• বুধবার ০১ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৮ ১৪৩১

  • || ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

সালমান শাহ’র ইচ্ছেটা পূরণ হয়েছে: সামিরা 

প্রকাশিত: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

ঢালিউডের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম সালমান শাহ ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর হঠাৎ করেই রহস্যঘেরা মৃত্যু হয় তার।  এরপর থেকেই সালমানকে হত্যা করা হয়েছে নাকি তিনি আত্মহত্যা করেছেন সেই বিষয়ে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন পেশ করে তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছেন। যা প্রত্যাখান করেছেন সালমান শাহ’র মা নীলা চৌধুরী ও তার পরিবার। এ বিষয়ে সালমান শাহ’র স্ত্রী সামিরা হক জানালেন নানান কথা। 
পিবিআইয়ের প্রকাশিত চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে নানামুখি আলোচনা ও সমালোচনা হচ্ছে। এ নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন সালমান শাহ’র স্ত্রী সামিরা। সেখান থেকে পাঠকদের জন্য বিশেষ অংশ তুলে ধরা হলো-

আপনি সালমান হত্যা মামলার আসামি ছিলেন। পিবিআইয়ের প্রতিবেদন সেই অভিযোগ থেকে মুক্তি দিয়েছে। বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?

সামিরা : যার জন্য এক কাপড়ে ঘর ছেড়ে বিয়ে করেছিলাম। চোখের সামনে সেই স্বামীকে হারালাম, সেই স্বামীর খুনের অভিযোগ মাথায় নিলাম। প্রতিটা রাত, প্রতিটা দিন নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করেছি। সমাজে ছোট হয়েছি। সালমান ভক্তদের কাছে আমি ছোট হয়েছি। ২৪ বছরে যে গ্লানি, অপবাদ বয়ে বেড়িয়েছি সেটা একজন নারী হিসেবে কতোটা কষ্টের ছিলো, কতোটা অমানবিক ছিলো তা কাকে বোঝাবো? তবুও আমি ধৈর্যশালী ছিলাম। কারণ আজ কিংবা কাল, সত্যিটা বেড়িয়ে আসবে।

সালমানের মামা আলমগীর কুমকুমসহ পরিবারের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন যে আপনার মামী এই মামলার রাজসাক্ষী রুবি সুলতানাকে ডাকেনি পিবিআই। তাই তদন্ত পূর্ণ হয়নি!

সামিরা: রুবি সুলতানা আমার মামী না। আমার তিন মামা, তারা তিনজনই চাইনিজ মেয়ে বিয়ে করেছেন, কানাডায় থাকেন। রুবি আমার বোনের শাশুরির এক দূর সম্পর্কের চাইনিজ আত্মীয়কে বিয়ে করেছেন। তার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। সে ফেসবুকে এসে হঠাৎ করে নিজের স্বামী ও ভাইকে সালমানের খুনি বানিয়ে মুখরোচক গল্প ছড়ালো। পরে তার পরিবার জানিয়েছে রুবি মানসিক ভারসাম্যহীন। সে চিকিৎসাও নিচ্ছে। পিবিআই হয়তো এ কারণেই তার বক্তব্য নেয়নি। এ নিয়ে পিবিআই কিন্তু ব্যাখ্যা দিয়েছে। তারপরও প্রশ্ন তোলার মানে হচ্ছে বিচার মানি কিন্তু তালগাছ আমার।

সালমানের মামা আরো বলছেন স্বামী আত্মহত্যা করছে দেখেও আপনি অজ্ঞান হয়ে যাননি

সামিরা: স্বামী মারা যাচ্ছে দেখে কী বউরা সেন্সলেস হয়ে যায়? নাকি সেটা সামলানোর চেষ্টা করে, সবাইকে ডেকে আনার চেষ্টা করে? কুমকুম মামা এতো কথা বলেন, উনার এক ছেলেও মারা গেছে। কখনো সেই ছেলের জন্য তাকে কাঁদতে দেখিনা। তিনি সারাদিন সালমান সালমান করেন। সালমান তো তাকে মোটেও পছন্দ করতো না। আসলে উনাদের কথার কোনো শেষ নেই। কখনো বলেছেন ঘটনার সময় আমি রুমে ছিলাম না। কখনো বলেছেন আমি মেকাপ করে সাজগোজ করা অবস্থায় ছিলাম। কখনো বলেছেন আমি পাশের রুমে ছিলাম। কিন্তু সত্যটা হলো আমি ওখানেই ছিলাম।

তখন আপনি আসলে কি করছিলেন?

সামিরা: আগের প্রশ্ন থেকেই আসি- আমি কেন সেন্সলেস হবো? এখানে সেন্সলেস মানে কী আমাকে অজ্ঞান হয়ে যেতে হবে? ইমনের মামা হয়তো বোঝাতে চেয়েছেন আমি স্বাভাবিক ছিলাম। যেটা সম্পূর্ন মিথ্যা কথা। দরজা খুলে সালমানকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখেই তো আমি আতংকে চিৎকার শুরু করি। প্রশ্ন উঠেছে কেন ডাক্তার ডাকিনি, হাসপাতালে নিয়ে যাইনি। তখনো তো ভাবিনি যে ইমন (সালমান শাহ) আর নেই। তাকে নামিয়ে সবাই চেষ্টা করছিলাম জ্ঞান ফেরানোর।

আর ডাক্তার ডাকিনি কে বললো? বাসায় কোনো ল্যান্ডফোন ছিলো না। যে ফোনটা ছিলো সেটাও রাতে ইমন ভেঙে ফেলেছিলো। সঙ্গে সঙ্গে কাউকে ফোন করে ডেকে আনার উপায় তো ছিলো না। আমার চিৎকার শুনে আশপাশের লোকরা ছুটে এলো। কেউ নিচে গিয়ে একজন ডাক্তারকে ডেকে আনলো। ইমনের বাবা-মায়ের কাছে খবর দেয়া হলো। উনারা এলেন।

তাহলে কেন সালমানের পরিবার বলছে আপনি রুমে ছিলেন না?

সামিরা: আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না এটা কেমন করে বলেন তারা? ওই রুমে কম করে হলেও ২৫ জন মানুষ ছিলো। যখন ইমনের বাবা, মা ও ছোট ভাই এলো তখন আমার কোলে ইমনের মাথা। আমি চিৎকার করে কাঁদছি। আমাকে কেউ স্বান্তনা দেয়নি। আমার শ্বশুর-শাশুরিও না। শাশুরি আমার পিছন দিক থেকে রুমে ঢুকেই আমার পিঠে একটা লাথি মারেন। অকথ্য ভাষায় গালি দিতে শুরু করেন। ইমনের ছোট ভাই সেও তো ধমকাধমকি করলো। সেই ঘটনা কাজের লোক ও উপস্থিত সবার সামনে ঘটেছে। পিবিআইয়ের কাছে জবানবন্দীতে অনেকে বলেছেও এই কথা।

তাদের সন্তান-ভাই হারিয়েছে, আর আমার? আমার তো স্বামী গেল। ২২ বছরের একটা মেয়ে বিধবা হলাম। কেউ কী সেদিন আমার কষ্টটা বুঝতে চেষ্টা করেছিলো। উল্টো রঙ চঙ মাখিয়ে আমাকে দেশবাসীর কাছে স্বামীর খুনী হিসেবে পরিচয় করানো হলো। ২৪ বছর ধরে আমার সঙ্গে যে অবিচারটা করা হলো তার বিচার কে করবে? একজন নারী হিসেবে আমার এই লড়াইটা, সংগ্রামটা কেউ কী অনুধাবন করতে পারবেন? যারা কোনো তথ্য প্রমাণ না পেয়েই কেবল গল্প আর মনগড়া তথ্যের আবেগে ভেসে আমার শাস্তি চেয়ে আন্দোলন করেছেন, আমাকে ও আমার পরিবারকে গালাগালি করেছেন তাদের কাছে আমার এই প্রশ্নটা রইলো।

নীলা চৌধুরী (সালমান শাহ’র মা) প্রশ্ন তুলেছেন, সালমান শাহ যদি আত্মহত্যা করে থাকেন তাহলে তাকে হযরত শাহজালাল (র.) এর মাজারে কীভাবে দাফন করা হলো? মাজারে তো আত্মহত্যার মৃতদের দাফন নিষেধ!

সামিরা: বিষয়টি তো তাদেরই জানা উচিত কীভাবে সালমানকে সেখানে দাফন করেছে। আপনারা প্রশ্ন করুন। কেন তাড়াহুড়ো করে এভাবে তাকে দাফন করা হলো? আমাকে নিয়ে যাওয়া হয়নি তো লাশের সঙ্গে। তারা সত্য কথা লুকিয়ে মাজারের সঙ্গে প্রতারণা করেছে এটা তাদের দায়, আমার নয়। তবে আমি খুশি সালমানের দাফন মাজারে হওয়াতে। একবার এক সিনেমার শুটিংয়ে সিলেট গিয়েছিলাম আমরা। সেবার শাহজালাল (র.) এর মাজার জিয়ারত করেছিলাম দুজনে। হঠাৎ সালমান বললো সে মারা গেলে তাকে যেন এখানে দাফন করা হয়। যেভাবেই হোক (সালমান শাহ’র) তার এই ইচ্ছেটা পূরণ হয়েছে।  

সালমান শাহের পরিবার থেকে বলা হচ্ছে পিবিআইয়ের প্রতিবেদন মানেন না তারা। তারা বিচারের জন্য হয়তো উচ্চ আদালতে যাবেন!

সামিরা: সত্য মিথ্যে কখনো হয়ে যাবে না। দেশের আইন ব্যবস্থার উপর তাদের ভরসা নেই। ডিবির তদন্ত মানেই, সিআইডিরটাও মানেনি, র‍্যাবকে দিতে চেয়েছিলো কিন্ত এটা র‍্যাবের মামলা নয় বলে র‍্যাব নেয়নি, জজকোর্ট মানেনি, পিবিআই মানছে না। তাহলে এখন কার কাছে যাবে? কে করবে তদন্ত? তারা নিজেরাই? নাকি জনগণ? জনগণ সব কথা তো এতদিন জানতো না, এখন জানছে। জনগণের রায়ও তাদের পক্ষে যাবে না।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –