটি টাকা। প্রকল্পটিতে বিশ্বব্যাংকের বিনিয়োগ ৫০০ মিলিয়ন মাকিন ডলার, যা প্রাণিসম্পদ সেক্টরে একটি সর্ববৃহৎ বিনিয়োগ।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –